নব্যেন্দু হাজরা: দোলের আগেই দাম চড়ছিল। আর এখন তো মধ্যবিত্তের ধরাছোঁয়ার বাইরে যেতে বসেছে মুরগির মাংস। বাজার হেরফেরে কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা ছুঁইছুঁই মাংসের দাম। গত সোমবারও ২২০-২৩০ টাকা যে মাংস বিকিয়েছে। এক সপ্তাহেই তার দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ টাকা। ঝোলা হাতে চিকেন কিনতে গিয়ে তাই রীতিমতো হোঁচট খেতে হচ্ছে আম-গেরস্তকে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে রেস্তরাঁয় চিকেনের আইটেমেও কমানো হয়েছে মাংসের পিসের সংখ্যা। কোথাও আবার বেড়েছে দামও।
মঙ্গলবার গড়িয়াহাট বাজারে কাটা মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২৮০ টাকায়। কলকাতায় গোটা মুরগির পাইকারি দর ছিল ১৬০ টাকা। জোগান কম থাকায় দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। মুরগির মাংসের পাশাপাশি বেড়েছে ডিমের দামও। কোথাও সাড়ে ছ’টাকা কোথাও আবার সাত টাকায় তা বিকোচ্ছে। তবে চৈত্র মাস পড়লে মাংসের দাম সামান্য কমলেও কমতে পারে। কিন্তু বৈশাখে বিয়ের মরসুম শুরু হলেই তার দাম ফের বাড়ার সম্ভাবনা। বিক্রেতারা অবশ্য জানাচ্ছেন, আগের তুলনায় যেমন হোটেল-রেস্তরাঁর সংখ্যা বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে চাহিদাও। ফলে বিয়েবাড়ি না থাকলেও রেস্তরাঁর চাহিদা তুঙ্গে থাকে সমসময়। তাই চৈত্র মাসেও যে দাম কমবেই এমনটা হলফ করে বলা যায় না।
[আরও পড়ুন: মে মাসেই প্রাথমিকে ১২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ! বিরাট ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রীর]
বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, গত এক মাস ধরেই বিয়ের মরশুম চলছে। তার উপর দোল, হোলি গেল। ফলে চাহিদা চড়া এই সময়ে। অথচ মুরগির জোগান কম। বেশ কয়েকমাস ১৮০-২০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে মুরগির মাংস। কিন্তু দিন পনেরো ধরে মাংসের দামের ঊর্ধ্বগতি চোখে পড়েছে। যা নিয়ে চিন্তায় আমগেরস্ত। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এই সময় মানে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে মুরগির উপর ভাইরাসের আক্রমণ হয়। ফলে ৩০-৪০ শতাংশ মুরগি মারা যায়। তারই প্রভাব পড়ে বাজারে। দাম বাড়ে এই সময়। তাছাড়া বিয়ের মরসুম তো রয়েছে। মুরগির খাবারের দামও বেড়েছে। বিশেষত ভুট্টার দাম। সবমিলিয়ে বঙ্গে মুরগি বেশ মরার্ঘ্য। তারই প্রভাব পড়ছে রেস্তরাঁর মাংসের ডিসে। বাইপাসের ধারের এক নামজাদা রেস্তরাঁয় এক প্লেট চিলি চিকেনের দাম ছিল ২৪০ টাকা। ৮ পিস থাকতে তাতে। ইদানীং সেই সংখ্যা কমিয়ে ছ’পিস করা হয়েছে।
অন্যান্য মাংসের ডিসের ক্ষেত্রেও একই জিনিস হয়েছে। মালিকের কথায়, দাম বাড়ালে ক্রেতা মুখ ঘোরাবে। কিন্তু যে হারে দাম বেড়েছে, তাতে চিকেনের সংখ্যা কমানো ছাড়া উপায় নেই। ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশেনের সাধারণ সম্পাদক মদন মোহন মাইতি বলেন, ‘‘২৫০ টাকা কেজিতে মুরগির মাংস খুচরো বাজারে বিক্রি হলে চাষি কিছুটা আয় দেখে। মুরগির খাবারের দাম যা বেড়েছে, তাতে দাম কমিয়ে বিক্রি করলে চাষিরা না খেতে পেয়ে মারা যাবেন। তবে খুচরো দোকানদার যা দাম চায়, তা একটু যাচাই করাও উচিত ক্রেতার।’’