দুলাল দে: মুম্বইতে একটা সময় ‘গেটওয়ে অব ইন্ডিয়ার’ কাছাকাছি গেলে অন্যতম আকর্ষণ ছিল শচীন তেন্ডুলকরের রেস্তরাঁ ‘তেন্ডুলকর’। ‘ওভাল’ সহ বিশ্বের বিভিন্ন ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নামানুসারে সেখানে বিভিন্ন টেবলের নাম রাখা হয়েছিল। রেস্তরাঁর ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় ছিল শচীনের ব্যবহৃত ক্রিকেট স্মারক। তবে এখন আর মুম্বই গেলে দেখা যাবে না ‘তেন্ডুলকর।’ বন্ধ হয়ে গিয়েছে রেস্তরাঁটি। একটা সময় কলকাতায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের রেস্তরাঁ ‘সৌরভস’ নিয়েও কম আলোচনা হয়নি। কালক্রমে সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ক্রিকেটারদের মধ্যে একমাত্র বিরাট কোহলির রেস্তোঁরা ‘ওয়ান৮কমিউন’ এখনও রম রম করে চলছে। যেটা মুম্বইয়ের ‘জুহুতে’ কিশোরকুমারের বাড়ি গৌরীকুঞ্জর একপাশে প্রথম খোলা হয়েছিল।
এসবই ক্রিকেটারদের ব্যাপার স্যাপার। ফুটবলারদের ক্ষেত্রে এরকম ব্যবসায়ী ভাবনা চিন্তা খুব একটা শোনা যায়নি। কিন্তু কেনই বা পিছিয়ে থাকবেন ভারতীয় ফুটবল আইকন প্রাক্তন জাতীয় অধিনায়ক বাইচুং ভুটিয়া। শিলিগুড়িতে সেবক রোডের উপরে খুলে বসলেন, ৮ হাজার স্কোয়ার ফুটের ‘মাল্টি কুইজিন’ রেস্তরাঁ ‘গোট’। যা এই মুহূর্তে সমগ্র পূর্বাঞ্চলের মধ্যে বৃহত্তম। সেবক রোডের উপরে ‘টাইমস স্কোয়ার’ নামক বিল্ডিংয়ের উপরে দ্বিতীয় তলায় রেস্তরাঁর কিছুটা অংশ। বাকিটা ‘রুফ টপে’। ৮ হাজার স্কোয়ার ফুটের এই বৃহৎ রেস্তরাঁয় প্রবেশ করলে শুধুই ডিলিসিয়াস ফুডের জন্য নয়। আপনি ‘স্পোর্টিং অ্যাম্বিয়েন্স’ও খুঁজে পাবেন। বাইচুং যেহেতু রেস্তোঁরাটির নাম রেখেছেন ‘গোট’, তাই রেস্তরাঁর একটি ওয়ালে রয়েছে বিশ্বফুটবলের ‘গোট’, পেলে, মারাদোনা, মেসি, ব্রাজিলিয়ান রোনাল্ডো, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ছবি। পুরো রেস্তোঁরা জুড়ে ছড়িয়ে আছে বাইচুংয়ের বিভিন্ন স্মারক। যেখানে আশিয়ান কাপ জিতে সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং ফাইনালের সেরা ফুটবলারের পুরস্কারটাও রাখা আছে। আরেকটি ওয়ালে রয়েছে পাহাড়ি বিছের বিভিন্ন সময়ের জার্সি। সেখানে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলা আশিয়ান কাপ জেতা লাল-হলুদ জার্সির পাশাপাশি ভারতীয় দলের হয়ে বিদায়ী ম্যাচে বেয়ার্ন মিউনিখের ফুটবলাররা যে জার্সির উপর তাঁদের অটোগ্রাফে ভরিয়ে দিয়েছিলেন, সেই জার্সিও রেস্তরাঁয় স্থান পেয়েছে। রয়েছে মাইকেল বালাক, কাকাদের সঙ্গে খেলার জার্সিও। রয়েছে মোহনবাগানের জার্সি।
এই বিশাল রেস্তরাঁয় একপাশে রয়েছে ‘ভিআইপি’ জোন। যেখানে বাইচুং তাঁর পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ লোকদের নিয়ে বসেন। ভারতীয়, কন্টিনেন্টাল, চাইনিজ, জাপানিজ সহ মোটামুটি সব দেশের খাওয়ার পাওয়া যায় বাইচুংয়ের রেস্তোঁরায়। এই বিশাল রেস্তরাঁয় রয়েছে ‘পাব’ও। সঙ্গে চলছে লাইভ মিউজিক। যেখানে বিভিন্ন প্রদেশের সঙ্গীতের পাশাপাশি কোনও কোনওদিন বাউল সঙ্গীতও পরিবেশিত হয়। রয়েছে ‘নাইট ক্লাব’-ও। রেস্তরাঁর দ্বিতীয় তলের পাশাপাশি আপনি যদি রেস্তরাঁর রুফ টপে গিয়ে বসেন, তাহলে ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে দিনের বেলায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনও হয়ে যেতে পারে। রুফ টপের একদিকে আবার রয়েছে ‘ফাইভ এ সাইড’ ফুটবল খেলার টার্ফ। এই ফুটবল মাঠের সঙ্গে ‘গোট’ রেস্তরাঁর সম্পর্ক নেই। একই বিল্ডিংয়ের উপর এটা বাইচুয়ের আরেকটি প্রজেক্ট। এই ফুটবল টার্ফের সঙ্গেই রয়েছে একটি ‘কফিশপ’-ও। তাঁর রেস্তরাঁ এবং কফিশপ একই সঙ্গে চলছে একই বিল্ডিংয়ে।
কিন্তু হঠাৎ করে ফুটবল স্কুলের পাশাপাশি এরকম ঝাঁ চকচকে রেস্তরাঁ কেন খুললেন বাইচুং? পাহাড়ি বিছের উত্তর হল, ‘ খেলার জন্য টানা ৩০ বছর শুধু হোটেল আর রেস্তরাঁয় বসে কাটিয়েছি। খেলার জন্য বাড়িতে থাকার উপায় ছিল না। সারা বছর ট্রাভেল করতে হয়েছে। ফলে ব্রেকফাস্টে থেকে লাঞ্চ, ডিনার সব করতে হত রেস্তরাঁয়।পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে একেক রেস্তরাঁয় একেক রকম সুবিধে পেয়েছি। সব অভিজ্ঞতা থেকে তখন থেকেই ভাবতাম, নিজে এমন একটা রেস্তরাঁ খুলব, যেখানো গ্রাহকরা এসে সবরকমের স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। কোনও রেস্তরাঁয় গিয়ে আমরা যেরকম পরিবেশ চাইতাম, সেইরকম পরিবেশ আমার রেস্তোঁরাতেও রেখেছি। খাওয়া, থেকে পরিবেশ সব আধুনিক মানের সুবিধা রাখা হয়েছে। আর যাঁরা ক্রীড়াপ্রেমী তাঁরাও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। কারণ, আইপিএল, আইএসএল থেকে ইপিএল। আমার রেস্তরাঁয় এলে সব খেলা লাইভ দেখতে পাবেন। চাইলে রুফ টপে গিয়ে ফুটবলও খেলে আসতে পারবেন।’