অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ (Russia-Ukraine Conflict) শুরু হতেই ওই দেশ ছেড়ে বাড়ি ফিরলেন শিলিগুড়ির পড়ুয়ারা। ইউক্রেন থেকে চার্টার্ড বিমানে দিল্লি ফিরেছেন তিন ছাত্র। তাঁদের মধ্যে একজন শিলিগুড়ির (Siliguri) বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন। তাঁর নাম বিতান বসু। ডাক্তারি পড়তে ইউক্রেন গিয়েছিলেন বিতান। বাকিরা বিমান না পাওয়ায় দিল্লিতেই আপাতত থেকে গিয়েছেন। এদিকে সন্তানরা ইউক্রেন থেকে নিরাপদে দেশ থেকে ফিরে আসায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন অভিভাবকরা। তবে ইউক্রেনে আটকে শিলিগুড়ির আরও এক যুবক।
বেশ কিছুদিন ধরেই রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধের আবহ ছিল। বৃহস্পতিবার পুরোদমে যুদ্ধ শুরুর আগেই দেশে ফিরতে তৎপর হন সেখানকার ভারতীয়রা। একটি চার্টার্ড বিমানে ৫০ জন পড়ুয়া ফিরে আসেন দিল্লিতে। তার মধ্যে শিলিগুড়ির ৩ জন রয়েছেন। বিতান বসু, অনন্যা মৈত্র ও সুকৃতী দেব। এঁরা সকলেই ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিমান না মেলায় বিতান বসু ছাড়া আর কেউ শিলিগুড়ি ফিরতে পারেনি। ইউক্রেনে আটকে রয়েছেন আরেক পড়ুয়া প্রীতম মালাকার।
[আরও পড়ুন: আনিস হত্যাকাণ্ডে সিটের উপরেই আস্থা, দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ হাই কোর্টের]
বৃহস্পতিবার বিকালে বাড়ি ফিরে আসেন বিতান বসু। তাঁকে পেয়ে স্বভাবতই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন বাবা-মা। ছেলেকে পেয়ে তার মা বন্যা বসু বলেন, “টিভিতে যখন দেখছিলাম যে যুদ্ধ শুরু হচ্ছে, তখন থেকেই ভীষণ চিন্তায় ছিলাম। আমরা বারবার কথা বলছিলাম ছেলের সঙ্গে। কিন্তু তারা ফেরার টিকিট পাচ্ছিল না। পরে তাদের কলেজ থেকে চার্টার্ড বিমানের ব্যবস্থা করে দেয়। গত বছর ডিসেম্বরে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিল সে। এখন বেশ ভাল লাগছে স্বস্তি ফিরেছে।” আবার বাড়ি ফিরে নিজেও আপ্লুত পড়ুয়া বিতান বসু। তিনি বলেন, “আতঙ্কে ছিলাম তা ঠিক কিন্তু ঘাবড়ে যাইনি। কারণ জানতাম যে করেই হোক আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে। আমরা ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম সপ্তাহখানেক আগে। তারাই পরে আমাদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য বলে কারণ ওখানে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। তবে মনখারাপ কারণ আমার অনেক বন্ধু ওখানে আটকে রয়েছে। আশা করি, ওরা ভালই থাকবে ওদের কোনও ক্ষতি হবে না।” এদিকে দিল্লিতে আটকে পড়া অন্যন্যা মৈত্রের মা রাজর্ষি মৈত্র বলেন, “মেয়ে ফিরে আসায় টেনশন মুক্ত হয়েছি। ওর সঙ্গে কথা হয়েছে। ও আর সুকৃতি দেব একসঙ্গে দিল্লিতে রয়েছে। শুক্রবারই ফিরে আসবে ওরা।”
[আরও পড়ুন: নতুন রেকে সমস্যা, ক্ষয় চাকায়, আচমকা মেট্রোর গতি কমায় দুর্ভোগ যাত্রীদের]
কিন্তু এই আনন্দের মধ্যেও রয়েছে বিষাদের ছায়া। কারণ ইউক্রেনে আটকে পড়েছে ডাক্তার পীযুষকান্তি মালাকারের ছেলে প্রীতম মালাকার। গত দুই বছর ধরে প্রীতম ইউক্রেনে রয়েছে ডাক্তারি পড়ার জন্য। কিন্তু সে ফিরে আসতে পারেনি দেশে। আর এখন বিমান পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে পীযুষকান্তি মালাকার বলেন, “ভীষণ চিন্তায় রয়েছি আমরা। ওর সঙ্গে আমাদের কথাও হচ্ছিল। তখন সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু ওর সঙ্গে যখন শেষবার কথা হল, ও বলল, এখন পরিস্থিতি খুব খারাপ। আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। আমরা চাই সরকার ওদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুক।”
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে বাংলার আরও কয়েকজন পড়ুয়া। তার মধ্যে অন্যতম পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দকুমারের এক ডাক্তারির ছাত্র, গোবরডাঙ্গার স্বাগতা সাধুখাঁ। উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাঁদের পরিবারের।