সুকুমার সরকার, ঢাকা: নির্বাচন বয়কট। গত কয়েকমাস ধরে আন্দোলন অবরোধ। ভোটপ্রক্রিয়া রুখে দেওয়ার কোনও প্রয়াসই কাজে আসেনি বিএনপির। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন পেয়েছেন শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার টানা চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন তিনি। আর এদিনই ঢাকার কার্যালয়ে তালা ভেঙে প্রবেশ করলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। মনে করা হচ্ছে, হাসিনার শপথের দিনই অস্তিত্ব প্রমাণে মরিয়া চেষ্টা করছে বিএনপি। অন্যদিকে এদিনই পাঁচ মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসার পর আজই বিকেলে বাড়ি ফিরেছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভির নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। সেখানে প্রবেশ করার সময় নেতা-কর্মীরা সরকার বিরোধী নানা শ্লোগানও দেন। দলের প্রধান কার্যালয় ঢোকা প্রসঙ্গে রিজভি বলেন, “গত ২৮ অক্টোবর আমাদের যুবদলের একজন নেতা ও একজন প্রবীণ সাংবাদিককে হত্যার মধ্য দিয়ে সরকার এক ভয়াবহ নিপীড়ন শুরু করে। ওইদিন বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ পণ্ড করে পুলিশ এক নারকীয় তাণ্ডব চালায়। নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেয়। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে পুলিশ কাউকে এখানে ঢুকতে দেয়নি এবং আশপাশে ভিড় দেখলেও তাদেরকেও আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ নিয়ে যৌথভাবে কাজ করবে চিন, হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বললেন জিনপিং]
রিজভি আরও বলেন, “দেশের একটি নিয়মতান্ত্রিক কার্যকর রাজনৈতিক দল বিএনপি। এই দল বার বার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে। সেই দলের প্রধান কার্যালয় একটি মাফিয়া সরকার বন্ধ করে রেখেছে। সুতরাং পুলিশ চাবি না দেওয়াতে তালা ভেঙে আমরা ঢুকেছি। আপনারা দেখেছেন পুরো কার্যালয়ে কি ভয়ংকর ধুলোবালি জমেছে। এটা এখন আমাদের পরিষ্কার করতে হবে।” গতকাল বুধবার বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হবে। সেখানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও সেলিমা রহমানের থাকার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রথম থেকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং জামাত জোট ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল। হরতাল, অবরোধ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া বিরোধীদের কিছুতেই নির্বাচনে টেনে আনতে পারেননি শেখ হাসিনা। শেষে তাদের বাদ দিয়েই ভোট হয়েছে। বাধ্য হয়ে নয়া কৌশল হিসাবে দলেরই প্রায় শতাধিক হেভিওয়েট নেতাকে ‘ডামি’প্রার্থী করে নির্দল পরিচয় দিয়ে মাঠে নামিয়েছিলেন আওয়ামি লিগ সভানেত্রী।
[আরও পড়ুন: ‘ষড়যন্ত্র ছিল, ষড়যন্ত্র অব্যাহত’, ভোটের পরও সাংসদদের সতর্ক থাকতে বললেন হাসিনা]
ভোটের ফলাফল অনুযায়ী, ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২২টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামি লিগ। ক্ষমতাসীনদের পর সবচেয়ে বেশি জয় পেয়েছেন নির্দল প্রার্থীরা–৬২টি আসনে। বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল, এরশাদের জাতীয় পার্টি জয়ী হয়েছে ১১টি আসনে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয় পেয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল। তাহলে বিরোধী দলের মর্যাদা কে পাবে? মাত্র ১১টি আসন নিয়ে কি বাংলাদেশের ৩৫০ আসনের সংসদে বিরোধী দল হতে পারবে এরশাদের দল? কী হবে বিরোধী দলের ভবিষ্যৎ? উঠছে এইরকম নানা প্রশ্ন।