সুকুমার সরকার, ঢাকা: রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবির নিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাবে অবশেষে রাজি চিন। মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে রাখার জন্য ‘সেফ জোন’ বা নিরাপদ এলাকা তৈরি করতে রাজি হয়েছে চিন। ঢাকায় বিদেশ মন্ত্রকের একজন ঊর্ধ্বতন আধিকারিক নিশ্চিত করেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সেফ জোন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে চিনের সঙ্গে আলোচনায় ইতিবাচক ফল মিলেছে। রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে সম্মত হয়ছে চিন।
রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ভারত, চিন, মায়ানমার ও আসিয়ান সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। রাখাইন প্রদেশে তাদের নিরাপদে রাখার জন্য একটি সেফ জোন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে এক বছর আগেই প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে মায়ানমারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ওই প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হয়। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের অভ্যন্তরে সেফ জোন প্রতিষ্ঠা হলে আন্তর্জাতিক মহলের সেখানে কর্তৃত্ব করার সুযোগ মিলবে। এই যুক্তি তুলে ধরে সেফ জোন প্রতিষ্ঠা থেকে সরে আসে মায়ানমার।
[বাংলাদেশ পৌঁছালেন নয়া ভারতীয় হাই কমিশনার রিভা গঙ্গোপাধ্যায় দাস]
গত বছরের নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয় বাংলাদেশ ও মায়ানমার। সবকিছু চূড়ান্ত হলেও শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করার বিষয়টি ভেস্তে যায় মায়ানমারের ভূমিকায়। রোহিঙ্গাদের তরফে সেসময় যুক্তি দেওয়া হয়, রাখাইনে ফেরার মতো নিরাপদ পরিবেশ নেই। তাই সেখানে ফিরে যেতে চান না তাঁরা। একই যুক্তি খাড়া করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও। তখনকার মতো রোহিঙ্গাদের বাড়ি ফেরানোর বিষয়টি স্থগিত করে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে আবারও সেফ জোন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ফের জোর দেয় বাংলাদেশ। কারণ, মায়ানমারে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি না হলে, রোহিঙ্গাদের ফেরানো সম্ভব নয় বলে বুঝতে পারেন সরকারের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরা। তাই সেফ জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মায়ানমারের ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, এমন দেশ হিসেবে চিনের সঙ্গে আলোচনার রাস্তা নেয় বাংলাদেশ। কয়েক দফা আলোচনার পর চিন বাংলাদেশের এই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রশাসন সূত্রে খবর।
[জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে চিরপ্রস্থান বইপ্রেমী পলান সরকারের]
অন্যদিকে, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশের ত্রাণ মন্ত্রক সূত্রে খবর, ১০ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে সাহায্য করবে ওয়াশিংটন। এই অর্থ রোহিঙ্গা পরিবারগুলির খাদ্য, বাসস্থান এবং পুষ্টিদানের জন্য ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। বাংলাদেশের অন্তত ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়া যাবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার জানিয়েছেন, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির আওতায় রোহিঙ্গাদের এনে তাঁদের খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছডাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ এলাকা প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য চেয়ে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির কাছেও নতুন করে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মায়ানমার নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ সভায় বিদেশ সচিব এম শহিদুল হক যে তিন দফায় প্রস্তাব দিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম হল সেফ জোন প্রতিষ্ঠা। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রসংঘের অধিবেশনেও সেফ জোন প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। চিন এতে রাজি হওয়ায় বাকিরাও ধীরে ধীরে রোহিঙ্গাদের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেবে বলে আশা হাসিনা প্রশাসনের।
The post রোহিঙ্গাদের পাশে চিন, বাংলাদেশের প্রস্তাব মেনে ‘সেফ জোন’ তৈরিতে সায় appeared first on Sangbad Pratidin.