shono
Advertisement

সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে তাহেরপুর যেন ‘ভিয়েতনাম’, রামের ভোট ফেরাতে পেরেই সাফল্য বামেদের?

কোন জাদুতে 'গড়' ধরে রাখল বামেরা?
Posted: 10:11 PM Mar 03, 2022Updated: 10:11 PM Mar 03, 2022

স্টাফ রিপোর্টার, কৃষ্ণনগর: ‘তোমার নাম, আমার নাম, ভিয়েতনাম’। ছয়ের দশকে বাংলায় কান পাতলেই শোনা যেত এই স্লোগান। বুধবার পুরভোটের ফল প্রকাশের পর সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সেই ‘ভিয়েতনাম’ নামেই সম্বোধিত হচ্ছে নদিয়া জেলার এই প্রত্যন্ত গঞ্জ শহর।

Advertisement

পুরভোটে গোটা বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) সবুজ ঝড়ের মাঝেও নদিয়ার তাহেরপুরে লাল দূর্গ ধরে রাখতে পেরেছে বামেরা। যার পরই টানা দু’দিন ধরে এই শহরের কমরেডদের উদ্দেশে ‘লাল সেলাম’ ঠুকে চলেছেন রাজ্যের বাম কর্মী-সমর্থকরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় রাতারাতি তাহেরপুর হয়ে উঠেছে ‘বাংলার ভিয়েতনাম’।

শীত কেটে বসম্ত এসেছে বাংলায়। থোক থোকা পলাশ-কৃষ্ণচূড়ায় বাংলার দিকচক্রবাল এখন রেঙেছে আগুন লাল রঙে। তার মধ্যে ১৩টার মধ্যে ৮টা আসন জিতে তাহেরপুর (Taherpur) একটু যেন বেশি ‘লাল’। রাজনৈতিক মহলের চর্চায়, কী করে এমন উল্টো স্রোত বইল রানাঘাট মহকুমার এই শহরে। এবং তার মাঝেই পুরভোটের ফল ঘোষণার রাতে এখানকার থানার ওসি অভিজিৎ বিশ্বাসকে সরিয়ে দেওয়ায় চর্চার ঝাঁজ জোরালো হয়েছে। পুলিশ কর্তাদের যুক্তি, এটা রুটিল বদলি। স্থানীয়রা অবশ্য অন্য ‘গন্ধ’ পাচ্ছেন।

[আরও পড়ুন: এসএসসি: শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ কমিটির বিরুদ্ধেও CBI তদন্তের নির্দেশ হাই কোর্টের]

তাহেরপুরে বামেদের (Left Front) সাফল্য নিয়ে আপাতত দুটি তত্ত্ব বাজারে ঘুরছে। বাম নেতা-কর্মীদের দাবি, ছাপ্পা ভোট রুখে দিতে সমর্থ হওয়াতেই এই সাফল্য। রাজনীতির কারবারিরা অবশ্য ভিন্ন ব্যাখ্যা শোনাচ্ছেন। তাঁদের মতে, রামে চলে যাওয়া বামের ভোট ফের স্বগৃহে ফেরাতেই ভোটের এহেন ফল। পাশাপাশি শহরে চা খানার আড্ডায়, রাজনীতির আলেচনার আসরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্বের থিওরিও। লোকসভা ভোটে এই পুর শহরে বিজেপির পালে হাওয়া লাগলেও বিধানসভা নির্বাচনে ১৩ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯ টি ওয়ার্ডে এগিয়ে যায় তৃণমূল কংগ্রেস। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিধানসভা ভোটের পর রামে চলে যাওয়া ভোটারদের মোহভঙ্গ ঘটে। বিজেপি সঙ্গ ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানের হিড়িক লাগে। বামভোটও ফিরে আসে লাল পতাকার নিচে। তাছাড়া দু হাজার দশ সালে তৃণমূল জিতলেও তাহেরপুর পুরসভা আগাগোড়াই বামেদের হাতে থেকেছে।

লোকসভা ভোটের (Lok Sabha Election) শিক্ষা থেকে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা নিজেদের ভোটকে এককাট্টা করতে পারলেও এবারের পুরভোটে প্রার্থী বাছাই নিয়ে ঘাসফুলের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছিল। তারই প্রভাব পড়েছে ভোটবাক্সে । ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল হয়ে দাঁড়ানো বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থী পরিতোষ মজুমদার দ্বিধায় হয়েছেন। ভোট কাটাকাটির জেরে তৃতীয় স্থানে নেমে গিয়েছেন তৃণমূল প্রতীকে লড়া রবীন্দ্রনাথ দাস। পাশপাশি বাম ভোট ঘরে ফেরার উদাহরণ একাদিক। বিধানসভা ভোটে ৯টি ওয়ার্ডে এগিয়ে থাকা তৃণমূল এবার জিতেছে সাকুল্যে ৬টি আসনে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর উমা দত্তের প্রাপ্ত ভোট সিপিএম প্রার্থী মহুয়া চক্রবর্তীর থেকে প্রায় ৩০০ কম। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অমিতাভ সাহার থেকে সিপিএম (CPIM) প্রার্থী পুস্পা সরকার ২০০র বেশি ভোটে জিতেছেন। অথচ ১১ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের বিদায়ী বোর্ডের চেয়ারপার্সন রতন রঞ্জন রায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সহদেব দাসের কাছে হেরেছেন মাত্র ১১ ভোটে। ১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যানের স্ত্রী দিপালী চক্রবর্তী নন্দিতা মন্ডলের কাছে হেরেছেন মাত্র ১৪ ভোটে। ২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী মলয় দাসের থেকে সিপিএমের জয়ী প্রার্থী প্রবীর দাসের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান প্রায় পৌনে চারশো। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে,লোকসভা ভোটে প্রথম হওয়া ওয়ার্ডগুলিতে বিজেপি পৌঁছে গিয়েছে তৃতীয় স্থানে।

[আরও পড়ুন: না জানিয়েই নিরাপত্তা প্রত্যাহার করল কেন্দ্র, ক্ষুব্ধ বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার]

বহু শ্রমজীবী মানুষের বাস তাহেরপুরে। বাইরে কাজ করতে যান বেশ কিছু মানুষ। রাজনৈতিক মহলের মতে, করোনাকালীন (Coronavirus) সময়ে সেই সব পরিযায়ী শ্রমিকেরা নিজেদের শহরে ফিরে আসার পর কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি করে বামফ্রন্ট পরিচালিত তাহেরপুর পুরসভার ভূমিকা মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে। আর রাজ্য সরকারের মা ক্যান্টিন, দুয়ারের সরকারের মত একাধিক প্রকল্পে বিরোধিতা না করে মানুষের সঙ্গে থেকে ভালো কাজের সুফল পেয়েছে বামফ্রন্ট।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement