শম্পালি মৌলিক: প্রথমত, অনেকদিন পর বাংলা সিনেমায় ফিরছেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। দ্বিতীয়ত, ‘অপরাজিতা তুমি’-র পর আবার বাংলা ছবির ক্যামেরার পিছনে পাওয়া যাবে রঞ্জন পালিতকে। তৃতীয়ত, মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফিল্মে অভিনয় করতে দেখা যাবে। আর এসবই ঘটছে সুচন্দ্রা বানিয়া প্রযোজিত, রাজর্ষি দে পরিচালিত ‘পূর্ব পশ্চিম দক্ষিণ (উত্তর আসবেই)’-এর জন্য।
কীভাবে? অতি সম্প্রতি অভিনেত্রী সুচন্দ্রা বানিয়া লঞ্চ করলেন তাঁর ‘জাস্ট স্টুডিও’-র ইউটিউব চ্যানেল। এবার নিজের সেই প্রোডাকশন হাউস থেকে প্রথম ছবিটি প্রযোজনা করতে চলেছেন সুচন্দ্রা। সেই ছবির পরিচালনাতেই রাজর্ষি দে।
কেমন ছবির ধরন? জানা যাচ্ছে অভীক সরকারের লেখা এই সময়ের অন্যতম বেস্ট সেলার বই ‘এবং ইনকুইজিশন’-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে এই ছবি। পরিচালকের দাবি অনুযায়ী, এটাই বাংলার প্রথম প্যারানরমাল থ্রিলার। এই বইয়ের চারটে গল্পের মধ্যে প্রথম তিনটি নেওয়া হয়েছে ছবির জন্য। প্রেক্ষাপট এইরকম যে, বাকি ভারত বাংলাকে জাদুবিদ্যার নগরী মনে করে। বিশেষ করে মা কালী এবং তারাপীঠের প্রতি বিশ্বাস থেকে অনেকেই উইচক্রাফ্ট এবং ব্ল্যাক ম্যাজিকের পীঠস্থান মনে করে এ অঞ্চলকে। এই ছবির গল্প তেমনভাবেই বহুযুগের বিশ্বাস, অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কারের ওপর ফোকাস করবে, বলা চলে তন্ত্রসাধনাকে অন্য আলোকে দেখাবে। যে কাহিনি ছুঁয়ে থাকবে জন্মান্তরের গল্পও। ঠিক যেমন পপুলার বলিউড ফিল্ম ‘ওম শান্তি ওম’ বা ‘কর্জ’-এ দেখেছে দর্শক। তবে আসল ফোকাস হল- তন্ত্র সাধনা কী উপকার করতে পারে তার দিকে।
[ দীপিকাকে স্বাগত জানাতে সেজে উঠেছে রণবীরের বাড়ি, দেখুন ভিডিও ]
কেন এমন একটা বিষয় বেছে নিলেন রাজর্ষি? “কার্ল হেইন্সবার্গের লেখা আমার ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে বলতে পারেন। আর টেলিভিশন খুললেই, স্যাটেলাইট ছাড়া যে চ্যানেলগুলো আছে, অন্তত ২৫-৩০টা চ্যানেলে সারাদিন ধরে জ্যোতিষি এবং তান্ত্রিকরা বসে থাকেন। এসব সম্বন্ধে আদতে অনেক মানুষেরই সঠিক ধারণা নেই। কেউ মনে করে বুজরুকি, আবার কেউ বিশ্বাস আঁকড়ে থাকে। তন্ত্রের ঠিকঠাক প্রয়োগে যে মানুষের সত্যিকারের উপকার হতে পারে এবং যে কোনও খারাপ জিনিসকে তন্ত্র আটকায়, সেটা বলার একটা চেষ্টা করব এই ছবির মাধ্যমে।”
মূলত একটি ট্রেন জার্নির মাধ্যমে তিনটে ছোট ছোট গল্প সামনে আসবে। যেখানে একজন মেল প্যাসেঞ্জার এবং ফিমেল প্যাসেঞ্জার যাচ্ছে চিকিৎসা করাতে। এই দু’জনের কথোপকথন থেকে উঠে আসবে সিনেমার কাহিনি। এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি চরিত্রে অভিনয় করছেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এবং অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। ছবিতে থাকবে রিয়্যাল লাইফ চরিত্র ‘কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ’। যিনি বাসুদেব সার্বভৌমর ছাত্র এবং চৈতন্য মহাপ্রভুর ব্যাচমেট ছিলেন। যাঁরা তন্ত্র সাধনা সম্বন্ধে অবগত, তাঁরা কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ সম্বন্ধে জানেন। এই চরিত্রে অভিনয় করতে চলেছেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি প্রতিটি গল্পেই সেভিয়ার হিসেবে অবতীর্ণ হবেন। এই কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশেরই লেখা বই ‘বৃহতন্ত্রসার’, যেটাকে বাংলার তন্ত্র সাধনার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বই হিসেবে ধরা হয়।
রাজর্ষি বলছেন, “ভারতের বৈদিক শক্তি ও আদি শক্তি যে তন্ত্রের একটা উৎস, সেটা ব্যবহার করব সারা ছবি জুড়ে। আর তন্ত্র সাধনার ভাল দিক নিয়েই বলব। খারাপ দিক সম্বন্ধে মানুষ যেন সচেতন হতে পারে, তারা পুরোটা বলা থাকবে ‘পূর্ব পশ্চিম দক্ষিণ’-এ।” আর কারা অভিনয় করছেন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে? ছবির তিনজন অ্যান্টাগনিস্ট- রাজেশ শর্মা, আরিয়ান ভৌমিক, ঈশিকা দে (টোপ ও সেক্রেড গেমস-খ্যাত)। দুটি ইন্টারেস্টিং চরিত্রে থাকছেন সুচন্দ্রা বানিয়া ও গৌরব চক্রবর্তী। আর আগেই উল্লেখ করেছি যে, অনেকদিন পর ফিল্মে প্রত্যাবর্তন করবেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, ঐতিহাসিক-অধ্যাপকের চরিত্রে তিনি। নাট্য জগতের কৌশিক কর এবং সত্রাজিৎ সরকারও আছেন। থাকছেন দামিনী বসু, রিচা শর্মা, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, পদ্মনাভ দাশগুপ্তও। ছবির মিউজিক করছেন দেবজ্যোতি মিশ্র। রাজর্ষি জানালেন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শুটিং শুরু। কলকাতা পুরুলিয়া মিলিয়ে শুটিং হবে।
প্রসঙ্গত, পরিচালক পুজোর আগেই শেষ করেছেন তাঁর ‘শুভ নববর্ষ’-র কাজ। আর প্রথম ছবি ‘বীরপুরুষ’-এর তিনদিনের কাজ বাকি। তিনি আশাবাদী যে খুব শিগগির র্যাপ আপ করতে পারবেন।
[ প্রকাশ্যে এল রাজ চক্রবর্তীর নতুন ছবির ট্রেলার ]
The post বাংলার প্রথম প্যারানরমাল থ্রিলারে অর্পিতা-কমলেশ্বর appeared first on Sangbad Pratidin.