সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একদিকে ধর্মীয় অনুশাসন। অন্যদিকে মনের ডাক। দুয়ের টানাপোড়েনে শেষপর্যন্ত মানবিক আহ্বানেই সাড়া দিলেন মুসলিম যুবক আরিফ খান। হিন্দু ভাইয়ের প্রাণ বাঁচাতে রোজা ভাঙলেন তিনি।
[ সাতবার এভারেস্টের উচ্চতা মেপে নিজের রেকর্ড ভাঙলেন বিএসএফ জওয়ান ]
হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজটা দেখেই চমকে উঠেছিলেন আরিফ। বছর কুড়ির এক যুবক মারাত্মক অসুস্থ হয়ে দেরাদুনের একটি হাসপাতালে ভরতি। অনুচক্রিকার সংখ্যা কমছে তাঁর রক্তে। প্রাণ বাঁচাতে তখনই দরকার এ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের মেসেজ আকছারই মেলে। কখনও কেউ গুরুত্ব দেন, কেউবা আর পাঁচটা পোস্টের মতো এড়িয়ে যান। কিন্তু এ ছিল এক বাবার আকুতি। অসুস্থ অজয় বিজলওয়ানের জন্য রক্তের আরজি জানিয়েছিলেন তাঁর বাবা। তার আগে ছেলের জন্য হন্যে হয়ে রক্ত খুঁজেছেন। শেষে অনন্যোপায় হয়েই দ্বারস্থ হয়েছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ার। সে মেসেজ চোখে পড়ামাত্রই চমকে উঠেছিলেন আরিফ। কারণ তাঁর রক্তের গ্রুপের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে ওই যুবকের রক্তের গ্রুপ। সুতরাং তিনি যদি উদ্যোগী হন তবে প্রাণ বাঁচতে পারে ওই তরুণের। তখনই মনস্থির করেন এবং হাসপাতালে গিয়ে হাজির হবেন।
রক্ত দেবেন ভাল কথা। কিন্তু রমজান চলছে। ফলত দিনভর উপবাস করে ছিলেন তিনি। সে কথা জানতে পেরেই নারাজ হন ডাক্তাররা। কিছু না খেয়ে রক্ত দেওয়া যাবে না। এদিকে গ্রুপ মিলে যাওয়ার পরও রক্ত দিতে না পারার আক্ষেপ ততক্ষণে পেয়ে বসেছে আরিফকে। ধর্মের উপর জোর দেবেন নাকি মানবিক আহ্বানে সাড়া দেবেন? কয়েক মুহূর্তের দোনামোনা। তারপরই ঠিক করে নেন রমজান তো আর্তের সেবার কথাই বলে। তাহলে রক্ত দিলে ধর্মকে অশ্রদ্ধা করা হবে না। এরপরই রোজার রেওয়াজ ভেঙে মুখে খাবার তোলেন তিনি। রক্তও দেন।
[ মোদির রাজ্যে দলিত যুবককে পিটিয়ে খুন, ভাইরাল নৃশংস ভিডিও ]
অজয় কতটা সুস্থ হয়ে উঠবেন তা নিয়তির হাতেই ছেড়ে দিয়েছেন সকলে। তবে এক হিন্দু ভাইয়ের প্রাণ বাঁচাতে যেভাবে রোজা ভেঙেছেন আরিফ, তা ইতিমধ্যেই দেশে দৃষ্টান্তস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কাজের পর কী বলছেন তিনি? জানাচ্ছেন, “মানুষের জীবনের থেকে দামী তো আর কিছু হতে পারে না। রোজা আমি পরেও রাখতে পারব। কিন্তু রোজা ভেঙে যদি একজনের প্রাণ বাঁচে তো সেটাকেই প্রাধান্য দেব। আমার মনে হয় আল্লাহ এতে দোষ নেবেন না। কারণ তিনি তো রমজানে সেবার কথাই বলেন। ত্যাগের কথাই বলেন। এরকম সময়ে কাউকে যে সামান্য সাহায্য করতে পারলাম তাতেই আমি খুশি।”
দেশজোড়া অসহিষ্ণুতার বাতাবরণে এ যেন সম্প্রীতির এক অনন্য নজির। দিকে দিকে হানাহানির খবর। তার উপর ধর্মভিত্তিক রাজনীতির গেরো। মাঝেমধ্যে মনে হয় গোটা দেশ যেন ধর্মের কড়াইয়ে ফুটছে। সেখানে দাঁড়িয়ে সঠিক ধর্মের দিশা দেখালেন আরিফ। যেমনটা দেখিয়েছিলেন রানিগঞ্জের ইমাম রশিদি। হিংসায় নিজের সন্তানকে হারিয়েও যিনি শান্তির পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন।
( ছবি-প্রতীকী)
The post সম্প্রীতির অনন্য নজির, হিন্দু ভাইয়ের প্রাণ বাঁচাতে রোজা ভাঙলেন মুসলিম যুবক appeared first on Sangbad Pratidin.