সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বছরের পর বছর ধরে বেআইনি নির্মাণ। গার্ডেনরিচের (Garden Reach) ঘিঞ্জি এলাকায় গড়ে উঠেছে একের পর এক বহুতল। তার আশেপাশে অজস্র বসতি এলাকা। এসব বহুতল ভেঙে পড়লে সবার আগে বিপদের মুখে পড়েন বসতিবাসী। ঠিক যেমনটা ঘটল গার্ডেনরিচের ফতেপুর ব্যানার্জি বাগান লেনে। রবিবার মাঝরাতে এখানে একটি নির্মীয়মাণ বহুতল ভাঙার (Collapsed) পর বসতির টালির ছাদ ভেঙে অন্তত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও ধ্বংসস্তূপে আটকে বেশ কয়েকজন। NDRF, পুলিশ, দমকল সকলে মিলে অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। রাতভর সেখানে দাঁড়িয়ে উদ্ধারকাজের তদারকি করেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সোমবার সকালেই দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) নিজে। তিনি জানান, ঘিঞ্জি এলাকায় বেআইনি নির্মাণের জন্য এই দুর্ঘটনা। সেখানে দাঁড়িয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তার পরই তৎপরতা বাড়ে পুলিশ প্রশাসনের। ইতিমধ্যে প্রোমোটারদের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার নাম মহম্মদ ওয়াসিম বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে।
মেয়র ফিরহাদ হাকিম স্পষ্টই জানিয়েছিলেন যে এই বহুতলটি নির্মাণের অনুমতি ছিল না। যে বা যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এফআইআর দায়ের করেছিল পুরসভা। মুখ্যমন্ত্রীও ঘটনাস্থলে গিয়ে একই বার্তা দেন। বলেন, ”এই এলাকা অত্যন্ত ঘিঞ্জি। এগুলো একদিনে তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে তৈরি হয়েছে। আমি সবটা ঘুরে দেখেছি। আমাদের পুলিশ টিম, মন্ত্রীরা সকলেই কাজ করেছে সারারাত। আমি মেয়রকে জিজ্ঞেস করছিলাম, এই বহুতল নির্মাণের অনুমতি ছিল কি না। ও জানাল, না ছিল না। বেআইনিভাবে নির্মাণ হচ্ছিল। সেই কারণেই এটা ঘটল। আশেপাশের মানুষজনের বসতির দিকে খেয়াল রাখা হয়নি। আমি অত্যন্ত দুঃখিত। আমি বলছি, বেআইনি নির্মাণের জন্য এই ঘটনা ঘটল। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কড়া অ্যাকশন নেওয়া হোক।” সেইমতোই এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হল।
[আরও পড়ুন: শুভেন্দুকে ভোট প্রচারে অনুমতি নয়! ‘খলিস্তানি’ মন্তব্যের প্রতিবাদে কমিশনে চিঠি শিখ সংগঠনের]
এখনও গার্ডেনরিচের ফতেপুর ব্যানার্জি বাগান লেনের ভেঙে পড়া বহুতলের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজ চলছে। নিচে যাঁরা আটকে, তাঁদের স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস বজায় রাখতে জল ও অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। তারই মধ্যে দুঃসংবাদ, ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া ৪ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। আর কোনও প্রাণহানি রুখতে উদ্ধারকারী দল দ্রুততার সঙ্গে কাজ চালাচ্ছে।
দুর্ঘটনা নিয়ে এলাকাবাসী অভিযোগ, এখানে একসময়ে পুকুর ছিল। সেসব বুজিয়ে একের পর এক বহুতল নির্মিত হওয়ার ফলেই এমন বিপদ। আর তদন্তে নেমে পুলিশ প্রাথমিকভাবে যা জানতে পেরেছে, তাও যথেষ্ট উদ্বেগের। পুরসভা সূত্রে খবর, ওই বহুতলটির দোতলা পর্যন্ত নির্মাণের অনুমতি ছিল। বাকি তলাগুলির জন্য অনুমোদন দেয়নি পুরসভা। তা সত্ত্বেও প্রোমোটাররা ওই বহুতল তৈরি করছিলেন বলে অভিযোগ। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ভোটে ‘অশান্তি’র অভিযোগ জানাতে চালু রাজভবনের পোর্টাল, সন্দেশখালির জন্যও বিশেষ পদক্ষেপ]
এনিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) অবশ্য দুষলেন বাম আমলকেই। তাঁর কথায়, ”বাম আমল থেকেই এখানে এবং কলকাতার আরও কয়েকটি জায়গায় বেআইনিভাবে বহুতল নির্মিত হয়েছে। তখন প্রোমোটাররা বলতেন যে অনুমোদনের জন্য বিএলআরও অফিসে যেতে যেতে চটি ক্ষয়ে যায়। তাই নিজেরাই ঝুঁকি নিয়ে তা তৈরি করেন। আমরা আসার পর ঠিকাদারদের সিন্ডিকেট কমেছে অনেকটাই। ই টেন্ডারে কাজ হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখানে বেআইনি নির্মাণ হয়েছে।” আর তাতেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন। এতদিন ধরে পুরসভার নাকের ডগায় কীভাবে বেআইনি নির্মাণ হল? কেউ কি তা টেরও পেলেন না?