নব্যেন্দু হাজরা: বাড়ি ভাড়া, ক্যাটারার, নিমন্ত্রণের পর্ব, আলো, সানাই, সবই প্রস্তুত ছিল। কিন্তু এখন কী হবে! ছাদনাতলাতেও এবার ওমিক্রনের থাবা। করোনার গ্রাফ বাড়তে থাকায় রবিবার বিকেলেই অনুষ্ঠান বাড়িতে ৫০ জন নিমন্ত্রিতের সংখ্যা বেঁধে দিয়েছে সরকার। আর তাতেই যেন বিয়ের হিসাব ‘ওলট-পালট’। বরকর্তা থেকে কনের বাবা, কেউ ভেবে পাচ্ছেন না, ৫০০ থেকে কীভাবে সেই তালিকা ৫০-এ নিয়ে আসবেন তাঁরা। পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়, তখন কী হবে তা ভেবে পাচ্ছেন না।
জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই পরপর বিয়ের তারিখ। সেই মতো ক্যাটারারদেরও অগ্রিম দিয়ে বুক করে রাখা হয়েছে। বাড়ি ভাড়া থেকে ফুলের ডেকরেশন, সর্বত্রই আগাম সব বুক করা। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে চিন্তায় বর-কনে, দু’পক্ষই। অনেকে তো ইতিমধ্যে বিয়ে পিছিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনাও করছে।
রবিবার সকালে মেয়ের বিয়ে পিছিয়ে দেওয়ার কথা ফেসবুকে লেখেন পরিচালক শতরূপা সান্যাল। লেখেন, বন্ধুরা, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গিয়ে হোঁচট খেলাম। করোনা রিপোর্ট এল পজিটিভ। মেয়ের বিয়ের দিন ছিল একেবারে সামনে, সেটা পিছিয়ে দিতে হল।
[আরও পড়ুন: Coronavirus Update: দেশে একদিনে করোনা আক্রান্ত সাড়ে ৩৩ হাজারের বেশি, শুরু ১৫ ঊর্ধ্বদের টিকাকরণ]
তাঁর মতো অনেকেই এখন বিয়ে পিছনোর কথা ভাবছেন। যাঁরা করবেন, তাঁরাও সব বন্ধ রেখে রেজিস্ট্রিতেই বিয়ে সারার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বড়জোর পুরোহিত এসে মালাবদল আর মন্ত্রোচ্চারণ করাবেন। কোনও মতে নমো নমো করে চার হাত এক করে দেওয়া। আত্মীয় পরিজন, পাড়াপড়শি, বরযাত্রী, কনেযাত্রী এসবই এখন অতীত। আর বিয়েবাড়িতে এই করোনা আতঙ্কই ক্যাটারিং ব্যবসায় যুক্ত মানুষগুলোর কাছে ফের অশনি সংকেত হিসাবে দেখা দিয়েছে।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি জুড়ে একগুচ্ছ বিয়ের তারিখ। কিন্তু কোথায় কী! করোনা আবহে চতুর্দিকে শুরু হয়েছে বিয়ে বাতিলের হিড়িক। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে করোনা কিছুটা কমায় বিয়ের তারিখ দেখে অনেকেই বিয়ে ঠিক করেছিলেন ছেলেমেয়ের। কিন্তু করোনার তৃতীয় ঢেউতেই সব ওলটপালট। বাড়ি ভাড়া থেকে ক্যাটারিং, অনেকেরই অ্যাডভান্সের টাকা জলে যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা । একই সঙ্গে ফের সিঁদুরে মেঘ দেখছেন ক্যাটারিংয়ের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত লোকজনের। গতবছর একের পর এক বুকিং বাতিল হয়েছে ক্যাটারিংয়ের লোকেদের। মালিকের যেমন-তেমন অবস্থা হলেও বাড়িতে হাঁড়ি চড়ছে না সেই ছেলেগুলোর, যারা আমার-আপনার পাতে উৎসব অনুষ্ঠানে মটন বিরিয়ানি বা চিকেন চাপ সাজিয়ে দিয়ে যায়। বিয়ে, অন্নপ্রাশন, জন্মদিনে নিমন্ত্রিত কমে গেলে তাঁদেরও এর চাহিদা থাকে না। গত দু’বছর ধরে একই পরিস্থিতি গিয়েছে। এবারও তাই।
নিমন্ত্রিতের সংখ্যা ৫০ হলে দরকারই পড়বে না নামজাদা ক্যাটারারের। যারা গত বছর বুক করেছিলেন, এবছর বিয়ের জন্য তাঁরা প্রত্যেকেই এদিন বিকেলে ক্যাটারিংয়ের লোকজনকে ফোন ঘোরাচ্ছেন প্লেট কমানো অথবা বুকিং বাতিলের জন্য। শ্যামবাজারের কাছে এক ক্যাটারিং সংস্থার কর্ণধার দেবাশিস সাহা বলেন , “যিনি বিয়েতে ৫০০-৬০০ নিমন্ত্রিতের আয়োজন করেছিলেন, তিনিই এখন ৪০-৫০ জনের খাবার অর্ডার করছেন। কিছু করার নেই। কিন্তু অত কম লোকের আয়োজন করতে গেলে পড়তায় আসবে না। তাই লোকাল কাউকে দিয়ে করিয়ে নিতে বলছি। বা হোটেল থেকে খাবার আনিয়ে নিতে। সারা বছরের ব্যবসা এবারও শেষ হয়ে গেল।”