সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পিঠে বই নিয়ে হাজির উট। খবর পেয়েই ছুটে এল গ্রামের ছোট-বড় অনেক ছেলেমেয়ে। সেখান থেকেই যে যার পছন্দমতো বই নিয়ে নিল। কেউ আবার আগের নেওয়া বই উটের পিঠে রেখে চলে গেল। এভাবে দু’ঘণ্টা কাটানোর পর উটটি রওনা হল পরবর্তী গন্তব্যে। হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও সম্প্রতি সামনে এসেছে এমনই এক উট লাইব্রেরির খবর। যেখানে উটের শরীরই হয়ে উঠেছে আস্ত এক লাইব্রেরি।
গত বছর থেকেই করোনার (Covid-19) প্রকোপে গোটা বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। পড়াশোনাতেও যার প্রভাব পড়েছে। এক বছর কেটে গেলেও বেশিরভাগ জায়গায় এখনও বন্ধ স্কুল-কলেজ। অন্যান্য আর পাঁচটি দেশের মতো পাকিস্তানের (Pakistan) চিত্রটাও একই। শুধুমাত্র বালুচিস্তান প্রদেশেই স্কুল-কলেজ মিলিয়ে কয়েক লক্ষ পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে। কারণ সেখানে অনলাইন ক্লাস করানোর জন্য প্রয়োজনীয় ইন্টারনেট পরিষেবা টুকুও নেই। এই পরিস্থিতিতে ওই এলাকায় ছোট ছোট শিশুদের পড়াশোনায় সাহায্য করছে ওই উটটি! যার নাম আবার রোশন। হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও পাকিস্তানে খোঁজ মিলেছে ওই উট লাইব্রেরির।
[আরও পড়ুন: সোনার গয়নার ভারে কাহিল কনে, বিয়েতে দেওয়া যৌতুকের বহর দেখে তাজ্জব নেটদুনিয়া]
জানা গিয়েছে, রোশন নামের উটটি দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানের একাধিক জায়গায় ছোট ছোট শিশুদের কাছে পড়ার বই পৌঁছে দেয়। কারণ করোনা প্রকোপের জন্য ওই সমস্ত এলাকার স্কুল-কলেজ পুরোপুরি বন্ধ। ফলে বাড়িতে বসেই পড়াশোনা করতে হচ্ছে সবাইকে। সংবাদসংস্থা রয়টার্স সূত্রে খবর, কিচ জেলার মোট চারটি গ্রামে বই পৌঁছে দেয় রোশন। প্রত্যেকটি গ্রামে সপ্তাহে তিনদিন করে বই নিয়ে যায় উটটি। আর প্রত্যেক জায়গায় দু’ঘণ্টা করে থাকে। এই সময়ের মধ্যেই গ্রামের পড়ুয়ারা উটটির কাছ থেকে নিজেদের প্রয়োজনমাফিক বই নিয়ে যায়। তারপর পরদিন যখন উটটি ফের ওই গ্রামে যায়, তখন সেটি তারা ফেরত দেয়।
রহিমা জালাল নামে স্থানীয় এক হাইস্কুলের প্রিন্সিপ্যালের উদ্যোগেই এই ‘ক্যামেল লাইব্রেরি’ প্রকল্পটি শুরু হয়েছে। তাঁকে সাহায্য করছেন তাঁর বোনও, যিনি আবার পাকিস্তানের একটি প্রদেশের মন্ত্রীও। এই প্রসঙ্গে রহিমা জানিয়েছেন, ২০২০ সালের আগস্ট মাস থেকেই এই উদ্যোগটি শুরু করেছিলেন তিনি। স্কুল বন্ধ থাকায় নিজের এলাকার ছোট ছোট শিশুরা যাতে পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেকারণেই উটের সাহায্যে তাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। এজন্য সাহায্যে এগিয়ে এসেছে আরও দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। রহিমার ইচ্ছে, আগামিদিনে আরও অনেক গ্রামকে নিজের এই প্রকল্পের আওতায় আনা। ইতিমধ্যে অনেকেই পাশে দাঁড়িয় আর্থিক সাহায্য করেওছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, আগামিদিনে এই প্রকল্পটি এগিয়ে নিয়ে যেতে আরও আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন।