নন্দন দত্ত, সিউড়ি: বোন বিজেপির প্রার্থী। অথচ তাঁর দাদা তৃণমূলের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়ী করার দাবি জানালেন। যাকে ঘিরে সাঁইথিয়া পুর রাজনীতিতে আলোচনায় উঠে এলেন দাদা-বোনের লড়াই।
সাঁইথিয়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তন্ময় সাহা, তাঁর মেজো বোন পিয়া সাহা। যিনি বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী। দাদা আবার সাঁইথিয়ায় তাঁর নিজের ওয়ার্ডে তৃণমূলের বুথ সভাপতি। যদিও নিজের কেন্দ্র ৪২ নম্বর আসনে তৃণমূলের প্রার্থী শতাব্দী রায়কে জয়ী করার জন্য শুক্রবার রাতে পাড়ার এক বৈঠকে ডাক দেন তন্ময়বাবু। কিন্তু বোলপুর কেন্দ্রে বোন পিয়া সাহাকে পরাজয়ের বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। একই পরিবারে দাদা-বোন দুজনে দুই মেরুর বাসিন্দা হওয়ায় বীরভূমের ভোট জমে উঠেছে।
[আরও পড়ুন: ভোটের মুখে সৌজন্যের নজির, জখম তৃণমূল কর্মীকে দেখতে হাসপাতালে দিলীপ]
আলোচনা শুরু হল শুক্রবারে সাঁইথিয়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি পাড়া বৈঠকে। সেখানে বিধায়ন নীলাবতী সাহা, পুরপ্রধান বিপ্লব দত্ত, শহর সভাপতি দেবাশিস সাহা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মায়া সাহা-সহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য ওই ৯ নম্বর ওয়ার্ডেই ফৈজুল্লাবাদ এলাকায় পেশায় শিক্ষক তন্ময়বাবুর বাড়ি। এবং একই ওয়ার্ডে মনসাতলায় শ্বশুর বাড়িতে থাকেন পিয়া সাহা। নিজের পাড়ার বৈঠকে তন্ময়বাবু বুথ সভাপতি হিসাবে তৃণমূলকে জয়ী করার ডাক দেন। শহর সভাপতি দেবাশিস সাহা বলেন, "অনেকে বলছিলেন, বোন লোকসভার প্রার্থী সেখানে দাদা কী করে তৃণমূলের হয়ে ভোট চাইবে। আজ প্রমাণ হল, পরিবার পরিবারের জায়গায়। বোন বোনের মতন, কিন্তু সবাইকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে ভোটের দাবি জানাচ্ছেন দাদা’।
এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, পিয়া সাহার পরিবারে কেউ রাজনীতির ত্রিসীমানায় ছিলেন না। ২০১৫ সালের পুরসভা ভোটে বিজেপির প্রতীকে পিয়া সাহা-সহ ঝুম্পা পাল ও মুক্তি বসাক জয়ী হওয়ার পরে তাঁদের পরিবার রাজনৈতিক সচেতন হয়। পিয়াদেবী স্বামী মন্টু চৌধুরী বিজেপি করলেও শ্বশুরবাড়িতে তাঁর চর্চা ছিল না। দাদা তন্ময় শিক্ষক, ভাই কৌশিক এখনও নিপাট ওষুধ ব্যবসায়ী। কিন্তু পট পরিবর্তন হল ২০২১ সালে সাঁইথিয়া বিধানসভায় পিয়া সাহা বিজেপির প্রার্থী হতেই। পিয়াদেবীর দাবি "সে সময় রাজ্য পুলিশ ভোটের আগে স্বামী, ভাসুর ও তাঁকে শ্লীলতাহানির মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকে রাখতে চেয়েছিল। ভাসুর পল্টু চৌধুরীকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটতে হয়। আমাকে তৃণমূলে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু আমি নতি স্বীকার করনি। দাদা খানিকটা হলে বাধ্য হয়েই ভোট পরবর্তী হিংসায় অত্যাচারের ভয়ে তৃণমূলে যেতে বাধ্য হয়েছে।" তবে এ বিষয়ে তন্ময়বাবু কিছু বলেননি।
[আরও পড়ুন: প্রচারে বেরিয়ে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান, অধীরের পর বিক্ষোভের মুখে মুর্শিদাবাদের বিজেপি প্রার্থী]
তাঁদের বাবা অমরনাথ সাহা, মা কৃষ্ণা সাহা জানান, "বাইরে কে কী করে তা তাঁদের নিজের মতন। দুই ভাই-বোনের কোনও মনোমালিন্য নেই। সম্পর্কের অবনতি নেই। দুজনে নিজেদের রাজনীতি নিয়ে কেউ আলোচনা করে না।" কিন্তু তাঁরা কাকে ভোট দেন। সে ব্যাপারে বাবা-মা মুখ খুলতে নারাজ। তবে পিয়া বলেন, "একই ওয়ার্ডে দাদার দলকে গত বিধানসভায় ৩০০ ভোটের বেশি ব্যবধানে পরাজিত করেছিলাম। সেখান থেকেই বোঝা যায় এলাকায় কাদের দাপট বেশি।" তবে দাদা-বোন কেউ কাউকে দোষারোপ করেনি। রাজনীতির খেলা ঘরেই বাইরে রেখেই তারা সম্পর্ক রাখেন বলে জানান। দুই ভাইয়ের একমাত্র আদুরে বোন বলতে তাঁদের স্নেহ ঝরে পরে। অন্যদিকে দাদার প্রতি শ্রদ্ধায় পিয়ার মাথা নত হয়।