শুভঙ্কর বসু: দুপুরের জমজমাট ধর্মতলা চত্বর। দোকানের একপাশের জলন্ত দড়িটায় সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে বিধানবাবুর চোখ পড়ল প্যাকেটগুলোর দিকে। “দাদা ওগুলো কি সিগারেটের প্যাকেট?” দোকনির সহাস্য উত্তর, “আপকো ক্যায়া লাগতা হ্যায়, চকোলেট!” “না মানে প্যাকেটের গায়ে কোনও ছবি-টবি নেই তো। তাই ভাবছিলাম।” গুটখার ছিপ ফেলে বিরক্ত দোকানি বলে উঠলেন, “সব ইমপোর্টেড। বাহারকা। লিতে হলে বলুন। না হলে আসুন।” আর কথা বাড়াননি বিধানবাবু। কিন্তু সিগারেট বিদেশি হতে পারে, বিক্রি হচ্ছে তো এদেশে! তাহলে প্যাকেটের গায়ে সতর্কীরণের ছবি থাকবে না কেন? নিশ্চয়ই ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।
[স্বচ্ছতার নিরিখে রেলকে ‘স্বচ্ছতা হি সেবা’ পুরস্কার দিচ্ছে কেন্দ্র]
ঠিকই ধরেছেন রানাঘাটের বিধানবাবু। সতর্কীকরণের ছবি ছাড়া যেসব সিগারেটের প্যাকেট বাজারে বিকোচ্ছে সেগুলি সবই বেআইনি। চোরাই সিগারেট। শুধু ধর্মতলা কিংবা শহর কলকাতাই নয় দেশের সর্বত্র এমন বেআইনি বিদেশি সিগারেটের রমরমা। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে তো দেশি সিগারেট মেলাই দায়। বদলে জাঁকিয়ে বিকোচ্ছে ডানহিল, এসএস, ইউন, গুডান গরাম, গোল্ড লিফ কিংবা প্যারিসের মতো নামজাদা ব্র্যান্ডের চোরাই বিদেশি সিগারেট। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা এসব সিগারেট দামেও অনেকটাই কম। অথচ এমন বেআইনি কারবার সম্পর্কে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের কাছে কোনও তথ্যই নেই। লোকসভায় এ সম্পর্কিত একটি তথ্য পেশ করে অর্থমন্ত্রক দাবি করেছে, ‘দেশে অবৈধ সিগারেট নেই। গত দু’বছরে বেআইনি সিগারেটের একটি প্যাকেটও উদ্ধার করতে পারেনি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।’
কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলছে। টোবাকো ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার (টিআইআই) হিসাব মোতাবেক বাজারে বেআইনি সিগারেটের দাপাদাপিতে ফি বছর অন্তত ১৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে সরকারের। গোটা বিশ্বে চোরাই সিগারেট ব্যবহারের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। টিআইআই এর দাবি, প্রতিবছর চিন, কোরিয়া, মায়ানমার কিংবা নেপাল থেকে ২০ থেকে ২৩ বিলিয়ন বেআইনি সিগারেট চোরা পথে ভারতে ঢোকে। চলতি বছরের মার্চ মাসেই কেন্দ্রের কাছে এনিয়ে দরবার করেছে টিআইআই। বাঁকা পথে দেশে ঢোকা বিদেশি সিগারেটের উপর উচ্চহারে কর বসানোর আবেদন জানিয়েছিল তারা। তারপরও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন্দ্র। দেশের বৃহত্তম সিগারেট প্রস্তুতকারী সংস্থা আইটিসির সাম্প্রতিকতম বার্ষিক সাধারণ সভায় গ্রুপের চেয়ারম্যান ওয়াই সি দেবেশ্বর আক্ষেপ করে জানিয়েছেন, “ভারতীয় বাজারে যে সংখ্যক সিগারেট বিকোয় তার ২৫ শতাংশই চোরাই সিগারেট।”
[ঋণ শোধ করতে না পারার শাস্তি! জেলেই প্রাণ গেল কৃষকের]
আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে নকল বিদেশি সিগারেটের কারখানা। চোরাই বিদেশি সি টিআইআই এর দাবি, উত্তরপ্রদেশের মিরাট, বারাণসীর মতো এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে এমন সব কারখানা। এনিয়ে নির্দিষ্ট আইন ও তাতে শাস্তির বিধান থাকলেও ধূমপানের মতো একটি বিষয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ সকলেই। আর সেই সুযোগে ধূমপায়ীদের ঠোটে রীতিমতো গেড়ে বসেছে বিদেশি চোরাই সিগারেট।
The post বাজার ছেয়েছে চোরাই সিগারেটে, বছরে কত টাকা কেন্দ্রের ক্ষতি জানেন? appeared first on Sangbad Pratidin.