shono
Advertisement

Breaking News

ভোট ফর কাস্ট, ভোট ফর পাস্ট, মধ্যপ্রদেশ নির্বাচনে জটিল সমীকরণ

বাগি অঞ্চল চম্বলে ভোটারদের সমর্থন মেলে শুধু নিজের জাতের প্রার্থীদের।
Posted: 12:32 PM Nov 09, 2023Updated: 12:32 PM Nov 09, 2023

বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, গোয়ালিয়র: ‘ভোট ফর কাস্ট, ভোট ফর পাস্ট’। রাজতন্ত্র। গণতন্ত্র। জাতপাত। এই তিন-এর বিচিত্র মিশেলে গোয়ালিয়র ও সংলগ্ন চম্বলের রাজনীতি চিরকালই বড়ই রহস‌্যময়!

Advertisement

মধ‌্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) উত্তরাংশে গোয়ালিয়র শহর একসময়ের প্রবল প্রতাপান্বিত সিন্ধিয়া রাজ পরিবারের খাস তালুক। এই এলাকা-সহ আশপাশের গুনা, মোরেনা, ভিন্দ-সহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা একদা দাপটের সঙ্গে শাসন করেছে সিন্ধিয়ারা। ঢিল ছোড়া দূরত্বের রাজস্থানের মতো এই এলাকাতেও সিন্ধিয়া রাজপরিবারের প্রতি আমজনতার আনুগত‌্য সীমাহীন। সেই আনুগত্যের প্রাবল‌্যকে কাজে লাগাতেই এখানে ভোট প্রত‌্যাশীদের নামের আগে জ্বলজ্বল করছে রাজপরিবারের সঙ্গে তাঁর যোগসূত্রের কথা। কারও ক্ষেত্রে ‘রাজা’, কারও ‘মহারাজা’ বা ‘রাজমাতা’ বা ‘রানিসাহিবা’। পিছিয়ে নেই ‘যুবরাজ’, ‘শ্রীমন্ত’ ও ‘দেওয়ান’-রাও! সব মিলিয়ে ভোটের মাঠে সশব্দে হাজির রাজ পরিবারের এক ডজনের বেশি সদস্য। রাজতন্ত্রের প্রভাব এ ভূমে এতই বেশি যে, দিল্লি থেকে হেভিওয়েট নেতারাও দলীয় প্রার্থীর সমর্থনের প্রচারে গিয়ে রাজ পরিবারের সামনে মাথা নত করছেন। তাতেই বেজায় খুশি প্রজাকুল।

[আরও পড়ুন: দূষণ ধুয়ে ফেলতে কৃত্রিম বৃষ্টি! অভিনব পরিকল্পনা দিল্লি সরকারের]

গোয়ালিয়র শহরের প্রাণকেন্দ্রে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ৭০০ বছরের পুরনো মালখান সিংয়ের দুর্গ। এই দুর্গকে কেন্দ্র করে গাঁথা রয়েছে বীর যোদ্ধাদের গৌরবকথা। কয়েক মাইল দূরেই ‘সিন্ধিয়া প্যালেস’। নির্বাচনের সময় সেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। শুধুমাত্র দিল্লির নেতাদের জন্য ২৪ ঘণ্টা সদর দরজা থাকে উন্মুক্ত। কান পাততেই মিলল আসল রহস্যের সুলুক। তাঁদের জন্য সারা বছরই সদর দরজা উন্মুক্ত থাকে। কারণ এখানে এসে গণতন্ত্রের প্রহরীরা রাজতন্ত্রের সামনে সেলাম জানায়। এর পিছনে অবশ্য ভোট রাজনীতি লুকিয়ে। আজও গোয়লিয়রে রাজ পরিবারের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক প্রভু ও প্রজার। সাধারণের উপর রাজ পরিবারের প্রভাবের সুবিধা নিতে এই সমীকরণকে কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন রাজনৈতিক কারবারিরা। এবারও মধ্যপ্রদেশের ভোট ময়দানে অন্যথা হয়নি। যেখানেই রাজ পরিবারের কোনও সদস্য প্রার্থী হয়েছেন, সেখানেই পরিবারের অন্য কেউ প্রতিপক্ষ হয়ে ভোটযুদ্ধের ময়দানে নাম লিখিয়েছেন।

যেমন গোয়ালিয়র পূর্ব কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন রাজ পরিবারের মামিজি বলে খ্যাত মায়া সিং। পালটা লতায়পাতায় একই পরিবারের সম্পর্কযুক্ত সতীশ শিকারয়ারকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। গোয়ালিয়র দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে পদ্মপক্ষ প্রার্থী করেছে নারায়ণ সিংকে। সিন্ধিয়া পরিবারের কোনও সদস্য সরাসরি নির্বাচনের ময়দানে না থাকলেও ঘনিষ্ঠ অথবা দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের প্রার্থী করা হয়েছে। এঁরা মূলত দুই প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস (Congress) ও বিজেপির (BJP) প্রতীকে লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছেন। রাজতন্ত্র বা পরিবারতন্ত্রের দুর্নাম থেকে দূরে থাকতেই সিন্ধিয়া পরিবারের এই কৌশল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যেমন গোয়ালিয়র গ্রামীণ কেন্দ্র থেকে নির্দল হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পূরণ সিং ও মান সিং। আবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং গুনার রাহোগড় রাজ পরিবারের সন্তান। এবারও তাঁর পুত্র জয়বর্ধন সিং হাত প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পারিবারিক খাসতালুক গুনা কেন্দ্র থেকে।

[আরও পড়ুন: ছত্তিশগড়-ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেপ্তার ৩ ইসলামিক স্টেট জঙ্গি, ছড়াচ্ছে ‘খিলাফতে’র বিষ!]

ঠিক ভিন্ন চিত্র বাগি অঞ্চল বলে পরিচিত চম্বলে। এখানে জাতপাতের রাজনীতি প্রবল। এখানে ভোটারদের সমর্থন মেলে শুধু নিজের জাতের প্রার্থীদের। রাজনীতি, আদর্শ, দলীয় প্রতীকের প্রতি আনুগত‌্য, প্রার্থীর যোগ‌্যতা- এসব এই এলাকায় নেহাতই ‘এলেবেলে’। একই ছবি মালবার এলাকাতেও। চম্বলে মূলত গুর্জর সম্প্রদায়ের বাস। সেখানে সব দলই গুর্জর সম্প্রদায় থেকে প্রার্থী মনোনীত করেছে। ভিট্টায়ার কেন্দ্রে কালীচরণ গুর্জরকে প্রার্থী করেছে সমাজবাদী পার্টি। মোহন সিং রাঠোরকে প্রার্থী করেছে গেরুয়া শিবির। তবে চলে আসা রীতি ভেঙে যাদব সম্প্রদায় থেকে লক্ষ্ণণ সিংকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। কারণ এই কেন্দ্রে যাবদ ভোটারের সংখ্যা নেহাত কম নয়। যেভাবে গোয়ালিয়র আসনে বিজেপি প্রদুমান সিং তোমর ও বহুজন সমাজ নীতিন সিং তোমরকে প্রার্থী করে জাতপাতের রাজনীতিকে উসকে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে।

স্বাধীন দেশ গঠনের সময় সংবিধান প্রণেতারা চেয়েছিলেন গণতন্ত্রই হোক ভারতের চালিকাশক্তি। পরবর্তীকালে রাজন‌্য ভাতার বিলোপ করে দেশ থেক রাজতন্ত্রের প্রভাব মুছে ফেলার চেষ্টার কমতি ছিল না। কিন্তু তারপরও মধ্যপ্রদেশের বেশকিছু অঞ্চলে প্রশ্নের মুখে ৭৫ বছর পূর্ণ করে ফেলা গণতন্ত্র! অদৃশ‌্য রাজতন্ত্রের অঙুলিহেলনেই এখানে বাঁক নেয় রাজনীতির রথ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement