সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ঝালদায় কংগ্রেস কাউন্সিলর খুনের নেপথ্যে বেটিং (Betting) চক্র! এই জল্পনা ঘিরে দিনভর জোর চর্চা জেলার রাজনৈতিক মহলে। বৃহস্পতিবার নিহত তপন কান্দুকে খুনের ঘটনায় বেটিং চক্র যুক্ত রয়েছে বলে চাউর হয়ে যায়। নিহত তপন কান্দু ও তাঁর সেজদা তথা ধৃত তৃণমূল (TMC) প্রার্থী দীপক কান্দুর বাবা নরেন কান্দুর মধ্যে বাজি হয় – কে ভোটে জিতবে। কাকা তপন না ভাইপো দীপক? খুনের ঘটনার সঙ্গে এই বাজির যোগ রয়েছে বলে জোর গুঞ্জন জেলাজুড়ে। যদিও এই বিষয়টি সরাসরি নস্যাৎ করে দিয়েছেন নিহতের স্ত্রী পূর্ণিমা।
স্বামীর খুনের সঙ্গে বেটিং চক্রের বিষয়টি জুড়ে যাওয়া নিয়ে নিহতের স্ত্রী পূর্ণিমা দেবী বলেন, “এই সব ঘটনা চাউর করে দিয়ে তদন্তের গতিপ্রকৃতি অন্য দিকে ঘোরাতে চাইছে পুলিশ। এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। আমার স্বামী কেন বাজি ধরতে যাবেন?” বিষয়টিকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন ধৃত দীপকের মা তথা নরেন কান্দুর স্ত্রী, প্রাক্তন কাউন্সিলর বাবি কান্দুও। তাঁর কথায়, “আমার স্বামী আমাকে সব কিছু বলে। এই ধরনের বাজি হলে আমি অবশ্যই জানতাম।”
[আরও পড়ুন: সন্তানই যেন ভগবান! দোলপূর্ণিমায় রাধাকৃষ্ণ জ্ঞানে নদিয়ায় কিশোরদের পুজো করেন গ্রামবাসীরা]
তপন কান্দু খুনের ঘটনায় তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ ঝালদা থানা গ্রাহ্য না করায় এবার তার ভাইপো মিঠুন কান্দু আরও সক্রিয় হন। পুরুলিয়ার (Purulia) পুলিশ সুপারের কাছে তাঁর আবেদন, ওই অভিযোগ এফআইআর হিসাবে গ্রহণ করে আইসি–র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তপনবাবুক স্ত্রী পূর্ণিমা দেবী আদালতে গোপন জবানবন্দি দিতে চান বলে ওই আবেদনে উল্লেখ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস. সেলভামুরুগন বলেন, “নিহতের স্ত্রীর গোপন জবানবন্দি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”
এদিন নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলরের বাড়িতে যান পুরুলিয়ার বিজেপি (BJP) সাংসদ তথা দলের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। তাঁকে দেখে নিহতের স্ত্রী তথা কাউন্সিলর পূর্ণিমা কান্দু বলেন, “সিবিআই কবে হবে সেটা বলুন। আইসি কবে গ্রেপ্তার হবে সেটা বলুন। আর কোনও কথা শুনতে চাই না।” পূর্ণিমা দেবীর কাছ থেকে এই কথা শুনে তাঁকে আশ্বাস দেন সাংসদ। তিনি বলেন, “সিবিআই যাতে হয় সেই চেষ্টা আমরা করছি।”
[আরও পড়ুন: খুন নাকি আত্মহত্যা? প্রেমিকার বাড়ির উঠোন থেকে যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারে চাঞ্চল্য]
কংগ্রেস (Congress) কাউন্সিলর খুনের ঘটনার তদন্ত করছে সিট। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে সিটের আধিকারিকদের হাতে এসেছে বেশ কিছু তথ্য। তাঁরা জানতে পেরেছেন, মোটরবাইকে থাকা আততায়ীর সংখ্যা ছিল তিন। তারা বাঘমুন্ডির দিকে চলে গেলেও ইচাগ গ্রাম থেকে ডানদিকে ঘুরে গ্রামীণ পথ ধরে মাড়ু মোড়ে ওঠে। সেখান থেকে ঝাড়খণ্ড সীমানা পুরুলিয়ার এক কিমি দূরে তুলিন দিয়ে সহজেই ঝাড়খন্ডে চলে যায়। ‘খুনি’-সহ তিনজন আততায়ী ঝাড়খণ্ডের মুরি স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে ভিন রাজ্যে গাঢাকা দেয় কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখছে সিট। সহজে ঝাড়খণ্ডে গা ঢাকা দিতেই গ্রামীন পথ ধরে অরক্ষিত সীমানাকে কাজে লাগায় আততায়ীরা। তাদের স্কেচ আঁকানো হয়েছে। শুরু হয়েছে তল্লাশি। ধরে দিতে পারলে পুরস্কারও ঘোষণা করেছে জেলা পুলিশ।