shono
Advertisement

শুভদৃষ্টি নয়, কীর্তনের সুরই মেলাল দুই দৃষ্টিহীনের হৃদয়কে

এই তো ভালবাসা! The post শুভদৃষ্টি নয়, কীর্তনের সুরই মেলাল দুই দৃষ্টিহীনের হৃদয়কে appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:37 AM Aug 02, 2018Updated: 10:54 AM Aug 02, 2018

গৌতম ব্রহ্ম:                         ‘ওহে নাগর বর শোনো হে মুরলীধর, নিবেদন করি তোমার পায়।

Advertisement

                                                        চরণ চিহ্ন আনি চাঁদ ফুলো গাথনী চাঁদ শোভা আমার গলায়।’

এভাবেই কীর্তনের সুরে একাকার হল দুই হৃদয়। পাকা দেখা, আশীর্বাদ, আইবুড়ো ভাত, গায়ে হলুদ- সবই হল পাঁজি মেনে। হল না শুধু শুভদৃষ্টি। কী করে হবে? পাত্র তারক, পাত্রী মন্দিরা- দুজনেই যে দৃষ্টিহীন! তাতে কি? কীর্তনের সুরে জেগে ওঠা হৃদস্পন্দনে দু’জন দু’জনের স্পর্শ পেল। ‘যদিদং হৃদয়ং তব, তদস্তু হৃদয়ং মম…’।

[হাওড়ায় লাইনচ্যুত ইস্পাত এক্সপ্রেস, চূড়ান্ত দুর্ভোগের কবলে দূরপাল্লার যাত্রীরা]

পশ্চিম মেদিনীপুরের মন্দিরা দাস। কৃষ্ণনগরের তারক মণ্ডল। জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন দু’জনেই। তাই কাছে এলেও কেউ কাউকে কোনওদিন দেখেনি। শুধু স্পর্শ পেয়েছেন মাত্র। সেই স্পর্শের  অধিকারেই সারা জীবন তাঁদের এক সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার। পথ চলা শুরু। আর সেই বাসরে জাগল জয়দেব- ‘ত্বমসি মম ভূষণং, ত্বমসি মম জীবনং, ত্বমসি মম ভবজলধিরত্নম’। সঙ্গে রইল কয়েক হাজার মানুষের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। যাঁরা নব দম্পতির মতোই জন্মান্ধ। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিখ্যাত খোলবাদক ও কীর্তন বিশেষজ্ঞ রবীন্দ্রভারতীর অধ্যাপক ড. গৌতম ভট্টাচার্য। জানিয়েছেন, “কীর্তন দু’টো হৃদয়কে মিলিয়ে দিল। এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে?” বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সাহানা বাজপেয়ীও শুভকামনা জানিয়েছেন নবদম্পতিকে। বলেছেন, “সুরেলা হোক ওদের দাম্পত্য। কীর্তন ও লোকসুরের মাদকতা সাঙ্ঘাতিক। যে মজে সেই জানে।”

বাবা-মাকে হারিয়ে মাত্র তিন বছর বয়সেই অনাথ হয়েছিলেন মন্দিরা। আত্মীয়দের দয়ায় কোনওমতে কৈশোরের গণ্ডিটুকু পেরনো। পেট চালাতে একটা সময় নাম লিখিয়েছিলেন কীর্তনের দলে। কন্যার গানের গলাটি ভারি ভাল। ভাবও চমৎকার। তাই অনেক হরিসভাতেই ডাক পড়ত। কিন্তু কীর্তন গেয়ে পেট ভরত না। তার উপর ছিল নিরাপত্তাজনিত সমস্যা। সুযোগ সন্ধানীদের কুনজর। বড় কঠিন সে লড়াই! একদিকে দারিদ্র। অন্যদিকে নিজের অন্ধত্ব। দিশেহারা মন্দিরা একটা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছিল। অবশেষে বছর ছয়েক আগে বেহালার ‘ভয়েস অফ ওয়ার্ল্ড’-এর খবর পায় মন্দিরা। সংস্থার সম্পাদক শৈবাল গুহ জানালেন, কর্ণধার গার্গী গুপ্ত সাদরে মন্দিরাকে বুকে টেনে নেন। শুরু হয় নতুন জীবন। একদিকে পড়াশোনা। অন্যদিকে কীর্তনের তালিম। বছর ছাব্বিশের মন্দিরা এখন মথুরাপুর কাশীনগর হাই স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়েন। বুধবার গোধূলিলগ্নে কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা তারক মণ্ডলের সঙ্গে বিয়ে হল তাঁর। তারকও জন্মান্ধ। তবে মন্দিরার ভরণপোষণে সক্ষম। চাকরি করেন তিনি। পড়াশোনার ফাঁকেই ভক্তিমূলক গানের অনুষ্ঠান করতেন মন্দিরা। সেই গান শুনেই তারকের মনে ঝড় ওঠে। মন্দিরাকে প্রেম নিবেদন করে। মন্দিরা অবশ্য জানিয়ে দেয়, গার্গীদির অনুমতি ছাড়া বিয়ে সম্ভব নয়।

মাস তিনেক আগে হঠাৎই গার্গীদেবীর কাছে নিজের ভালবাসার কথা জানান মন্দিরা। তারকের বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলেন ভিওডব্লু-র কর্তারা। তারপরই জোর কদমে শুরু হয় বিয়ের প্রস্তুতি। তত্ত্ব সাজানো থেকে মণ্ডপ সজ্জা সবই করেছেন মন্দিরার সহ-আবাসিকরা। যাঁদের বেশিরভাগই দৃষ্টিহীন।

[শহরে ব্যাংক জালিয়াতির বাড়বাড়ন্ত, সিট গঠন করে তদন্ত লালবাজারের]

The post শুভদৃষ্টি নয়, কীর্তনের সুরই মেলাল দুই দৃষ্টিহীনের হৃদয়কে appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement