অভিরূপ দাস: নকশায় বড়সড় গলদ। সবশুদ্ধ চৌচিড় হয়ে যেতে পারে যে কোনও মুহূর্তে। সবদিক খতিয়ে দেখে চিংড়িঘাটা উড়ালপুল ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত জানালেন ফিরহাদ হাকিম। সে জায়গায় তৈরি হবে নতুন ব্রিজ। দক্ষিণ কলকাতার সঙ্গে সল্টলেক তথা সেক্টর ফাইভের মেলবন্ধনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেতু এটি।
বৃহস্পতিবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) জানিয়েছেন, ব্রিজ তৈরি হওয়ার সময়ই নকশায় গলদ ধরা পড়েছিল। উড়ালপুল বিশেষজ্ঞরা বলেছিল, ভবিষ্যতে এটা ভাঙতেই হবে। সেটাই সত্যি হল। বাম আমলে, ২০০৪ সালে তৈরি হয়েছিল এই উড়ালপুল। উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রশ্ন উঠছে, নকশায় গলদ থাকলেও সে সময় কেন তা আমজনতার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল?
[আরও পড়ুন: জনতার পছন্দের প্রার্থী বিরোধী শিবিরের হলে তৃণমূলের পদক্ষেপ কী? জানালেন অভিষেক]
শুরুর দিন থেকেই এ উড়ালপুল জুড়ে একের পর এক ঝঞ্ঝাট। মেরামত করা হয়েছে, ফের নতুন গর্ত হয়েছে নতুন জায়গায়। ৯.৩ কোটি টাকা দিয়ে তৈরি উড়ালপুলে বড়সড় ফাটল দেখা যায় ২০১৬ সালে। সেসময় কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভলপমেন্ট অথোরিটি ফাটল যাচাই করে জানিয়েছিল, মেরামত করতে হবে অবিলম্বে। ২০১৯ সালে ফের একবার এই উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ভারী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেসময় কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভলপমেন্ট অথোরিটির ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছিলেন, উড়ালপুলের পিলারের যা অবস্থা তাতে ভারী যান বহনের ক্ষমতা নেই। বৃহস্পতিবার ভোরে ধস নামে চিংড়িঘাটা উড়ালপুলে। কমিয়ে দেওয়া হয় গাড়ির গতি। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের এই সেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফি দিন হাজার হাজার গাড়ি যাতায়াত করে এখান দিয়ে। সল্টলেকের কর্মসংস্থানের ‘নিউক্লিয়াস’ তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র তো বটেই, বিমানবন্দর এমনকি রাজারহাট-নিউটাউন যেতে গেলেও অন্যতম অবলম্বন এই সেতু। বাধ্য হয়েই শেষমেশ এই উড়ালপুল ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল কেএমডিএ। কলকাতার মেয়র তথা কেএমডিএ চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যে গর্ত বুজিয়ে মেরামত চলছে। কিন্তু এভাবে বেশিদিন চলবে না।
ইঞ্জিনিয়াররা বলছেন, নকশায় গলদ তো বটেই। ব্রিজের করুণ অবস্থার জন্য দায়ী মেট্রোর কাজও। এই রাস্তাতেই নিউগড়িয়া-এয়ারপোর্ট রুটে মেট্রোর কাজ চলছে। পেল্লায় সব বিম বসেছে ফ্লাইওভারের গায়ে গায়ে। উড়ালপুল দুর্বল ছিলই। বিম বসানোর সময়ে কম্পনে ফ্লাইওভার আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, মেট্রোর কাজের জন্যই বিপত্তি বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ। এদিন কেএমডিএ আধিকারিকরা চিংড়িঘাটা উড়ালপুল পরীক্ষা করে তার ছবি তুলে নিয়ে যান।