ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: শান্তিনিকেতনে মেলার মাঠে পাঁচিল উঠবে কি না, তা নিয়ে এবার জনমত নেওয়ার কাজ শুরু করল পুলিশ প্রশাসন। আজ সাইকেল নিয়ে শান্তিনিকেতনে বাড়ি বাড়ি ঘুরলেন পুলিশ সুপার শ্যাম সিং নিজে। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শিবপ্রসাদ পাত্র-সহ একাধিক পুলিশ আধিকারিক। যাওয়া হয় বিশ্বভারতীর(Vishva Bharati) আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর, সুজিত চট্টোপাধ্যায়, কল্পিকা মুখোপাধ্যায়-সহ প্রাক্তনীদের বাড়িতেও। মেলার মাঠে পাঁচিল নিয়ে সর্বাগ্রে যাঁদের আপত্তি ছিল। মনে করা হচ্ছে, সম্প্রতি পাঁচিল তোলা নিয়ে যে নজিরবিহীন অশান্তির মুখে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়, এই পদ্ধতিতেই তার সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল তোলার কাজ করান। কিন্তু মুক্ত শিক্ষাঙ্গন পাঁচিল দিয়ে ঘেরার প্রতিবাদে সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয়দের একাংশ পে-লোডার নিয়ে সেই নির্মাণকাজ ভেঙে দেন। এ নিয়ে অশান্তি গড়ায় বহুদূর। শান্তিনিকেতনের মতো মুক্ত পরিবেশে পাঁচিল নির্মাণের তীব্র বিরোধিতা করেন আশ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের মতে, এই সিদ্ধান্ত কারও সঙ্গে আলোচনা না করে এককভাবে নিয়েছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। তাতেই তাঁদের আপত্তি। বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য অনুযায়ী, ২ ফুট পাঁচিল দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু মেলার মাঠে ৮ থেকে ১০ ফুট লম্বা পাঁচিল তোলা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। উপাচার্য যদিও দাবি করেছিলেন, পরিবেশ আদালতের নির্দেশেই মেলার মাঠের এই অংশ পাঁচিল দিয়ে ঘেরার কাজে হাত দেওয়া হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘রাজনৈতিক মদতেই পৌষমেলার মাঠের পাঁচিল ভাঙচুর’, দাবি বিশ্বভারতীর উপাচার্যের]
এই ঘটনা নিয়ে শিক্ষামহল থেকে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। বিশিষ্টজনেরাও বিশ্বভারতীর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। অনেকের মতে, পাঁচিলের কাজে হাত দেওয়ার আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা দরকার ছিল। তাহলে হয়ত অশান্তি এত দূর গড়াত না। পাঁচিল ভাঙার ঘটনায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে শান্তিনিকেতন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় এই মর্মে, রাজনৈতিক মদতেই এমন ভাঙচুর চলেছে। দুবরাজপুরের তৃণমূল বিধায়ক নরেশ বাউড়ি-সহ বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে দায়ের হয় অভিযোগ। উপাচার্য নিজেও মনে করেন, গোটা ঘটনায় তৃণমূলের রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে।
[আরও পড়ুন: পাচারের আগে পর্দাফাঁস, মুর্শিদাবাদে ৬০০ কেজি ইলিশ উদ্ধার করল বিএসএফ]
পুলিশ তদন্তে নেমে অন্যভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করার চেষ্টা করে। সেই কারণেই আজ, রবিবার বাড়ি বাড়ি ঘুরে জনমত সংগ্রহের তোড়জোড়। তাঁকে সামনে পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন আশ্রমিকরা। তাঁদের শান্ত করে মেলার মাঠে পাঁচিল তোলা নিয়ে কার কী মতামত, তা জানতে চান পুলিশ সুপার শ্যাম সিং। আশ্রমিকরা বেশিরভাগই পাঁচিল তোলার বিরোধী বলে জানা যাচ্ছে। তাঁদের সকলকে আশ্বস্ত করে এসপি জানান, পুলিশ আশ্রমিক এবং স্থানীয়দের সঙ্গেই রয়েছে। এই জনমতের ভিত্তিতে এরপর পুলিশ কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই দেখার।
The post মেলার মাঠে পাঁচিল নিয়ে জনমত সংগ্রহ, শান্তিনিকেতনে বাড়ি বাড়ি ঘুরলেন পুলিশকর্তারা appeared first on Sangbad Pratidin.