অর্ণব আইচ: চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে তিনি তুলেছেন কোটি কোটি টাকা। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার চন্দন মণ্ডল ওরফে ‘সৎ রঞ্জনে’র বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের অভিযোগ এমনই। কিন্তু শুক্রবার চন্দনকে নিজাম প্যালেসে গ্রেপ্তার করার সময় তাঁর পকেট থেকে উদ্ধার হল মাত্র ২০৩ টাকা। এমনকী, একটি অতি সাধারণ ও সস্তার কি প্যাড মোবাইল তিনি ব্যবহার করতেন বলেই সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেন কোটি টাকা লেনদেনে অভ্যস্ত রঞ্জন। নিজেকে প্রায় নিঃস্ব বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন সিবিআইয়ের দপ্তরে। সিবিআইয়ের জেরার মুখেও রঞ্জন এসএসসি-র দুর্নীতির কোটি টাকার লেনদেন সম্পর্কে কোনও তথ্যই জানাতে চাননি।
সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস উল্লেখ করেছিলেন ‘সৎ রঞ্জনে’র নাম। তারই ভিত্তিতে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে শুরু করে আরও কয়েকটি জেলায় খোঁজখবর নিতে শুরু করেন সিবিআই আধিকারিকরা। গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, কয়েকজন প্রভাবশালীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকার সুবাদে চন্দন মণ্ডল স্কুলদপ্তরে নিয়োগের নাম করে টাকা তুলতে শুরু করেন। সিবিআইয়ের ভাষায়, উচ্চপর্যায়ের এজেন্ট ছিলেন চন্দন। তাঁর আওতায় অজস্র সাব এজেন্ট কাজ করতেন। ওই সাব এজেন্টদের মাধ্যমেই বিভিন্ন জেলার চাকরিপ্রার্থীদের বলা হত যে, টাকা দিলেই মিলবে চাকরি। শুধু ওএমআর শিটের উপর নাম লিখেই জমা দিলে হবে। বিশেষ কয়েকটি প্রশ্নে কালি দিয়ে ফাঁকা জায়গা ভরাট করতে হবে। তাতেই ‘অযোগ্য’ চাকরিপ্রার্থী, যাঁরা টাকা দিয়েছেন, তাঁদেরও শনাক্ত করা যাবে। এই ধরনের একের পর এক তথ্য হাতে আসার পরই রঞ্জনকে তলব করা হয় নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের দপ্তরে।
[আরও পড়ুন: ‘বাগদার ‘রঞ্জন’ গ্রেপ্তার হয়ে আর কিছুই হবে না’, আক্ষেপ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের]
সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য দেওয়া দূরে থাক, প্রথম দিন থেকেই চন্দন মণ্ডল ওরফে ‘রঞ্জন’ সিবিআই আধিকারিকদের কাছে দাবি করতে থাকেন যে, তিনি অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের সদস্য। জমিতে তিনি কৃষকের কাজ করেন। আর তিনি কিছু ছাত্রছাত্রীকে পড়ান। তাতেই তাঁর সংসার চলে। সম্প্রতি তদন্তের খাতিরে উচ্চপর্যায়ের ওই এজেন্ট চন্দন মণ্ডলের একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখেন গোয়েন্দারা। কয়েকটি লেনদেনের ক্ষেত্রে সন্দেহ হয় সিবিআই আধিকারিকদের। শুধু কৃষিকাজ করে ও টিউশন পড়িয়ে অ্যাকাউন্টগুলি থেকে এই লেনদেনগুলি কীভাবে হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিবিআই আধিকারিকরা।
সিবিআইয়ের দাবি, চন্দন যে অত্যন্ত সাধারণ ও দরিদ্র, তা প্রমাণ করতেই তিনি নিজের কাছে বেশি টাকাও রাখতেন না। এমনকী, সিবিআইকে বলেন, তিনি অ্যানড্রয়েড মোবাইলও ব্যবহার করেন না। গ্রেফতার করার সময় তাঁর কাছ থেকে সিবিআই একটি খয়েরি রঙের চামড়ার বেল্ট, ২০৩ টাকা ও একটি কি-প্যাড মোবাইল উদ্ধার করে। এ ছাড়া তাঁর কাছ থেকে বেশি কিছু উদ্ধার করা হয়নি। এদিন হুগলি, মুর্শিদাবাদ-সহ দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার আরও পাঁচজন এজেন্টকে সিবিআই গ্রেপ্তার করেছে, তাঁদের কাছ থেকেও বেশি পরিমাণ টাকা সিবিআই উদ্ধার করতে পারেনি। সিবিআইয়ের মতে, কাছে টাকা না থাকলেও নাম ও বেনামে তাঁদের কত সম্পত্তি রয়েছে, তা জানা জরুরি। ধৃতদের জেরা করে সেই তথ্যই জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।