অর্ণব আইচ: জঙ্গি সদস্য নিয়োগের রাস্তা ‘ইমো’। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের উপায় সেই ‘ইমো’ই। এই ‘ইমো’র মাধ্যমেই ছড়িয়ে দেওয়া হত লস্করের হাফিজ সইদ, জইশের মাসুদ আজহারের ভিডিও। পাঠানো হত জেহাদি বইয়ের ছবি। মঙ্গলবার ধৃত চারজন আইএস অনুগামী তথা নব্য জেএমবি জঙ্গি সংগঠনের সদস্যকে জেরা করে, এই তথ্যই এসেছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর হাতে।
[ আরও পড়ুন: কাটমানি ইস্যুতে এবার ‘মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি চলো’ কর্মসূচির পরিকল্পনা বিজেপির]
এক গোয়েন্দা আধিকারিক জানান, চার জঙ্গির মোবাইল ঘেঁটেই ‘ইমো’ নামে ওই সোশ্যাল মিডিয়ার হদিশ মেলে। বাংলাদেশে এই ‘ইমো’ সোশ্যাল নেটওয়ার্কটি বেশ জনপ্রিয়। বীরভূমের বাসিন্দা রবিউলের ‘ইমো’ ঘেঁটে গোয়েন্দারা দেখেন, সে জেলায় বসেই বাংলাদেশের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি জঙ্গি মামুনার রশিদ, আলামিন ও মহসিনের ‘ইমো’ অ্যাকাউন্টও। ওই তিন বাংলাদেশি জঙ্গি চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে কাদের সাহায্য নিয়ে এই রাজ্যে অনুপ্রবেশ করল, তা জানতে চাইছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন বিএসএফ গোয়েন্দারাও। এর পিছনে যে এজেন্টরা রয়েছে, তাদের সন্ধান চলাচ্ছেন তাঁরা। ধৃত চার জঙ্গির মোবাইল থেকেই প্রচুর যুবক ও তরুণের অ্যাকাউন্টের সন্ধান মিলেছে। তাদের বেশ কিছু জেহাদি ভিডিও পাঠিয়েছে জঙ্গিরা। সেই ভিডিওগুলিতে রয়েছে লস্কর-ই-তইবার নেতা হাফিজ সঈদ, জইশ-ই-মহম্মদের নেতা মাসুদ আজহার ও আইএস জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের ভাষণ। জেহাদি বইয়ের পাতার পর পাতা ছবি তুলে পাঠানো হয়েছে তাদের। কেন জঙ্গি হতে হবে ও দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে, তা স্পষ্ট ভাবেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু জেহাদি নথিতে। ওই নথিগুলিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস যুদ্ধ করবে। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ এবং অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ডের কিছুটা অংশ নিয়ে তৈরি হবে ‘হিন্দ’। এক ‘খলিফা’ তাঁর শাসন চালাবেন ওই বৃহত্তর বাংলাদেশে। সেখানে চলবে জঙ্গিদেরই শাসন।
[ আরও পড়ুন: সমন্বয়ের অভাব, গ্রিন করিডর সত্বেও কলকাতায় যানজটে ফেঁসে রোগী ]
গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, বাংলাদেশ ও এই রাজ্যের কয়েকটি জেলার বহু যুবক ও তরুণকে বেছে নিয়েছে জঙ্গিরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের পাঠানো হচ্ছে এই মেসেজগুলি। তাদের মধ্যে থেকেই জঙ্গি সদস্য নিয়োগের চেষ্টা করছে আইএস ও নব্য জেএমবি। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ধৃত চারজনকে জেরা করে ও তাদের সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই জানার চেষ্টা হচ্ছে এই রাজ্যে আইএস তথা নিউ জেএমবি কোনও ‘আমির’ নিয়োগ করেছে কি না। যে জঙ্গি নেতার সঙ্গে বৈঠক করতে এই জঙ্গিরা কলকাতায় আসছিল, সেই নেতার পরিচয়ও জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা। এর আগেও গোয়েন্দারা দেখেছিলেন, জামাত—উল—মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর নেতা সালাউদ্দিন বা কওসররা মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান-সহ বেশ কিছু জায়গায় যুবকদের মগজধোলাই করেছিল। দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইয়ের কাছে একটি জায়গায় কয়েকজন যুবককে নাশকতার প্রশিক্ষণ দিতেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যদিও এখনও পর্যন্ত আইএস-এর অনুগামী এই নিউ জেএমবি নাশকতার প্রশিক্ষণ শুরু করেছে, এমন কোনও প্রমাণ গোয়েন্দারা পাননি। তবে একথা গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে, এ রাজ্যের কয়েকটি জেলায় ঘাঁটি তৈরি করতে শুরু করেছে জঙ্গিরা। এবং জঙ্গি সদস্য নিয়োগ করার সঙ্গে সঙ্গে তহবিল বাড়ানোর জন্যও সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করত তারা। জেরার মুখে ধৃত জঙ্গিরা জানিয়েছে, তারা নিজেদের মধ্যে থেকেই তহবিল সংগ্রহ করত। যদিও এই রাজ্যে তাদের সহমর্মী কিছু ব্যক্তির কাছ থেকে তারা যে তহবিল জোগাড় করত, গোয়েন্দারা তা জানতে পেরেছেন। এবং সেই সমস্ত ব্যক্তিদের সন্ধানও শুরু করেছেন।
The post সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও আপলোড করে জঙ্গি নিয়োগে ইন্ধন, তদন্তে নয়া তথ্য appeared first on Sangbad Pratidin.