রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ও সৌরভ মাজি: উত্তরপ্রদেশ (Uttar Pradesh) মডেল যে বাংলায় কার্যকরী নয় বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর তা বুঝছে বিজেপি (BJP)। সোমবার রাত পর্যন্ত চলা হেস্টিংসের দলীয় বৈঠকে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশ উপস্থিত জেলা নেতৃত্বের সামনে বলেন, ”উত্তরপ্রদেশ মডেল যে বাংলায় চলবে না সেটা আমরা বুঝেছি। আগে আপনারা বললেও আমরা এটা বুঝতে পারিনি।” বাংলার রাজনীতি যে আলাদা, হিন্দি বলয়ের রাজনীতির সঙ্গে এখানকার রাজনীতির ধরন যে খাপ খায় না সেটা অবশেষে শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শিবপ্রকাশের এই বক্তব্য থেকেই তা স্পষ্ট বলে মনে করছেন দলের একাংশ।
২০২১-এর ভোটযুদ্ধে বাংলা দখলের লড়াইয়ে ভিন রাজ্যের নেতাদের মাঠে নামিয়েছিল বিজেপি। উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও অন্যান্য বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি থেকে দলের শীর্ষ নেতারা বাংলায় ঘাঁটি গেড়েছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের একটা বড় অংশই পশ্চিমবঙ্গে ঘাঁটি গেড়ে পড়েছিলেন। তারপরও বঙ্গ দখলের স্বপ্ন অধরাই রয়ে যায় বিজেপির। ৭৭টি আসন পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। ভোটে বিপর্যয়ের পর রাজ্য নেতা-কর্মীদের বড় অংশ প্রশ্ন তোলেন, ভোট যুদ্ধে রাজ্যে দলের পুরনো নেতাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি কেন? তাঁদের বক্তব্য ছিল, ভিন রাজ্যে যে সব নেতারা এসেছিলেন বাংলার রাজনীতির ধরন সম্পর্কে তাঁদের সম্যক ধারণা ছিল না। ফলে আশানরূপ ফল করতে পারেনি বিজেপি।
[আরও পড়ুন: খাস কলকাতায় চাকরি দেওয়ার নামে টাকা ও বাইক হাতিয়ে গ্রেপ্তার ভুয়ো পুলিশ]
এদিকে, সোমবার হেস্টিংস কার্যালয়ের পর মঙ্গলবার বর্ধমানে সাংগঠনিক বৈঠক হয় বিজেপির। যেখানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশ, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh), সহ সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। দলীয় সূত্রে খবর, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কড়া বার্তা দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছেন, ”দলে আমি বলে কিছু থাকবে না। সবই আমরা। একসঙ্গে মিলে সকলকে কাজ করতে হবে। একটা নির্বাচনে হেরে যাওয়া মানে সব শেষ, তা নয়।” সকালে বিজেপি আর রাতে যাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তাঁদের চিহ্নিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন দিলীপবাবু। সেই তালিকা রাজ্য দপ্তরে পাঠাতে বলেছেন। একইসঙ্গে তাঁর কড়া বার্তা, পার্টিতে আদি-নব্য বলে কিছু নেই।
যাঁরা অন্য দল থেকে এসেছেন তাঁরাই এসব তৈরি করেছেন। দলের নিয়মনীতি, আদর্শ মেনে চলতে হবে, না হলে দলে কোনও জায়গা হবে না। স্পষ্ট বার্তা বিজেপির রাজ্য সভাপতির। দিলীপবাবু আরও বলেন, ”ক্ষমতার লোভে অনেকে বিজেপিতে এসেছিল। ভোট মিটতেই তারা চলে গিয়েছে।” একইসঙ্গে তিনি জেলা সভাপতিদের জানিয়ে দেন, ইচ্ছা করলেই তাঁরা বুথ সভাপতিদের বদলাতে পারবেন না। রাজ্য কমিটিই সব সিদ্ধান্ত নেবে।
সূত্রের খবর, বর্ধমানের বৈঠকে জেলা নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভোটের সময় ভিন রাজ্যের নেতাদের ভূমিকা নিয়ে। শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তাঁদের ক্ষোভ, বাংলার রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা ছিল না ভিন রাজ্য থেকে বাংলায় ঘাঁটি গাড়া শীর্ষ নেতাদের। দলের পুরনো নেতাদের মতামতকেও তখন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: এই পুজোর হাত ধরে কলকাতায় ফিরছে সাইক্লোন ইয়াসের স্মৃতি!]
এদিন বর্ধমানে দলীয় কর্মসূচিতে ‘দুয়ারে সরকার’ নিয়ে রাজ্যকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, “দশ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে ভিড়। মানুষকে ভিখারি বানাতে চাইছে তৃণমূল সরকার। মাত্র পাঁচশো টাকার জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লোকে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। একে যদি উন্নয়ন বলা হয় তাহলে আর কী বলার আছে। মোদিজিকে দেখে শেখা উচিত কীভাবে অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে হয়।”