অর্ণব আইচ: বয়স তাদের মেরেকেটে ৬ বছর। এই বয়সে বছর দেড়েকের প্রশিক্ষণেই তারা চটপট শিখে নিয়েছে কীভাবে দৌড়ে আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। আবার খেলার মাঠে ভিড় কীভাবে সামলাতে হয়, তাও তাদের বিলক্ষণ জানা। এছাড়াও তারা শিখেছে কুচকাওয়াজ। কারা এরা? নিশ্চয়ই মনে উঁকি দিচ্ছে সেই প্রশ্ন।
মাস কয়েক আগে বিম্বিসার ও চন্দ্রগুপ্তকে সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঘোড়সওয়ারের নির্দেশে কতটা গতিতে যেতে হবে, কী নির্দেশ পেলে সঙ্গে সঙ্গে থামতে হবে, তা সহজেই রপ্ত করে নিয়েছে এই দু’জন। তাই এবার সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে দুই তরুণ ঘোড়া বিম্বিসার আর চন্দ্রগুপ্তকে নামাচ্ছে কলকাতার মাউন্টেড পুলিশ।
মাউন্টেড পুলিশকে আরও জোরদার করার জন্যই বছর দেড়েক আগে পাঞ্জাব থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় ১০টি নতুন ঘোড়া। আলিপুর বডিগার্ড লাইনসেই রয়েছে এই নতুন ঘোড়াদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, এই দশটির মধ্যে গোটা চারেক খুব তাড়াতাড়ি শিখে নিয়েছে তাদের কাজ। কীভাবে ঘোড়সওয়ার পুলিশের কথা শুনে চলতে হয়, সেই প্রশিক্ষণ পেয়ে গিয়েছে তারা। তাই তারা এবার শুরু করে দিয়েছে পুলিশের ডিউটি। এই চারটির মধ্যে ৬ বছর বয়সের দু’টি ঘোড়া বিম্বিসার আর চন্দ্রগুপ্তকে যথেষ্ট ‘স্মার্ট’ বলে মনে হয় কলকাতা পুলিশের কর্তাদের। যেভাবে তারা ‘কম্যান্ড’গুলি মেনে চলছে, তাতেই উৎসাহিত হন মাউন্টেড পুলিশের আধিকারিকরা।
[আরও পড়ুন: CAA’র পক্ষে জনসম্পর্ক অভিযানে পুরভোটের আগে লাভ হবে, মনে করছে বিজেপি ]
বিম্বিসার ও চন্দ্রগুপ্তকে নিয়ে একটি ভাবনা পুলিশকর্তাদের ছিলই। কারণ, এই কুচকাওয়াজে যে ২০টি ঘোড়াকে যোগ দেওয়ানো হচ্ছে, সেগুলি রীতিমতো সাধারণতন্ত্র দিবসেও অভিজ্ঞ। এই ‘সিনিয়র’দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুই ‘তরুণ’ প্রত্যেটি কম্যান্ড মেনে কুচকাওয়াজ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রথমে একটু সন্দিহান ছিলেন পুলিশ আধিকারিকরা। কিন্তু আলিপুর বডিগার্ড লাইনস ও ধর্মতলার প্যাডকে কুচকাওয়াজের মহড়া শুরু হওয়ার পর রীতিমতো খেলা দেখিয়েছে এই দুই তরুণ ঘোড়া। এর পর যখন রেড রোডে সাধারণতন্ত্র দিবসের মহড়া শুরু হয়েছে, তখনও পিছপা হয়নি ওই দুই তরুণ। অভিজ্ঞদের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে তারা কুচকাওয়াজ করছে, যা রাজ্যবাসী দেখতে পাবেন সাধারণতন্ত্র দিবসে।
কুচকাওয়াজের মহড়ার পর তাদের সযত্নে ছোলা, ভুসি আর কচি ঘাস খাওয়াচ্ছেন সহিসরা। চলছে দলাই-মলাইও। এছাড়াও অন্য দুই তরুণ ঘোড়াও যাতে খুব তাড়াতাড়ি কুচকাওয়াজ শেখে, তার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত শহরে ৬০টি ঘোড়া ডিউটি করলেও তাদের মধ্যে ১৫টি অবসরের পথে। তাদের মধ্যে কেউ বা একটু বেশি দৌড়লে হাঁফিয়ে পড়ছে। আবার কেউ বা দৌড়তে গিয়ে অল্প হোঁচট খাচ্ছে। ফলে ৪৫টি ঘোড়া এখন প্রায় রোজই ডিউটি দেয়। তাদের মধ্যে ২০টি রয়েছে কুচকাওয়াজে। বাকি ৬টি তরুণ ঘোড়া যাতে তাড়াতাড়ি কাজ শিখে ডিউটিতে যোগ দিতে পারে, তার জন্যই তাদের দিনে বেশ কয়েক ঘণ্টা টানা প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ।
[আরও পড়ুন: চিকিৎসকের ভুলে ডান হাত বাদ গেল নিউমোনিয়া আক্রান্ত বধূর, কাঠগড়ায় হাসপাতাল]
৮৮ বছর পর মুম্বই পুলিশ ফের রাস্তায় নামিয়েছে মাউন্টেড পুলিশকে। যদিও কলকাতা মাউন্টেড পুলিশের ৬০টি ঘোড়া প্রত্যেক দিনই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ডিউটি করে শহরের রাস্তায়। যদিও তাদের মূল কর্তব্যস্থল ময়দানেই। কারণ কলকাতা পুলিশের কর্তাদের মতে, ঘোড়াদের দিয়ে রাজনৈতিক মিছিল সামলানো আইনবিরুদ্ধ কিংবা এদের দিয়ে ট্রাফিকও সামলায় না কোনও শহর। যদিও ময়দানের বিস্তৃত এলাকায় শীত-গ্রীষ্ম, বর্ষায় টহল অথবা খেলার মাঠে জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে মাউন্টেড পুলিশ বা ঘোড়া পুলিশের জুড়ি নেই।
The post ছ’বছর বয়সেই পারদর্শী, সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে চন্দ্রগুপ্ত ও বিম্বিসার! appeared first on Sangbad Pratidin.