সম্যক খান, মেদিনীপুর: বাইক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সাক্ষাৎ মৃত্যুমুখে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কোনওরকমে প্রাণে বেঁচে যান। তবে প্রায় সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে যায় হুইলচেয়ার। কিন্তু মনের উদ্যমের কাছে হার মানেননি। এবার সেই মনের জোরেই হুইলচেয়ারকে সঙ্গী করে বিশ্ব চাম্পিয়নশিপ ড্রাগনবোটে অংশ নেওয়ার জন্য থাইল্যান্ড উড়ে গেলেন ঘাটালের অপূর্ব সামন্ত।
গত ২০১৭ সালে ভয়াবহ বাইক দূর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন অপূর্ব। চিকিৎসকরাও আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেই ছেলেই এখন দেশের গর্ব। সোমবার থেকে থাইল্যান্ডে শুরু হচ্ছে ‘ড্রাগনবোট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ’। সেখানেই সুযোগ পেয়ে ভারতীয় প্যারাদলের প্রতিনিধি অপূর্ব বলেছেন, দেশের হয়ে পদক জয় করে আনাটাই তাঁর কাছে স্বপ্ন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার দাসপুর থানার অন্তর্গত দুবরাজপুর গ্রামে বাড়ি অপূর্বর। বছর ছয়েক আগে ঘটে বাইক দুর্ঘটনা। বাইকের হ্যান্ডেল ভেঙে ঢুকে গিয়েছিল তাঁর কোমরে। মেরুদণ্ডের আঘাত তাঁকে শয্যাশায়ী করে দেয়। দিনের পর দিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছিল। এক সময়ে পিঠে সংক্রমণও হয়ে যায়। তখনই হাল ছেড়ে দেন চিকিৎসকরাও।
[আরও পড়ুন: ‘অমৃত ভারত’ স্টেশনের তালিকায় রাজ্যের ৩৭, আধুনিকীকরণে বাংলার জন্য কত বরাদ্দ?]
তবে তাঁকে আশার আলো দেখিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া। তাঁর শারিরিক অবস্থার কথা জানতে পেরে এক ফেসবুক বন্ধু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। হুইলচেয়ারকে সঙ্গী করেই নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। এর আগে হুইলচেয়ার ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন। খেলেছেন ভলিবল, বাস্কেটবলও। কিন্তু এখন ড্রাগনবোটই তাঁর মূল খেলা।
ড্রাগনবোট খেলা এখনও ভারতে তেমন জনপ্রিয় না হলেও দিন দিন তার ব্যপ্তি বাড়ছে। অপূর্ব বলছেন, সম্প্রতি জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা হয় বিহারে। সেখানে বাংলার প্যারাদল চ্যাম্পিয়নও হয়। এবার ভারতীয় প্যারাদলে অপূর্ব-সহ আছেন বাংলার পাঁচজন। তবে তিনিই একা হুইলচেয়ারে বসা প্রতিনিধি। কলকাতায় একবার একটি প্যারা ম্যারাথনে যোগ দিতে এসেছিলেন অপূর্ব। সেই সময়ে আলাপ হয় কলকাতার নিউরো রিহ্যাব চিকিৎসক সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। অপূর্বর প্রশিক্ষণ থেকে এই বিদেশযাত্রায় পাশে রয়েছেন তিনি। ওই চিকিৎসকের কথায়, হুইলচেয়ারে বসে হুইলচেয়ার ব্যবহারের প্রশিক্ষণ খুবই বড় কাজ। অপূর্ব শেখায় হুইলচেয়ারে বসেও কীভাবে ব্যালান্স রেখে খেলাধুলো করা যায়। মৃত্যুর হাত ছুঁয়ে আসা অপূর্ব এবার জলে নামবেন দেশের স্বপ্ন হয়ে।
