নব্যেন্দু হাজরা: বিভাজিত হবেন না, তবে বান্ধবীর গা ঘেঁষেও বসতে পারবেন না। আপাতত ক্যাফে বা রেস্তরাঁয় বসে ঘনিষ্ট সেলফি থেকে একটু দূরেই থাকতে হবে কাপলদের। ঠিক আড়াই মাস পর ৮ জুন খুলছে শহরের রেস্তরাঁ, ক্যাফে। অনেকেই ভাবছেন প্রথম দিনই বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে প্রিয় রেস্তরাঁয় গিয়ে প্রিয় খাবারটা খাওয়াবেন। চাইনিজ সাঁটিয়ে বা কোল্ড কফিতে গলা ভিজিয়ে সেলফি তুলে ফেসবুকে স্টেটাস ঝোলাবেন ‘আফটার লকডাউন’ লিখে রেস্টুরেন্টের নাম; সে গুড়ে বালি।
একদম নতুন রূপে খুলছে রেস্তরাঁ-ক্যাফে। দুই চেয়ারের মাঝে রাখা হচ্ছে বেশ খানিকটা দূরত্ব। এক টেবিলের সঙ্গে অন্য টেবিলের ফারাকও থাকছে অনেকটাই। একেবারে সামাজিক দূরত্ব মেনেই সোমবার থেকে খুলছে শহরের রেস্তরাঁ। দীর্ঘদিন পর ভোজনরসিকদের কাছে এটা যেমন একটা ভাল খবর। তেমনই মন্দটাও আছে। দীর্ঘ আড়াই মাস বন্ধের পর বহু রেস্তরাঁ হয়তো খুলবেই না। আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত বহু মালিক আর ঝাঁপ খোলার ঝুঁকি নেবেন না। বিশেষত যাঁরা দোকান ভাড়া করে এতদিন ব্যবসা করেছেন, তাঁরা। দোকান বন্ধ থাকায় কোনও আয় হয়নি। ফলে ভাড়া দিতে না পারায় অনেকেরই হাতছাড়া হয়েছে দোকান। মাঝারি মানের রেস্তোরাঁ কর্মচারীদের মাইনে না দিতে পারায় অনেক রাঁধুনি ও সেফরা চাকরি ছেড়েছেন। কেউ সবজি বেচেঁছেন কেউ বা ছোট দোকান খুলেছেন। বাজারের এই পরিস্থিতিতে তাঁরা আবার এই পেশায় ফিরবেন কিনা সন্দেহ। ফলে কর্মচারীর অভাবে মালিকও পারবেন না দোকান খুলতে। ফলে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি ঘেঁটে মনের মত রেস্তোরাঁ আর নাও খুঁজে পেতে পারেন আনলক জামানায়।
[ আরও পড়ুন: চলতি সপ্তাহেই খুলছে কালীঘাট মন্দির! সরকারি নির্দেশিকা মেনে বসছে স্যানিটাইজিং চ্যানেল ]
তবে বড় বা মাঝারি মানের যে রেস্তরাঁ বা ক্যাফে খুলবে ৮ জুন থেকে, তারা অতিথিদের জন্য সামাজিক দূরত্ব মেনেই সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট করছেন। মানে যে রেস্তোরাঁয় এতদিন একসঙ্গে ১০০ জন বসে খেতে পারতো সেখানেই এবার ৬০ জন বসতে পারবেন। রাখা হচ্ছে দুই চেয়ারের মধ্যে ব্যবধান, পাশাপাশি টেবিলের ব্যবধানও। পরিবার বা একসঙ্গে বন্ধুরা মিলে যে টেবিলে ১০ জন খেতে পারতেন সেখানে এবার বসবেন ৬ জন। তাছাড়াও রেস্তরাঁয় ঢোকার জন্য মুখে মাস্ক আবশ্যিক করা হচ্ছে। কোনও কারণে মাস্ক ছাড়া কেউ চলে এলে ঢোকার আগে রেস্তরাঁর তরফই তাদের মাস্ক দেওয়া হবে। থাকবে স্যানিটাইজারও। আর এসব করতে গিয়ে দাম বাড়তে পারে খাবারের সেকথা মানছেন মালিকরা। তবে একেবারে ছোট রেস্তরাঁগুলি এত নিয়মের ধার ধারবে কিনা সন্দেহ!
মলিকরা জানাচ্ছেন, একেবারে ভেন্টিলেশনে রেস্তরাঁ শিল্প। সেখান থেকে বের হওয়া বেশ শক্ত। এই অতিমারী কাটানোর পর কিছু সংখ্যকের হাতে টাকা থাকলেও বেশিরভাগ মানুষের হাতে টাকা স্বাভাবিকভাবেই কমে আসবে। ফলে এতদিন যাঁরা হোটেল-রেস্তরাঁয় নিয়ম করে খেয়ে বেড়াতেন, তাঁরাও খরচে লাগাম টানবেন। লোকে কেনাকাটা, বেড়ানো, সবই যেমন কমাবেন, তেমনই কমাবেন রেস্তরাঁয় খাওয়াদাওয়াও। অথচ ক্রেতার আশায় দোকান সাজিয়ে বসতে হবে তাঁদের। কিন্তু দিনের পর দিন তো কেউ ক্ষতির বহর বাড়াবেন না। ফলে ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে যে কোনও দিন। হোটেল মালিকদের বক্তব্য, আগামী কয়েক মাস এমনিতেই কাস্টমার কমে যাবে। বিক্রিবাটাও হবে না। কিন্তু কর্মীদের মাইনে থেকে এসটাব্লিশমেন্ট কস্ট বাড়তেই থাকবে। ফলে একটা সময়ের পর রেস্তরাঁ বা ক্যাফে চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। মানুষের টাকা খরচ করার প্রবৃত্তি অনেকটাই কেড়ে নেবে লকডাউন। কমবে শপিং মল, রেস্তরাঁয় যাওয়া। হোটেল অ্যাসোসিয়েশনও বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত। হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া ইস্টার্ন রিজিওনের সভাপতি, সুদেশ পোদ্দার বলেন, “হোটেল-রেস্তরাঁ ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। লকডাউনের ধাক্কা সামলে কত হোটেল-রেস্তরাঁ ফের খুলে আগের মতো ব্যবসা করবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে ৮ জুন থেকে আমরা সামাজিক দূরত্ব মেনেই রেস্তরাঁ চালুর কথা বলেছি মালিকদের।”
[ আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে আর্থিক সাহায্য, ২৫ লক্ষ টাকা দান বেঙ্গল মাদ্রাসা এডুকেশন ফোরামের ]
The post ঘনিষ্ঠ হয়ে তোলা যাবে না সেলফি, লকডাউনের পর রেস্তরাঁগুলিতে জারি নয়া নির্দেশিকা appeared first on Sangbad Pratidin.