স্টাফ রিপোর্টার: পরপর দুবার অপারেশন টেবিল থেকে রোগীকে নামিয়ে দেওয়া হল। কিন্তু কোনও অস্ত্রোপচার হল না। তিনবারের বার অস্ত্রোপচার হল। আধ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর রোগীর ডান চোখ থেকে বেরিয়ে এল চার সেন্টিমিটার লম্বার একটি খেজুরের কাঁটা! এ ঘটনা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফথালমোলজির (RIO)। আরআইও-র বিশেষজ্ঞদের অভিমত, সাম্প্রতিককালে খেজুর গাছের কাঁটা নিয়ে তিনদিন কোনও রোগীর এমনভাবে থাকতে পারেন না। হয় চোখ নষ্ট হয়ে যাবে অথবা সংক্রমণের জেরে শরীরের অন্যান্য অংশে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেবে।
গত ২৬ জানুয়ারি উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার বাসিন্দা কবীর বোস মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির সামনেই খেজুর গাছ। আর সেখানেই বাইকের চাকা স্লিপ করে মাটিতে পড়ে যান তিনি। হাত-পা ছড়ে যায়। বুকে কাঁটা বেঁধে। মাথায় হেলমেট থাকায় বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে বুকের খেজুর কাঁটা তোলা হয়। হাত-পা ব্যান্ডেজ করে বাড়ি ফিরে আসেন।
কিন্তু পরের দিন সকালে আর তাকাতে পারছিলেন না তিনি। চোখ ফুলে ঢোল। অসহ্য যন্ত্রণা। স্থানীয় হাসপাতালে গেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আরআইও-তে।
[আরও পড়ুন: সারদা দেবীর আদলে ব্যঙ্গচিত্র পোস্ট! হিন্দু ভাবাবেগে আঘাতের দায়ে বিজেপিকে তুলোধোনা তৃণমূলের]
সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করা হয় আরআইও-র অধিকর্তা ড. অসীম ঘোষ বলেন, “ততক্ষণে চোখ ভরে গিয়েছে পুঁজে। সংক্রমণের জেরে চোখ পুরো সাদা হয়ে গিয়েছে। দ্রুত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চোখ দ্রুত পরিষ্কার করা হয়। মনে হচ্ছিল চোখের ভিতর কিছু একটা আছে।” আরআইও-র বিশেষজ্ঞ ড. শ্যামাপদ বিশ্বাসের কথায়, ওটি টেবিলে তোলা হয় তাঁকে। বেশ বুঝতে পারছিলেন কবীরবাবুর চোখে কিছু একটা রয়েছে। কিন্তু ঠিক কোন জায়গায় জিনিসটা রয়েছে, বোঝা যাচ্ছিল না। তাই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে রোগীকে ফের বেডে পাঠানো হয়। সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। মাঝে দুদিন ছুটি ছিল। সোমবার ২৮ জানুয়ারি ফের ওটি টেবিলে তোলা হয় তাঁকে। কিন্তু তখনও সিটি স্ক্যান রিপোর্ট আসেনি। তাই ফের বেডে পাঠানো হয়।
এদিকে চোখভর্তি পুঁজ। সংক্রমণে সাদা হয়ে গিয়েছে গোটা চোখ। বেশিক্ষণ এমন অবস্থায় থাকলে চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় কিছুক্ষণ পর আবার অপারেশন টেবিলে তোলা হয় তাঁকে। ততক্ষণে সিটি স্ক্যান রিপোর্ট এসে গিয়েছে। দেখা গেল, চোখের মণির ঠিক পাশে সূঁচল কিছু একটা রয়েছে। সেই জায়গায় অস্ত্রোপচার করে বের হল ৪ সেন্টিমিটার লম্বা খেজুর কাঁটা। ঘটনা হল রোগী যদি আগেই বিষয়টি জানাতেন, তাহলে এতটা ভুগতে হত না। কাঁটা বের করার পর সেদিনই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।