সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: গভীর জঙ্গলে শুকনো পাতার ওপর যেন কিছু হেঁটে যাচ্ছে। এমনই শব্দ শুনে সতর্ক হয়ে গিয়েছিলেন এক দম্পতি। লালগড়ের পডিহা জঙ্গলে কাঠ ও জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন তাঁরা। প্রথমে বাঘের উপস্থিতির কথাই মনে হয়েছিল। কিন্তু, সাহস সঞ্চয় করে একুট এগিয়ে যান শবর দম্পতি কার্তিক ও সরস্বতী। তারপর তাঁরা যা দেখলেন, তাতে বিস্ময়ের সীমা ছিল না। গভীর জঙ্গলে ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছে ২টি শিশু! কথা বলতে গেলে রীতিমতো কান্নাকাটি জুড়ে দেয় তারা। শেষপর্যন্ত ওই শবর দম্পতির চেষ্টায়ই লালগড়ের পডিহার জঙ্গল থেকে উদ্ধার ২টি শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
[লক্ষাধিক টাকা, দামি মোবাইল পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছেন এই চা বিক্রেতা]
উদ্ধার করার পর, মঙ্গলবার দুপুরে শিশু দুটিকে লালগড় থানায় নিয়ে যান কার্তিক ও তাঁর স্ত্রী সরস্বতী। থানায় তাঁদের ভাত, রুটি খাওয়ানোর চেষ্টা হয়। কিছুটি মুখে তোলেনি ওই শিশু দুটি। তবে বিস্তর সাধাসাধির পর অবশ্য চকলেট ও বিস্কুট খায় তারা। একজনের বয়স ছয়। অন্যজনের সাত। পুলিশ জানিয়েছে, ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক মাধ্যমের আপাতত দু’জনকেই মেদিনীপুরের কোনও হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।
[কঙ্কাল কাণ্ডের ছায়া আলিপুরদুয়ারে, ১৩ দিন দিদির দেহ আগলে বোন]
কিন্তু, ওই শিশুটির দুটি পরিচয় কী? তারা গভীর জঙ্গলে এলইবা কী করে? ওই শিশু দুটি পুলিশকে জানিয়েছে, তাদের নাম সুকুরমণি হাঁসদা ও সংক্রান্তি হাঁসদা। খুব ছোটবেলায় বাবা ছেড়ে চলে গিয়েছে। মাজুগেড়িয়া গ্রামে মায়ের কাছে থাকত সুকুরমণি ও সংক্রান্তি। শনিবার নিজের দুই শিশুসন্তানকে লালগড়ের পডিহার জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে যান মা ফুলমণি হাঁসদা। পশ্চিম মেদিনীপুরের বারিকুল থানার মাজুগেড়িয়ার গ্রামে ফুলমণি হাঁসদার সন্ধানে খোঁজ চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, গ্রামবাসীর জানিয়েছেন, গ্রামে ফুলমণি বলে কেউ থাকেন না। শিশুদুটির উচ্চারণ খুব একটা স্পষ্ট নয়। তাই আশেপাশের গ্রামগুলিতে তাঁদের মায়ের খোঁজ করছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছে, শিশু দুটির শরীরের অপুষ্টি ছাপ স্পষ্ট। তাই তারা যে গরিব পরিবারের সন্তান, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। মা তাদের কেন জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে গেল, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লালগড় থানার আইসি অরুণ খান বলেন, ‘ আমরা দুটি শিশুকে জঙ্গল থেকে পেয়েছি। একটি পরিবার তাদের উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল। শিশু দুটির প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়েছি। তারা যে ঠিকানার কথা বলেছে সেই জায়গাটি শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। শিশু দুটিকে হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
[মসুলে নিহতদের তালিকায় নদিয়ার খোকন, কান্নার রোল পরিবারে]
লালগড়ে জঙ্গলে লাগানো ক্যামেরায় বাঘের ছবি ধরা পড়েছে। দক্ষিণরায়ের আতঙ্ক এখন বাঁকুড়া ও মেদিনীপুরের জঙ্গলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বলছেন, শিশুকে দুটিকে যদি ওই শরব দম্পতি উদ্ধার না করতেন, তাহলে নির্ঘাত বাঘ বা অন্য কোনও বন্যজন্তুর পেটে চলে যেত তারা। কার্তিক ও তাঁর স্ত্রী সরস্বতীকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন সকলেই।
[সম্ভ্রম বাঁচাতে শ্বশুরকে খুন, স্বামীর সঙ্গে ছক কষে দেহ লোপাটের চেষ্টা পুত্রবধূর]
The post জঙ্গলে দুই কন্যাকে ফেলে পলাতক মা, উদ্ধার শবর দম্পতির চেষ্টায় appeared first on Sangbad Pratidin.
