রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ও দেবব্রত মণ্ডল: বাম আমলের মরিচঝাঁপি কাণ্ডকে ফের বাংলার রাজনীতির আলোয় নিয়ে আসতে মরিয়া বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের লক্ষ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে উদ্বাস্তু ভোটব্যাংক। আর তাই লক্ষাধিক টাকা খরচ করে ন’টি সুসজ্জিত জলযান ভাড়া করে মঙ্গলবার সদলবলে গেরুয়া নেতারা কুমিরমারী গ্রামে গিয়ে মরিচঝাঁপি দিবস পালন করে এলেন।
দলের তফসিলি মোর্চার এই কর্মসূচিতে দলের ছ’জন বিধায়কের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও মুকুটমণি অধিকারী ও চন্দনা বাউরি ছাড়া আর কোনও বিধায়ককে দেখা যায়নি। তফসিলি মোর্চার রাজ্য সভাপতি সুদীপ দাস ও রাজ্য নেতা দেবজিৎ সরকার থাকলেও চারজন বিধায়ক কেন অনুপস্থিত রইলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, মতুয়া সমাজের একটা বড় অংশ অখুশি বিজেপির উপর। তাই নতুনভাবে উদ্বাস্তুদের মন জয় করতেই মরিচঝাঁপিকে হাতিয়ার করে মাঠে নেমেছে গেরুয়া নেতারা। কুমিরমারী গ্রামের পাশাপাশি ধর্মতলাতেও অবস্থান—বিক্ষোভ হয় তফসিলি মোর্চার উদ্যোগে। সেখানে ছিলেন বিজেপি নেতা দীপক বর্মন, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, তমোঘ্ন ঘোষ—রা। বিভিন্ন জেলাতেও কর্মসূচি নেয় বিজেপি। কিন্তু এত বছর পর হঠাৎ করে মরিচঝাঁপির ঘটনা নিয়ে কেন মাঠে নেমেছে বঙ্গ বিজেপি?
[আরও পড়ুন: ‘ওকে আমিই সিঁদুর পরতে বলেছি’, বৈশাখীর ‘সুরক্ষাকবচ’ হয়ে দাঁড়ালেন শোভন]
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে, বাংলায় পদ্মের অন্যতম ভরসা উদ্বাস্তু ভোটব্যাংক। কিন্তু সিএএ কার্যকর করা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের টালবাহানায় ক্ষুব্ধ মতুয়া সমাজের একটা বড় অংশ। এই বিষয়ে প্রকাশ্যেই মাঝেমধ্যে মুখ খুলেছেন মতুয়া সমাজের প্রতিনিধি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। সিএএ কার্যকর না হলে বিজেপির হয়ে যে ভোট চাইতে যাবেন না তা প্রকাশ্যেই বলেছিলেন মতুয়া বিধায়ক অসীম সরকার। তিনি চিঠিও দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। এই প্রতিবাদের পর তড়িঘড়ি বঙ্গ বিজেপির উদ্বাস্তু সেলের দায়িত্ব দেওয়া হয় অসীমবাবুকে। ফলে সামনে পঞ্চায়েত ভোট ও আগামী বছর লোকসভা নির্বাচন। সেদিকে নজর রেখেই উদ্বাস্তুদের আস্থা পেতে তৎপর পদ্মশিবির। রাজনৈতিক মহলের একাংশের কথায়, মরিচঝাঁপির এই পুরনো ঘটনাকে সামনে এনে নিজেদের উদ্বাস্তু দরদী মুখই তুলে ধরতে চাইছে বিজেপি।
এদিন ন’টি সুসজ্জিত জলযানে করে গদখালি থেকে প্রায় চার ঘন্টা পথ অতিক্রম করে বিজেপি নেতারা উপস্থিত হন কুমিরমারী দ্বীপে। প্রতিটি টুরিস্ট লঞ্চের এক-এক দিনের ভাড়া হিসাবে প্রায় আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আগেই কটাক্ষ করে বলেছিলেন, বিজেপি পিকনিক করতে যেতে চাইলে যাক। কিন্তু তার সঙ্গে শহিদদের নাম জড়িয়ে তাদের ছোট করা কেন? এদিকে, গেরুয়া শিবিরের এই কর্মসূচিকে নিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, মরিচঝাঁপি নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি।