অভিরূপ দাস: পরোপকারী। এলাকার লোক তাঁকে এই হিসাবেই জানত। খবরের কাগজে অঙ্গদানের (Organ donation) খবর পড়ে স্বপ্ন দেখতেন, মৃত্যুর পর তাঁর দেহও অন্যের কাজে আসবে। সেই স্বপ্নই সত্যি করলেন বাড়ির লোকরা। শুক্রবার বাইপাসের ফর্টিস হাসপাতালে বছরের প্রথম অঙ্গদান হল বেলঘরিয়ার সুদীপ্তা দত্তর (৫৪)। ব্রেন ডেথের পর মায়ের অঙ্গে প্রাণ ফিরবে তিনজনের। চোখ ছলছল করছে ছেলে সুরজিতের।
স্বামী রণজিৎ দত্ত পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত। সুদীপ্তাও যুক্ত ছিলেন ওই ব্যবসায়। একমাত্র ছেলে সুরজিৎ জানিয়েছেন, গত বুধবার তিনি ও বাবা বাইরে ছিলেন। বাড়িতেই মারাত্মক স্ট্রোক হয় মায়ের। বাড়ি ফিরে তাঁরা দেখেন, বসার ঘরে নিথর হয়ে পড়ে আছেন সুদীপ্তা। তড়িঘড়ি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। রক্তচাপ একেবারে তলানিতে। যে বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি ছিলেন, অভিযোগ, সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা মিলছিল না। পরের দিন বৃহস্পতিবার সুদীপ্তাকে ফর্টিস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা রোগিণীকে পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, আশা নেই। চিকিৎসকরা বলেন, রোগীকে দেখেই আমাদের সন্দেহ হয়, ব্রেন ডেথ হয়ে গিয়েছে। তবে তা নিশ্চিত হতে একটি টেস্ট করা প্রয়োজন ছিল। চিকিৎসা পরিভাষায় তাকে অ্যাপনিয়া টেস্ট বলে।
[আরও পড়ুন: ‘এত প্রকল্পের অর্থ আসবে কোথা থেকে?’, বাজেট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ বিরোধীদের ]
শুক্রবার সকালে সেই অ্যাপনিয়া টেস্ট করে ব্রেন ডেথ সম্পর্কে নিশ্চিত হন চিকিৎসকরা। ছেলে সুরজিতের কথায়, “মা তো এটাই চাইত। বাবাকেও বললাম, মা যখন আর ফিরবেই না, তখন মায়ের অঙ্গগুলো দিয়ে আমরা মায়ের স্বপ্নপূরণ করি।” সুদীপ্তার কিডনি দু’টি গিয়েছে (Kidney transplantation) এসএসকেএম ও অ্যাপোলোয়। দুই রোগীর দেহে তা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। মুশকিল হয় মৃতার লিভার নিয়ে। সুদীপ্তার ব্লাড গ্রুপ এবি-পজিটিভ। ওই গ্রুপের লিভার গ্রহীতার (Liver transplantation) খোঁজ মেলেনি বাংলায়।
তন্নতন্ন করে খোঁজাখুঁজির পর দিল্লির ইনস্টিটিউট অফ লিভার অ্যান্ড বিলিয়ারি ডিজিজেস হাসপাতালে একজনের খোঁজ মেলে। বিকেলেই গ্রিন করিডর করে কলকাতা থেকে বিমানে দিল্লি পৌঁছে যায় সুদীপ্তার লিভার। আনলক পর্বে ১৫৩৪ কিলোমিটার দূরে লিভার যাত্রার নজিরও এই প্রথম। রিজিওনাল অর্গ্যান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্ল্যান্ট অর্গানাইজেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লিতে সুদীপ্তার লিভারটি দু’টি অংশে ভাগ করে দুই গ্রহীতাকে দেওয়া হবে।