কাঁপু্নি! হাত-পা ঠান্ডা! শীতের তীব্রতার কাছে উষ্ণ অনুভূতি বিরল। সোয়েটার-টুপি-কম্বলের চেয়েও আরামদায়ক হতে পারে একটু ব্র্যান্ডি। অ্যালকোহল হলেও এর স্বাস্থ্যগুণ তুলনায় বেশি। তবে বুঝে পান জরুরি। ব্র্যান্ডিপানের খোঁজখবর দিলেন সুমিত রায়।
কনকনে ঠান্ডা ঠেকাতে শীতের পোশাক খুবই নগণ্য ভূমিকা পালন করে। কটা পরবেন! যতই চাপান না কেন ঠান্ডার তীব্রতার কাছে এগুলো হার মেনে যায়। তাই রোদ পোহানো থেকে আগুন জ্বালান- এই সব পথ অবলম্বন করে শরীর গরম করেন অনেকেই। তবে রাতে কিংবা ঘরের ভিতর সব করেও জবুথবু কাটে না। তাই এমন অসহ্য ঠান্ডায় অনেকেই অ্যালকোহলিক হয়ে পড়ে। মদ খেয়ে শরীর গরম রাখার চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে ডক্টরস ব্র্যান্ডি সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর।
[আরও পড়ুন: বাড়ছে মানসিক অবসাদ, মুক্তি দিতে ‘মনের মেলা’র আয়োজন এসএসকেএমে]
ব্র্যান্ডি কি মদ নয়?
– প্রথম ধাপেই এটা জেনে নেওয়া দরকার যে ব্রান্ডিতে অ্যালকোহল থাকলেও তাকে মদ হিসাবে গণ্য করা যায় না। কারণ অনেক ওষুধেও অ্যালকোহল উপস্থিত থাকে। কিন্তু সেগুলো কি মদ? মদের দোকানে যে মদ পাওয়া যায় যেমন হুইস্কি, বিয়ার, ওয়াইন, রাম, ভদকা, ইত্যাদি তার সঙ্গে ব্রান্ডিকে গোলালে চলবে না। যদিও ওয়াইন ও ব্র্যান্ডি দু’টিই আঙুর থেকে বানানো হয়।
ওয়াইন আঙুর গেঁজিয়ে বানানো হয় আর ব্র্যান্ডি ওয়াইন কে ডিস্টিল বা বিশুদ্ধ করে বানানো হয়। এক্ষেত্রে আগুনের তাপে ওয়াইনকে বিশুদ্ধ করে ব্র্যান্ডি তৈরি হয়। ব্র্যান্ডিতে অ্যালকোহলের মাত্রা বেশি থাকে অন্যান্য মদের তুলনায়। স্বাস্থ্যকর কারণ এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের উপকারী ফল যেমন- আঙুর, আপেল ইত্যাদি গেঁজিয়ে তৈরি করা হয়। অন্যান্য মদ যেহেতু বিভিন্ন ধানশস্য গেঁজিয়ে তৈরি করা হয় তাই ক্ষতিকর হতে পারে।
শীতে কেন স্বাস্থ্যকর ব্র্যান্ডি?
– শরীর গরম করে, শীতকালে পরিমিত মাপে ব্র্যান্ডি খেলে ঠান্ডা লাগে না। শরীর গরম থাকে। ব্র্যান্ডি শরীরে প্রবেশ করে প্রক্রিয়া ঘটায়। যার ফলে রক্ত ধমনীগুলি প্রসারিত হয়ে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। এই কারণে শরীরের গরম জায়গা থেকে রক্ত ব্লাড ক্যাপিলারি বা শিরার মাধ্যমে আমাদের ত্বকের কাছে পৌঁছে যায়। ফলে গরম অনুভূত হয়।
– শ্লেষা দূর করে – ব্র্যান্ডি অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণসম্পন্ন। প্রাচীন কাল থেকে তাই ওষুধ বলে গণ্য করা হয়। তাই সর্দি, কাশি, হাঁপানি কমানোর জন্য এটা অতীতকাল থেকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। শীতে যেহেতু ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রকোপ বেশি থাকে তাই ঠান্ডা লাগেও বেশি। শ্লেষা কমার সঙ্গে অ্যালকোহল শরীরে প্রবেশকারী ব্যাকটিরিয়াগুলিকে নাশ করে। ব্র্যান্ডি হাঁপানির সমস্যা কমাতেও বেশি কার্যকরী।
– রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- ব্র্যান্ডিতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সংক্রমণ রোধ করে।
– হার্ট ভাল রাখে- গবেষণা বলছে হার্টের রোগীদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা শীতকালে বেশি। বয়স্কদের রিস্ক আরও বেশি। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় ব্র্যান্ডি হার্টে থাকা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এর ফলে হার্টে ব্লকেজ (plaque) হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়া পলিফেনোলিক জাতীয় যে দ্রব্য ব্রান্ডিতে উপস্থিত থাকে সেটা ‘এন এফ- কাপ্পা বিটা (NF-kB)’ নামক একটি জিনকে দমন করে হার্টে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ রোধ করে। রক্তনালিগুলি চাপ কমিয়ে দেয়। এর ফলে রক্তচাপ কমে এবং স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।
– ভাল ঘুম হয়ে- শীতকালে অনেকেই ঠান্ডায় এত কাতর হয়ে পড়েন যে, রাতে ঘুমানো দুষ্কর হয়ে যায়। বয়স্করা বেশি কষ্ট পান। পরিমিত মাপে ব্র্যান্ডি খেলে শরীর ও মন শান্ত হয়ে যায় এবং একটা হালকা গরম ভাব আসে যার ফলে গভীর অথচ ভাল ঘুম হয়।
[আরও পড়ুন: এবার আয়ুর্বেদেও হবে প্লাস্টিক সার্জারি, আয়ুশ মন্ত্রকের টুইটে জল্পনা]
উপকার অনেক
– অ্যান্টি এজিং- ব্র্যান্ডি তৈরি করার সময় তা তামার পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়। তাই ব্র্যান্ডিতে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের মাত্রা বেশি থাকে। ফলে এর অ্যান্টি এজিং গুণও অনেক বেশি। ব্র্যান্ডি সেবনে ত্বক কুঁচকে যায় না বা বয়সের বলিরেখা পড়ে না, চুল ভাল থাকে, দৃষ্টিশক্তি ভাল হয়। শুধু তাই না এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি রাডিক্যালের প্রকোপ রোধ করে। ফলে মস্তিষ্কসহ অন্যান্য অঙ্গের ডিএনএ-র ক্ষয় আটকায়। স্মৃতিশক্তিও ভাল থাকে।
– ক্যানসার প্রতিহত করে- ব্র্যান্ডিতে ইলাজিক অ্যাসিড নামের একটি মিশ্রপদার্থ থাকে যা শরীরের ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি এবং বিস্তার আটকায়। মূলত ব্লাডার এবং ওভারিয়ান ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের ব্র্যান্ডি অসুখ প্রশমিত করতে সাহায্য করে।
– ওজন ঠিক রাখতে- অন্যান্য মদের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায় যেহেতু ব্র্যান্ডি খাদ্যশস্য দিয়ে তৈরি হয়না, এতে কার্বোহাইড্রেট কম পরিমাণে থাকে। ফলে ব্র্যান্ডি খেলে সেটা ফ্যাট হিসেবে শরীরে জমে না। এছাড়া ব্র্যান্ডি শরীরের মেটাবলিজম বা পরিপাক ক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়। ফলে মেদ জমার সম্ভাবনাও কমে।
বুঝে পান করুন
– ব্র্যান্ডি কোনও ওষুধ নয়, তবে স্বাস্থ্যগুণ বেশি বলে খেলে ক্ষতি কম। তবে কখনও বেশি নয়।
– রাতে একবারের বেশি ব্র্যান্ডি নয়। এতে অ্যালকোহল বেশি থাকার জন্য কম খেলেই সব গুণ মেলে।
– অতিরিক্ত সেবনে ব্র্যান্ডিও শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
– আপনার যদি আসক্তির প্রবণতা থাকে বা লিভারের সমস্যা থাকে ব্র্যান্ডি বাদ।
The post শীতে আপনাকে উষ্ণ রাখতে পারে একচুমুক ব্র্যান্ডি, তবে বুঝে পান জরুরি appeared first on Sangbad Pratidin.