ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়, বেঙ্গালুরু: আর একদিনের মধ্যে নিজেদের একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ শুধু নয়, পৃথিবীর বাইরের কোনও মহাজাগতিক বস্তুকে প্রথম ছোঁবে বিক্রম। সেই উত্তেজনার মুহূর্তে পৌঁছনোর আগে গতি শূন্য হবে। লাফিয়ে নামবে। ইতিমধ্যে বিক্রমের প্রবল গতি নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলেছে ইসরো। আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। কিন্তু বুধবার বিক্রমের সঙ্গেই তার দিকে আরও একধাপ নেমে এসেছে অরবিটার। ইসরো পরে দাবি করেছে, বিক্রমের উপর নজর আরও কড়া করতে এই পদক্ষেপ।
[আরও পড়ুন: চাঁদের আরও কাছে চন্দ্রযান ২, অবতরণের সাক্ষী থাকবে বাংলার মেয়ে উসরা]
বিজ্ঞানী মহলের দাবি, বিক্রম যে অনাবিষ্কৃত পথে নামবে, সে পথে তার কোনও সাহায্যের দরকার হলে ‘ব্যাকআপ’ দেবে অরবিটার। প্রয়োজনীয় সিগন্যাল সরাসরি বিক্রমের পাঠাতে সমস্যা হলে তাতেও মদত জোগাবে অরবিটার। এই মুহূর্তে বিক্রম ল্যান্ডারের অবস্থান চাঁদের পিঠের ৩৫ কিলোমিটারে। অরবিটার নেমে এসেছে ৯৬ কিলোমিটারের মধ্যে। আজ শেষ ধাপ নেমে চাঁদের মাটির খুব কাছ থেকে অবতরণের জায়গা নির্ধারণের কাজ শুরু হবে তার। সবটুকু হবে ল্যান্ডারের প্রবল গতি নিয়ন্ত্রণের সঙ্গেই। ৬ হাজার কিলোমিটার বেগ থেকে তার গতি কমিয়ে ১০০ কিলোমিটার করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর পরই সেই চরম আতঙ্কের মুহূর্ত।
এ তো গেল মহাজগতের কথা। কিন্তু পৃথিবীতে বিক্রমকে ঘিরে কী কী হচ্ছে? জেনে নেওয়া যাক। বেঙ্গালুরুতে ইসরোর সদর দপ্তরে চাঁদের হাট বসছে শুক্রবার মাঝরাতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনা ষাট কুচোকাঁচাকে সঙ্গে নিয়ে বসে সরাসরি বিক্রমের অবতরণ দেখার কথা। তাঁর সঙ্গে কার্যত রাত জাগবে গোটা বিশ্ব। ন্যাট জিও একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। নাসার মহাকাশচারী জেরি লেনিনযার তাঁর মহাকাশ জীবনের গল্প শোনাবেন রাত ১১টা থেকে। তিনি বলেছেন, “এই অভিযান ভারতের শুধু নয়, বিশ্বের সামনেও নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।”
চাঁদে ভারতের পা রাখার এই মুহূর্তটাকে সেলিব্রেট করছে গোটা বিশ্ব। তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোরে একটি কলেজে লেকচার দিতে এসেছিলেন নাসার প্রাক্তন মহাকাশচারী ডোনাল্ড এ থমাস। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন, “২০২৪- এ মার্কিন মহাকাশচারীদের সঙ্গে চাঁদে আবার পা রাখবে সে দেশের দুই নাগরিক। তাই ভারতের এই অভিযানের দিকে আমরা সবাই তাকিয়ে। গোটা বিশ্ব সরাসরি এই মেগা ইভেন্ট দেখবে। এমন উদ্যোগ এই প্রথম। আর আমরা জেনে নিতে পারব চাঁদের অনাবিষ্কৃত দক্ষিণ মেরু আদতে কেমন।”
[আরও পড়ুন: চাঁদের আরও কাছে চন্দ্রযান ২, সফলভাবে বিচ্ছিন্ন ল্যান্ডার বিক্রম]
তবে চাঁদে কিন্তু বিক্রম একা নয়। আগেই জানিয়েছি চিনের ল্যান্ডার চেঞ্জ ৪ জানুয়ারিতেই পাড়ি জমিয়েছে চাঁদে। তার রোভার ইউটু ২ ঘুরে ঘুরে গবেষণার কাজ করে বেড়াচ্ছে চাঁদের পিঠে। সে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটারের কিছু বেশি দূরে। অরবিটারও একা নয়। নাসার পাঠানো লুনার রিকনাইস্যান্স অরবিটার দশ বছর ধরে চাঁদকে জানতে তার চারপাশে পাক খেয়ে চলেছে। এই পর্বে বিক্রমকে বড় সার্টিফিকেট দিয়ে রেখেছেন ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান জি মাধবন নায়ার। অরবিটার থেকে বিক্রমের বিচ্ছিন্ন হওয়াকে ‘বিগ ইভেন্ট’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন, “চন্দ্র অভিযান ১০০ শতাংশ সফল হবে। সবচেয়ে জটিল প্রক্রিয়ায় একসঙ্গে অনেকগুলি কাজ করতে করতে চাঁদে নামবে বিক্রম।”
যখন যে অবস্থানেই থাকুক অনবরত চাঁদের পিঠের নানা ছবি পাঠিয়ে চলেছে বিক্রম। শেষ এক ঘণ্টা দূরত্ব থেকে লাগাতার ছবি এবং ভিডিও পাঠাবে সে। সেই রিয়েল টাইম ছবি দেখেই বেঙ্গালুরুতে সদর দপ্তরে বসে ল্যান্ডারের অবতরণের জায়গা চূড়ান্ত করবেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। একেবারে শেষ ১৫ মিনিট চূড়ান্ত পরীক্ষা। চাঁদের এবড়ো-খেবড়ো গহ্বরে ভরা পিঠের ছবি তোলা, অক্ষাংশ-দ্রাঘিমা নির্ধারণ করা থেকে নিজের পাঁচটি রকেট ইঞ্জিন নিয়ন্ত্রণ, সব ‘নিজে হাতে’ করবে ড. সারাভাইয়ের মানসপুত্র। অপেক্ষা ৬ সেপ্টেম্বর মাঝরাতের মাহেন্দ্রক্ষণের। যে মুহূর্তের চরম রোমাঞ্চকর অভিযানে সরাসরি সঙ্গী হবে গোটা বিশ্ব। ইসরোর দাবি, এখনও পর্যন্ত যা হবে পৃথিবীর সেরা রোমাঞ্চকর অভিযান।
The post চাঁদের দোরগোড়ায় চন্দ্রযান ২, ল্যান্ডার বিক্রমের উপর কড়া নজর ইসরোর appeared first on Sangbad Pratidin.