সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইচ্ছে থাকলে কী না হয়! একক প্রচেষ্টাতেও হয়। ছিল ‘মাতালদের গ্রাম’, হয়ে গেল ‘দাবা গ্রাম’! বিরাট বদনাম থেকে বিপুল সুনামে প্রত্যাবর্তন! কেরলের (Kerala) মারোত্তিচালের পতন ও উত্থান অবিশ্বাস্য। এককালের মাতাল আর জুয়াড়িদের গ্রামে আজ ঘরে ঘরে দাবা খেলা হয়৷ ক্লাবে, দোকানে, মাঠেঘাটেও৷ হ্যাঁ, একজন মানুষই এই বিপ্লব করেছেন। যুবক উন্নিকৃষ্ণন বদলে দিয়েছেন তাঁর জন্মভূমিকে।
পুরো ঘটনা বুঝতে যেতে হবে ফ্ল্যাশব্যাকে। জানতে হবে যুবক উন্নিকৃষ্ণনের ব্যক্তি জীবনের কথাও। আসলে একটা সময় গ্রাম ছেড়ে অল্প দূরের ছোটো শহর কল্লুরে থাকতেন উন্নিকৃষ্ণন। মারোত্তিচাল সেই সময় নেশাড়ুদের গ্রাম বলেই পরিচিত ছিল৷ কিন্তু কল্লুরে থাকাকালীন দাবা শিখলেন উন্নিকৃষ্ণন৷ মনে মনে ছিল এক সংকল্প! তবে ছোটবেলাতেই দাবার প্রেমে পড়েন তিনি৷ ছিলেন কিংবদন্তি ববি ফিশারের অন্ধ ভক্ত৷ আসলে দাবা শিখবেন বলেই গ্রাম ছাড়েন। থাকতে শুরু করেন কল্লুরে। সংকল্প পূরণ হল যুবকের। ফিরে এলেন গ্রামে৷
[আরও পড়ুন: ‘মমতার হাতে দেশের ভবিষ্যত, পাশে দাঁড়াতে এলাম’, তৃণমূল সুপ্রিমোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ শত্রুঘ্ন]
স্বপ্ন আর বাস্তব তো এক না, অতএব আয়-উপায়ের জন্য বাড়ির কাছেই একটা চায়ের দোকান খোলেন উন্নিকৃষ্ণন৷ এখান থেকেই বিপ্লবের শুরু। স্থানীয়রা সেই দোকানে চা খেতে আসা-যাওয়া করতেন। এই সুযোগে দাবা নিয়ে নানা মজার গল্প করতেন উন্নিকৃষ্ণন৷ এভাবেই গ্রামবাসীদের অজান্তে তাঁদের দাবা খেলাটা সম্পর্ক প্রাথমিক ধারণা দিতে থাকেন৷ যদিও শুরুতে যুবক চা বিক্রেতাকে খুব বেশি পাত্তা দেয়নি স্থানীয়রা৷ কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র নন উন্নিকৃষ্ণনও৷ শেষ অবধি কাজে দিল যুবকের গ্রাম বদলের স্ট্র্যাটেজি। শুরুতে এক-দু’জন আগ্রহী হলেন দাবায়৷ তাঁরা দাবা খেলাও শুরু করলেন। ওদের দেখে আরও কয়েকজন, তাঁদের দেখে আরও অনেকে দাবার নেশায় পড়লেন।
জানা গিয়েছে, উন্নিকৃষ্ণন একাই তাঁর গ্রামের প্রায় সাতশো জনকে দাবা খেলার প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন৷ তাতেই ম্যাজিক ঘটে! মদ, জুয়ার নেশা ছাড়েন মারোত্তিচালের মানুষ, উন্নিকৃষ্ণননের মতোই দাবার প্রেমে পড়ে যান সকলে৷ এমন অবস্থা হয় যে একদিনও দাবা না খেলে থাকতে পারেন না গ্রামের মানুষ৷ ঘটে যায় ‘দাবা’নল! দেখতে দেখতে গাঁয়ের প্রবীণরাও দাবা খেলার মজা নিতে শুরু করেন। শামিল হন মহিলারাও। একেকজন হয়ে ওঠেন পাকা খেলোয়াড়৷
[আরও পড়ুন: বিদেশি আউট, ভারতীয় ইন! এয়ার ইন্ডিয়ার নয়া চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করল টাটা]
আজ আর চায়ের দোকান নেই। উপার্জনের জীবনেও উন্নতি হয়েছে ‘বিপ্লবী’ উন্নিকৃষ্ণনের। বর্তমানে তিনি একটি রেস্তরাঁর মালিক। তবে নিজের গ্রামেই রেস্তরাঁটি৷ চা-কফি আর টুকটাক খাবার পাওয়া যায় সেখানে। আর? যে কোনও সময় খুলে বসা যায় দাবার বোর্ড। দেওয়া যায় রাজা-মন্ত্রী-হাতি-ঘোড়ার মেধাবী চাল। ইচ্ছে থাকলে কী না হয়! একক প্রচেষ্টাতেও হয়। দেখিয়ে দিয়েছেন কেরলের মারোত্তিচালের যুবক।