ধীমান রায়, কাটোয়া: পড়ে গিয়ে জখম কিশোরকে 'মৃত' ঘোষণা করে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল হাসপাতাল থেকে। সেই 'মৃত' কিশোরের দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর আবার 'বেঁচে' ওঠে বলে পরিবারের দাবি। যদিও ফের হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকরা আবারও জানিয়ে দেন আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। রবিবার পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে মৃত কিশোরের 'বেঁচে' ওঠার ঘটনা ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড।
মৃতের পরিবার, আত্মীয়স্বজন থেকে প্রতিবেশীরা হাসপাতালে জড়ো হয়ে তুমুল বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভের ঘটনায় হাসপাতাল চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পরিবারের দাবি বেঁচে থাকা অবস্থাতেও তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা হলে বেঁচে যেত ওই কিশোর। যদিও চিকিৎসকদের দাবি, ওই কিশোর আগেই মারা গিয়েছিল। মৃত্যুর পর শরীরের মাংসপেশীর পরিবর্তনের কারণে নড়াচড়া করছে বলে মনে হয়। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলে 'রাইগর মর্টিস'।
[আরও পড়ুন: ‘লজ্জা হওয়া উচিত’, শ্লীলতাহানি ইস্যুতে রাজ্যপালকে CCTV ফুটেজ চ্যালেঞ্জ অভিষেকের]
মৃত কিশোর কাটোয়া শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার টালিখোলা চৌরঙ্গী মোড় এলাকার বাসিন্দা দীপ সাহা ১৫)। বাবা কৃষ্ণপদ সাহা ও মা সুমিত্রাদেবী। দুই ছেলের মধ্যে ছোট দীপ কাটোয়া ভারতীভবন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকালে বাড়ির ছাদে পোষা বিড়াল নিয়ে খেলা করছিল দীপ। বিড়ালটিকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হঠাৎ পড়ে যায়। পড়ে গিয়েই জ্ঞান হারিয়েছিল। তড়িঘড়ি তাকে পরিবারের লোকজন কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
মৃতের দাদা চন্দন সাহা বলেন, "দীপকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার পর চিকিৎসকরা জানান মারা গিয়েছে। আমরা বাড়ি নিয়ে চলে যাই। যখন ভাইকে শোয়ানো অবস্থায় সবাই কান্নাকাটি করছিল তখন হাত-পা নড়ে ওঠে। চোখ কিছুটা খুলেও যায়। এক মুহূর্ত দেরি না করে আবারও হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিছুক্ষণ পরীক্ষা করার পর চিকিৎসকরা জানান মৃত্যু হয়েছে। আমাদের ধারণা, যদি প্রথম দফায় ঠিকমতো চিকিৎসা হত তাহলে ভাই বেঁচে যেত।"
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্তব্যরত চিকিৎসকরা প্রথমে পরিবারের লোকজনদের মৃতদেহের ময়নাতদন্তের কথা বলেছিলেন। কিন্তু হাসপাতালে অপেক্ষা না করে কিশোরের মৃতদেহ আবার বাড়িতে নিয়ে চলে যাওয়া হয়। মৃতদেহ বাড়িতে রেখে কান্নাকাটির সময় মৃত কিশোর আবার নড়াচড়া করে ওঠে বলে পরিবারের দাবি। ওই ঘটনার জেরে এদিন প্রচুর লোকজন হাসপাতালে জড়ো হয়ে যায়। তুমুল বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বেশ কিছুক্ষণ মৃতদেহটি পর্যবেক্ষণে রেখে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
কাটোয়া হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার সুশান্তবরণ দত্ত বলেন, "ওই কিশোরকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল। আমাদের চিকিৎসকরা তার পালস, হার্টবিট এসব যথাযথভাবে পরীক্ষা করে দেখেন। আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। বাড়ির লোকজন ময়নাতদন্ত না করে দেহ নিয়ে চলে যান। আবার মৃতদেহ নিয়ে এসে দাবি করেন কিশোর নাকি বেঁচে ছিল। আসলে মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে মৃতদেহের মাংসপেশীর পরিবর্তন হতে শুরু করে। তখন পেশিতে টান পড়ে নড়াচড়া করছে বলে মনে হয়। এটা 'রাইগর মর্টিস' বলে। বাস্তবে কিন্তু দেহে তখন প্রাণ থাকে না।"