যেতে যেতেও যাচ্ছে না। আর শীত হয়তো আছে আর ক’দিন। এই সকালগুলোয় চায়ের সঙ্গে ‘টা’-এর সন্ধানে প্রীতিকা দত্ত
মহারাজের কচুরি
ভোরে দক্ষিণ কলকাতার মহারাজে ব্রেকফাস্ট না করলে বুঝতে পারবেন না, বাঙালির কচুরি প্রেম কত গভীর! এক মিনিটে যে কত কচুরি বিক্রি হয়, দোকান মালিক হয়তো নিজেও জানেন না। কেউ দোকানে দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন। কেউ ঠোঙায় করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। এক-একটা কচুরি আট টাকা। হিংয়ের কচুরি সঙ্গে ভাজা মশলা দেওয়া গরম ঘন আলুর তরকারি। চাইলে মিলবে খাস্তা কচুরি, জিলিপি আর অন্য ভাজা মিষ্টি।
পুঁটিরাম ডাল কচুরি
কলেজ স্ট্রিট মানে বইপাড়া, কফিহাউসের আড্ডা, প্যারামাউন্টের শরবত। আর? আর পুঁটিরামের রাধাবল্লভী। সকাল ৬টা থেকে গভীর রাত অবধি যে কোনও সময় অ্যাভেলেবল। ডালের পুর দেওয়া কচুরি, সঙ্গে ছোলার ডাল। চারটের দাম ৩০ টাকা। বিকেলের দিকে প্লেটে রাধাবল্লভী। পুঁটিরামে এলে কচুরি-ডালের পাশাপাশি টেস্ট করুন রাজভোগও। স্বাদ মনে থাকবে অনেকদিন!
বলরাম মল্লিক অ্যান্ড রাধারমণ মল্লিক
শীতকে গুডবাই বলার দিনগুলোয় সকাল-সকাল একটু কড়াইশুঁটির কচুরি না হলে চলে না। ময়দার আড়ালে টাটকা কড়াইশুঁটির পুর। বাড়িতে তৈরি করার সময় নেই। তাই চলে আসুন বলরাম মল্লিক অ্যান্ড রাধারমণ মল্লিকের দোকানে। ১৮৮৫ সাল থেকে এই ২০২০-তেও এদের কচুরি আর মিষ্টি সমান হিট। ভবানীপুর, বালিগঞ্জ, কসবা, লেক গার্ডেন্স, পার্ক স্ট্রিট-গোটা শহরে ছড়িয়ে বলরাম। আর তাদের গরম গরম কড়াইশুটির কচুরি।
টিরিটিবাজার
সেন্ট্রাল মেট্রো থেকে পোদ্দার কোর্টের দিকে এগোলেই চিনা ব্রেকফাস্টের গন্ধ। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ভীষণ জনপ্রিয় ব্রেকফাস্ট জয়েন্ট। ফ্লুরিজে যেমন সসেজ, হ্যাশ ব্রাউনের সঙ্গে ইংলিশ ব্রেকফাস্ট বিখ্যাত, টিরিটিবাজারের চিনা জলখাবার ততটাই পরিচিত। গরমাগরম ডাম্পলিং, চিকেন বাও বা অথেনটিক অন্য সব চাইনিজ পদে শীতশেষের ব্রেকফাস্ট জমজমাট। খাবারের স্টলের পাশাপাশি অবশ্যই ঢুঁ মারুন চিনা মশলার দোকানে। আর হ্যাঁ, সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য পাবেন অসংখ্য ফ্রেম। তাই মোবাইল ক্যামেরা রেডি রাখুন।
চন্দননগর স্ট্র্যান্ড
ঠিক স্ট্র্যান্ড নয়। চন্দননগর চার্চ লাগোয়া স্টলগুলোর কথা বলছি। শীতশেষের উইকএন্ডে কাছেপিঠে ঘুরতে যেতে চাইলে চন্দননগর যাওয়াই যায়। রবীন্দ্রভবন, মিউজিয়াম, পাতালবাড়ি, চন্দননগর চার্চ- অনেক কিছু দেখার আছে। ঘোরার আগে অবশ্যই একটু পেটপুজো। চন্দননগর স্টেশন থেকে নেমে অটো নিয়ে চলে আসুন স্ট্র্যান্ডে। আপনার জন্য অপেক্ষা করছে রবিন টি স্টল, ওয়ান মিনিট, অভিনন্দন, ফিরোজ এবং আরও অনেক দোকান। শুধু কচুরি-জিলিপি নয়, পাবেন দারুণ চা-ও। সঙ্গে এগ টোস্ট, বাটার টোস্ট। ছুটির সকালে এত ভিড় থাকে যে, নিয়মিত খদ্দেরদের খালিহাতে ফিরে যেতে হয়।
সত্যনারায়ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার (বারাকপুর)
বারাকপুর স্টেশন থেকে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে নেমে সামনের রাস্তা পেরোলেই সত্যনায়ারণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। দোকানের বয়স ১৯০ বছর। অবস্থাও তথৈবচ। তবে ডেকর দেখতে যাবেন না। পুরনো কাঠের চেয়ারে বসুন। গরম হিংয়ের পুর দেওয়া কচুরি এনজয় করুন। সঙ্গে ছোলার ডাল। আলু বা সবজি নেই, তবে তেঁতুলের চাটনি আছে। ৫ পিস কচুরি ২০ টাকা। কচুরির পর রাবড়ি টেস্ট করতে ভুলবেন না। ও হ্যাঁ, বলা হয়নি। দোকানের সামনে কোনও ব্যানার নেই। চিনতে না পারলে যে কাউকে জিজ্ঞেস করুন, ভরতের দোকান কোনটা? পরেশ আর ভরত এই দোকানের মালিক।
রামকৃষ্ণ লাঞ্চ হোম
সাম্বার বানাতে কতরকম সবজি লাগে, জানি না অনেকেই। তবে সাম্বারে ইডলি-ধোসা ডোবাতে ভালবাসি সবাই। শুধু লো-ফ্যাট নয়, পেটের পক্ষেও সাউথ ইন্ডিয়ান খাবার সব সময় হিট। এখানে ইডলি, উত্থাপমের সঙ্গে পাবেন কেরলের ফিল্টার কফি। শীতশেষের সকালে সেই কফির গ্লাসে হাত স্যাঁকাই বা কী কম পাওয়া! সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের রামকৃষ্ণ লাঞ্চ হোম কেন জনপ্রিয়? বলা হয়, ভেজাল রেসিপির যুগেও খাঁটি সাউথ ইন্ডিয়ান খাবার পাওয়া যায় এখানে।
সাবির’স
প্রাতরাশের লিস্টে কী করে উঠে এল চাঁদনি চকের সাবির’স হোটেল? আসলে কচুরি-জিলিপি-ঘুগনি-টোস্টের পর মুখের স্বাদ বদলাতে মোগলাই ব্রেকফাস্ট ট্রাই করতে পারেন। ব্রেকফাস্ট করতে সাবির’স এলে পেয়ে যাবেন জিভে জল আনা সব পদ। ডাল গোস্ত, পরোটা এবং মাটন টিকিয়া। টেস্ট বদলান। এটাও কিন্তু একটা এক্সপিরিয়েন্স!
The post সকালে চায়ের সঙ্গে ‘টা’ চাই? চোখ বুলিয়ে নিন একবার appeared first on Sangbad Pratidin.