নন্দন দত্ত, সিউড়ি: ‘নেতাদের রক্ত হবে নাকো ব্যর্থ’ -রক্তাক্ত রামচন্দ্র ডোমকে সামনে রেখে স্লোগান তুলেছিল নলহাটি জেলার নেতারা৷ কিন্তু নলহাটি এক ব্লকের ত্রিস্তরে একে একে নাম প্রত্যাহারের পর বামফ্রন্ট বুঝল নলহাটিতে মাটি হারিয়েছে তারা৷ পঞ্চায়েত সমিতিতে ন’জন এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬৫ জন প্রার্থীপদ থেকে নাম প্রত্যাহার করে এখন টিকে আছেন যথাক্রমে পাঁচ জন৷
তবে, দলের এহেন অবস্থা তৈরি হলেও ভাঙতে নারাজ সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা৷ তাঁর দাবি, ‘‘লড়াই এখনও থামেনি। আমরা কিছুটা পিছু হটেছি। তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনীর হাতে বেঘোরে মরার মানে নরকে যাওয়া। তাই এই প্রত্যাহারের কৌশল।’’ যদিও এই হুমকির মাঝেও নলহাটিতে লড়ছেন সাবানা বেগম। তাঁর দুই ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকির পরও লাল পতাকাকে তুলে ধরে রেখেছেন তিনি। এটাই ভরসায় রেখেছে জেলার সিপিএম নেতাদের।
[রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তাল তেহট্ট, জখম ১৫ জন রাজনৈতিক কর্মী]
মনোনয়নের প্রথম পর্বে গত ৫ এপ্রিল নলহাটি এক ব্লকে বামপন্থীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা রামচন্দ্র ডোম৷ আদিবাসীদের নিয়ে ব্লকে ঢুকতে যাওয়ার পথে আক্রান্ত হন জেলার আট বারের প্রাক্তন সাংসদ৷ মাথায় চারটে সেলাই দিতে হয় তাঁর। মনোনয়ন দিতে যাওয়ার জন্য রামচন্দ্র ডোমের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করে তৃণমূল। কিন্তু সেই প্রথম ব্লক দখল করে থাকা লাঠি হাতে উন্নয়নকর্মীরা ব্লক ছেড়ে পালাতে সক্ষম হয়েছিল৷ রামচন্দ্র ডোমের এই রক্ত ঝরাকে সামনে রেখে উজ্জীবিত হয়েছিল একদা লালদুর্গের কর্মীরা। এমনকী নেতারা দাবি করেছিলেন ‘নেতার এই রক্ত হবে নাকো ব্যর্থ’। কিন্তু নাম প্রত্যাহারের ক্ষণে একে একে সকলেই নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে বামপন্থীরা৷ তখনই বামপন্থীদের উপলব্ধি এ লড়াই কঠিন লড়াই৷
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম বলেন, ‘‘বীরভূমে পুলিশ আর তৃণমূলের গুন্ডারা যৌথভাবে অভিযান চালাচ্ছে। ফলে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধী শূন্য করার যে লক্ষ্য, তাতে সহায়ক হচ্ছে। আমরা তাই আমাদের দুই গুন্ডার সামনে সামাল দিতে পারলাম না৷ গণতান্ত্রিক পথে সুস্থ রাজনীতির লড়াই হলে বুঝতে পারতেন কারা কতটা ব্যর্থ।’’
[এক পরিবারেই দুই দলের প্রার্থী, ভাসুর-ভাদ্রবউয়ের লড়াইয়ে সরগরম বাগনান]
যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেছেন, ‘‘নলহাটি দেখেই সিপিএম টের পেয়েছে তাদের পায়ের তলায় আর মাটি নেই৷ মনোনয়নের সময় বুকে একটু আলতা লাগিয়ে সমবেদনা আদায় করতে চেয়েছিল রামচন্দ্র ডোম। সেটা ওদের দলের নেতারা ধরে ফেলেছে। তাই উন্নয়নের সামনে কেউ আর প্রার্থী হতে চায়নি।’’ তবে নেতাদের এই লড়াইয়ের মাঝেও নলহাটি থেকে সিপিএমের দলীয় প্রতীক নিয়ে লড়ছেন সাবানা বিবি। তাঁর দুই ছেলে। অনুব্রত মণ্ডলের দল ‘মশা মারা স্প্রে’ দেওয়া থেকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছে। দুই ছেলেকে অনাথ করে দেওয়ার হুমকিও এসেছে৷ তবু সাবানার দাবি লড়াই করে লাল পতাকাকে জাগিয়ে রাখতে চাই৷ সিপিএমের শেষ ভরসা এখন সাবানার মতো প্রার্থীরাই৷
The post মনোনয়ন প্রত্যাহারের হিড়িক, নলহাটিতে ভাঙলেও মচকাতে নারাজ বাম নেতারা appeared first on Sangbad Pratidin.
