বাবুল হক, মালদহ: ব্যাঙ্ক ডাকাতির মূল পান্ডা বিজেপির নেতা! পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পুলিশ হেফাজতে সমীর মণ্ডল নামে ওই অভিযুক্তর চিকিৎসা চলছে মালদহ মেডিক্যালে। যিনি গত পঞ্চায়েত ভোটে পদ্ম প্রতীকে লড়েছিলেন। আর এ নিয়েই বৃহস্পতিবার শোরগোল পড়ে গিয়েছে মালদহের রাজনৈতিক মহলে।
সমীরের বাড়ি গাজোলের (Gazole) কৃষ্ণপুর সমবায় ব্যাঙ্কের অদূরেই। এলাকাটি রানিগঞ্জ-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। ধৃত অপর তিনজনের বাড়ি চাঁচোল থানা এলাকায় বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন এই সমীর মণ্ডলই গোটা ডাকাতির ঘটনার মাস্টার মাইন্ড বলে জানিয়েছেন মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় ঘিরে গাজোলের পাশাপাশি জেলার রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: ফের ঘূর্ণাবর্তের ভ্রুকুটি! সপ্তাহান্তে বৃষ্টিতে ভিজবে বাংলার এই ৮ জেলা]
ডাকাতির মূল পান্ডা সমীর গাজোলের রানিগঞ্জ এলাকার বিজেপির নেতা। সমীরের বাবা রতন মণ্ডল এদিন জানান, তাঁর ছেলে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিল। রানিগঞ্জ -২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বটতলা সংসদে তৃণমূল প্রার্থীর কাছে হেরে যায়। রতনবাবুর দাবি, বিজেপি থেকে দাঁড়িয়ে ভোটে হেরে যাওয়ার পর থেকেই মূল অভিযুক্তকে জেল খাটতে হয়েছে। কখনও চুরি, ছিনতাইয়ের মামলায়, কখনও ডাকাতি কেসে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি।
বুধবার ভরদুপুরে মালদহের (Malda) গাজোলের কৃষ্ণপুরের একটি সমবায় ব্যাঙ্কে দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আটজনের ডাকাতদল ওই সমবায় ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ারকে পেটে গুলি করে অন্তত ছয় লক্ষ টাকা লুঠ করে পালায়। পুলিশ সূত্রে খবর, একটি গাড়িতে করে পালানোর সময় দুষ্কৃতীরা ব্যাঙ্কের সামনে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় ও বোমা ফেলে। সেই সময় দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ওল্ড মালদহ থানার ভাবুক অঞ্চলের সুখানদিঘির কাছে রাস্তায় একটি জেসিবি মেশিন দাঁড়িয়ে ছিল। সেখানেই ডাকাতদল আটকে পড়ে। পুলিশের সঙ্গে ডাকাতদের গুলি বিনিময় হয়। চারজন দুষ্কৃতী ধরা পড়ে। দুজন ডাকাত গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের পায়ে পুলিশের গুলি লাগে। তাদের মধ্যেই একজন সমীর মণ্ডল। তিনি পাঁচ-সাতবার জেল খেটেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
রতনবাবু বলেন, "আমার ছেলে। কিন্তু এখন আর সম্পর্ক নেই। আমাদের খোঁজ নেয় না। শুনলাম, ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। গুলি লেগেছে। দেখতে যাব না। ওর শাস্তি হোক।" রানিগঞ্জ-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই বটতলা গ্রামের তৃণমূলের বর্তমান সদস্যা লতিকা সরকার বলেন, "সমীর ১৮ সালে বিজেপির প্রার্থী ছিল। হেরেছে। এলাকার বিজেপি নেতা সে। ওকে ভয় হয় আমাদের।" ওই এলাকার বিজেপি নেত্রী তথা গাজোল পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলের নেত্রী গাঙ্গুলি সরকার বলেন, "সমীর মণ্ডল বিজেপির প্রার্থী ছিল কি না জানি না। তবে বিজেপিতে চোর-ডাকাতদের স্থান নেই। কেউ তাকে মদত দিয়ে থাকলে অন্যায় করেছেন।"
অন্যদিকে, মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব জানিয়েছেন, সমবায় ব্যাঙ্কে ডাকাতি, রুদ্ধশ্বাস গুলির লড়াইয়ের পর চারজন ধরা পড়েছে। আট ডাকাত যুক্ত রয়েছে। ডাকাতদলের দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় এবং চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। আরও দুজন ধরা পড়ে চিরুনি তল্লাশির সময়ে। জিজ্ঞাসাবাদ করে ডাকাতদলের বাকি চারজনের পরিচয় জানা গিয়েছে। ফেরার ডাকাতদের ধরার জন্য অভিযান চলছে।