দেব গোস্বামী, বোলপুর: কেটে গেল একটি বছর। একদিনের জন্যও বাড়িতে পা রাখেননি, পার্থ-অর্পিতা। তাঁদের শান্তিনিকেতনের সাধের ‘অপা’ বাড়ি আগলে আছেন পরিচারিকা নিখিল ও ঝর্ণা। কিন্তু পরিচারিকা দম্পতি যে রুটিরুজির জন্যে এই ‘অপা’ বাড়ি আগলে রাখতেন এখন তাতেই পড়েছে ছেদ। গত এক বছর ধরে ‘অপা’র দেখভালের দরুণ মেলেনি কোনও পারিশ্রমিক। আপাতত পেল্লাই বাড়িতে তাঁরাই থাকছেন। বাড়ি দেখভালের গুরুদায়িত্ব তাদেরই কাঁধে। পারিশ্রমিক না মেলায় অনটনে ভুগছেন নিখিল ও ঝর্ণা।
পর্যটনপ্রেমী মানুষদের কাছে শান্তিনিকেতন একটি অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। বছরের বিভিন্ন সময় লক্ষ-লক্ষ মানুষ এসে ভিড় করেন। খোয়াইয়ের নদীর ধারে প্রিয়জনের হাত ধরে বসে থাকা হোক কিংবা সোনারঝুরির হাটে বাউল গানের তালে ঠোঁট মেলানো, শান্তিনিকেতন তার দর্শকদের চিরকাল আবৃত করে রেখেছে এক মধুর মায়ায়। কিন্তু ইতিমধ্যেই শান্তিনিকেতনের একটি অন্যতম ‘ভিসিটিং ডেস্টিনেশন’ হয়ে উঠেছে ‘অপা বাড়ি’! কী অবাক হলেন তো?
[আরও পড়ুন: বেকার ভোট দিয়েছি আপনাকে! ‘টক টু মেয়র’-এ কটাক্ষ শুনে চটে লাল গৌতম দেব]
শান্তিনিকেতনের মূল আকর্ষণ এখন অপা, পার্থর বান্ধবীর বাড়ি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা। প্রায় ১০ কাঠা জমির উপর তৈরি এই বাড়িটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন অজস্র মানুষ। পরিবার হোক বা বন্ধুবান্ধব সকলকে নিয়ে এসে বাড়ির সামনে সেলফিও তুলছেন উৎসাহীরা। খবরের শিরোনামে চলে আসা এই বাড়ির সামনেই এখন ভিড় জমছে পর্যটকদের। বাড়ির সামনে গেলেই দেখা মিলছে অজস্র মানুষের। কেউ আলাদাভাবে বাড়ির ভিডিও করছেন আবার কেউ তার সামনেই অবাধে সেলফিও ক্লিক করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বোলপুরের কঙ্কালিতলার পদ্মাবতীপুরের বাসিন্দা নিখিল দাস এবং ঝর্ণা দাস। উল্লেখ্য, ভূমি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১২ সালে কলকাতার বাসিন্দা শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকায় ২টি বাড়ি- সমেত শান্তিনিকেতনের শ্যামবাটি মৌজায় ‘অপা’ কেনা হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নামে। এরপর থেকেই শান্তিনিকেতনের অপা বাড়ি দায়িত্বে পরিচারিকা দম্পতি।
[আরও পড়ুন: আদিবাসী মহিলাদের হেনস্তার অভিযোগ, খতিয়ে দেখতে মালদহ যাচ্ছেন রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্যরা]
ঝর্ণা দাস বলেন,”দায়িত্ব নিয়েছিলাম এই ঘরটা দেখভাল করার। হঠাৎ করেই সব বদলে গেল। অভাব থাকলেও সমান যত্ন নিয়েই গুরুদায়িত্ব কাঁধে রয়েছে। কিন্তু মাঝপথে তো আর সব ছেড়ে যেতে পারি না। কার ভরসায় ছেড়ে যাব এখন।” অন্যদিকে নিখিল দাস বলেন,”দিনমজুরির কাজ করেও পেট চালাতে হচ্ছে কোনওরকমে। বাড়ির বাগানের পরিচর্যা করা থেকে শুরু করে আসবাবপত্রে সামান্যতম ধুলো যাতে না জমে সবদিকেই নজর দেওয়া হয়।” শুধু অপেক্ষা কবে ফিরবেন বাড়ির মালিক। কবে মিলবে ‘অপা’ দেখভালের পারিশ্রমিক। রুটিরুজির প্রশ্নে দিন গুনছেন নিখিল দাস ও ঝর্ণা দাস।
