সৌরভ মাজি, বর্ধমান: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বর্ধমানে নির্বাচনী সভা থেকে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের সহায়তার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তার ঠিক ৫ দিনের মাথায় অনলাইন পোর্টাল চালু করলো রাজ্য বিজেপি। যেখানে যোগ্য চাকরি প্রার্থীরা, যারা মেধার ভিত্তিতেই চাকরি পেয়েছিলেন তাঁরা ওই পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন করে নথিপত্র জমা করলে বিজেপির লিগাল সেল তাঁদের সহযোগিতা করবে। বুধবার বর্ধমানে জেলা বিজেপি কার্যালয় থেকে সেই পোর্টালের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন রাজ্যসভার সাংসদ তথা দলের রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। একইসঙ্গে এদিন একটি হেল্পলাইন নম্বরও চালু করা হয়েছে। ওই পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলে ফোন করে সহায়তা নেওয়া যাবে। পাশাপাশি, আইনি পরামর্শও পাওয়া যাবে।
শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "আমাদের প্রধানমন্ত্রী বর্ধমানের তালিতে এসে ঘোষণা করেছিলেন যারা যোগ্য চাকরি প্রাপক আছেন, যারা মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছেন বিজেপি সর্বতভাবে দল হিসেবে তাদের সঙ্গে থাকবে। আমরা আমাদের অবস্থান মানুষের সামনে স্পষ্ট করেছি। আমরা চাই যাঁরা যোগ্য ছিলেন তাঁদের মেধা যেন কোনওভাবেই প্রতারিত না হয়। তাঁরা যেন কোনওভাবেই তৃণমূল সরকারের চাকরি বিক্রির চক্রান্তের মাঝে তাদের ভবিষ্যত যেন নষ্ট হয়ে না যায়। তাদের সুরক্ষা দিতে তাদের সহযোগিতা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। তাই এই পোর্টাল চালু করা হয়েছে।"
[আরও পড়ুন: সন্দেশখালির নাম শুনেই শুভেন্দুর মুখে অশালীন শব্দ! তোপ তৃণমূলের]
বিজেপির আইটি বিশেষজ্ঞ জয় মল্লিক জানান, www.bjplegalsupport.org পোর্টালে যারা যোগ্য প্রার্থী তাঁরা রেজিস্ট্রেশন করে তথ্য জমা দিতে পারবেন। তিনি বলেন, "ইমেল আইডি, মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে তথ্য আপলোড করতে হবে। তা আমাদের লিগাল টিমের কাছে যাবে। তারা সেটা স্ক্রুটিনি করে দেখবেন। তারপর সেটাকে তারা এগিয়ে নিয়ে যাবেন।" এই কাজে কোনও সমস্যা হলে ৯১৫০০-৫৬৬১৮ হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে।
সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্ট প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল করেছিল। রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। মঙ্গলবার চাকরি বাতিলের নিয়োগে স্থগিতাদেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। শমীকবাবু জানান, মঙ্গলবার নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের অবস্থানের পর মুখ্যমন্ত্রী বলছেন দীর্ঘদিন পরে তিনি ভালো করে ঘুমোতে পারবেন। এখন প্রশ্ন হল, আইনি দীর্ঘসূত্রিতা কারা তৈরি করল। মুখ্যমন্ত্রী চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে যোগ্য শব্দটি মঙ্গলবার প্রথম ব্যবহার করেছেন। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্যতিক্রমী চাকরি প্রাপক শব্দ ব্যবহার করেছেন। এসএসসি অবস্থান পরিবর্তন করে তারা সুপ্রিম কোর্টে জানাল তারা যোগ্য অযোগ্যকে পৃথক করতে পারে। যদি এই অবস্থানটা হাই কোর্টে নেওয়া হতো তাহলে আজকে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না বলে জানান বিজেপি মুখপাত্র। তিনি দাবি করেন, এখন যেভাবে প্রচার চলছে তাতে মনে হচ্ছে সমস্ত বিষয় শেষ হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকার বিরাট স্বস্তি পেয়েছে। সংবাদ মাধ্যমেও সৌভাগ্যজনক বা দুর্ভাগ্যজনকভাবে বহুল প্রচারিত রাজ্য সরকারের স্বস্তি মিলল।
[আরও পড়ুন: নার্সিংহোমের ছাদে নাবালিকার দেহ, বিক্ষোভে উত্তাল বারাসত, ধর্ষণের পর প্রমাণ লোপাটে খুন?]
তাঁর প্রশ্ন, "কিসের স্বস্তি মিলল? রাজ্য সরকার তো মামলা করতে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে যাতে ক্যাবিনেটকে এই গোটা তদন্ত প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা যায়। রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে যাতে এই ক্যাবিনেট যারা সুপারঅ্যানুয়েশন করেছিল তাদের কাস্টডিয়ান ট্রায়াল না করা হয়, তাদের হেফাজতে নিয়ে কেউ যাতে কোনও তদন্ত না করে।" একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, রাজ্য সরকারের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করতে গিয়ে বলেছেন, ভোট চলাকলীন গোটা ক্যাবিনেট না কি জেলের মধ্যে থাকবে। এই আশঙ্কা রাজ্য সরকারের। তিনি বলেন, "এর সঙ্গে যোগ্য ও অযোগ্যের মধ্যে পৃথকীকরণের কোনও সম্পর্ক নেই। কীসের ভিত্তিতে এই বিভাজন হবে সেটাও অজানা। ওএমআর শিট কার কাছে আছে, মিরর ইমেজ কোথায় আছে, কেন আছে তার কোনও স্পষ্ট উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেক স্টেক হোল্ডারদের কথা সুপ্রিম কোর্টকে শুনতে হবে। তার জন্য অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ তাঁরা দিয়েছে এবং আগামী ১৬ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন।"
বিজেপির চাইছে, যারা যোগ্য চাকরি প্রাপক তারা স্বপদে বহাল থাকুন। তাদের সহযোগিতা দিতে রক্ষাকবচ দিতে বিজেপি বদ্ধপরিকর। বিজেপি সাংসদ বলেন, "রাজ্য সরকারের মূল উদ্দেশ্য ছিল যে কোনও মূল্যে সিবিআই তদন্ত বন্ধ করতে হবে, সিবিআই তদন্ত বন্ধ হয়নি। এসএসসি যাদের অযোগ্য বলে ঘোষণা করছে, যারা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ সেটা বহাল আছে। তাদের কার্যত মুচলেকা দিয়ে টাকা ফেরত দেবেন জানিয়ে চাকরি করতে পারবেন এটা বলা হয়েছে। এটার অর্থ হল, সামনের দরজা বন্ধ হলেও ক্যাবিনেটের ভিতরে যে কোনও দিন পাশ থেকে ঢুকে পড়তে পারে সেটা তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যাপার। আমরা মনে করি এটা একটা প্রাতিষ্ঠানিক ফ্রড, একটা দুর্নীতি। সুপ্রিমকোর্টও যেভাবে তাদের আক্রমণ করেছে সেটাও নজিরবিহীন।"
এদিন বিজেপি সাংসদ আরও অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকার সব বিভাগেই নিয়োগে দুর্নীতি করেছে। প্রাইমারিতে ৫৯ হাজার শিক্ষক নিয়োগের মামলা রাজশেখর মান্থার এজলাসে চলছে। যোগ্য অযোগ্য বাছাই করে জানায় তাহলে দীর্ঘসূত্রিতা কমবে। পাশাপাশি তিনি দাবি করেছেন, কাউকে বিভ্রান্ত করতে বা আতঙ্কিত করার উদ্দেশ্য বিজেপির নেই।