নব্যেন্দু হাজরা: সান্টা নয়, বড়দিনে মাথায় টোপর, গলায় মালা পরে পার্কস্ট্রিটে মোড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ‘বর’। একজন নন, ৩ জন। পরনে ধুতি, পাঞ্জাবি, মাথায় বিয়ের টোপর। গলায় বিয়ের মালা। পায়ে কোলাপুরি চটি। বড়দিনে (Christmas 2021) সাহেবপাড়ায় এমন ‘রেডিমেড বর’দের দেখে হতভম্ব আম জনতা।
কেউ বলছেন, ‘‘বর কি বিয়ের পিঁড়ি ছেড়ে পালিয়ে পার্কস্ট্রিটে এসেছেন! নাকি বউ পালিয়েছে দেখে বর তাঁকে খুঁজতে বেড়িয়েছেন। কিন্তু এ মাসে তো আবার বিয়ে হয় না। তাহলে!’’ কেউ আবার বলে উঠলেন, “বর সেজে বড়দিনে পাত্রী খুঁজতে এসেছেন হয়তো তিনজন। এইদিন তো প্রচুর মহিলা দেখা যায় এই চত্বরে। তাই পছন্দ হলেই একেবারে মালাবদল করে বাড়ি নিয়ে যাবেন হয়তো।” তিন পাত্রকে ঘিরে সাহেবপাড়ার মোড়ে বড়দিনের বিকেলে এভাবেই লেগে থাকলে জটলা। যে জটলা ছাড়াতে আসতে হল পুলিশকে। শীতের বিকেলে অফশোল্ডার পরা তন্বী থেকে শুরু করে শহর ঘুরতে আসা হরিপালের যুবক, সকলেই মগ্ন রইলেন সেলফি তুলতে। ভিড় এমন হলে যে পুলিশকে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই ‘জামাই’দের বিদায় দিতে হল পার্কস্ট্রিট থেকে। কিন্তু এমন পোশাকে এই দিনে এই তিন ব্যক্তির এখানে দাঁড়ানোর কারণটা কী?
[আরও পড়ুন: ‘বড়লোক’ মেয়ের সঙ্গে প্রেম! রেললাইনের ধারে উদ্ধার কিশোরের দেহ, খুনের অভিযোগ পরিবারের]
পাত্র সেজে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকরা জানালেন, একটি নতুন ‘বিবাহ বিজ্ঞাপনী সংস্থার’ প্রচার করতে তাঁরা আসেন। অভিনব এই প্রচার মুহূর্তেই সুপারহিট। যাঁরাই তাঁদের সঙ্গে ছবি তুলতে আসছেন, তাঁদেরই হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে সংস্থার কার্ড। গড়িয়ার বাসিন্দা প্রণব সর্দার, বেহালা চৌরাস্তার সমিত কর্মকারের পাশে ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার পিয়ালীর এক বাসিন্দা। ২৫ ডিসেম্বরের সক্কাল সক্কালই চলে এসেছিলেন বর সেজে। অবশ্য বাস্তবে তিনজনেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
প্রণববাবু বলেন, “এই পোশাকে বউ দেখে তো একেবারে ঘাবড়ে গিয়েছে। আমরা এই বিবাহের বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করি। কিন্তু এর আগে এমন কখনও সাজিনি।” বড়দিনে সাহেবপাড়ায় এসে সান্টার সঙ্গে সেলফি তুলবে ভেবেছিল বাঘাযতীনের সুদক্ষিণা। কিন্তু মেট্রো থেকে নেমে পা চালাতেই চোখের সামনে দাঁড়িয়ে টোপর পরা বর। তাই সামনে না এগিয়ে আগেভাগেই তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলে ফেলেন তিনি। বললেন, “বাড়ি থেকে বিয়ের কথা বলছে। আমি বলেছি করব না। কিন্তু ফেসবুকে যদি এমন বরকে সঙ্গে নিয়ে ছবি দিই, সবাই ঘাবড়ে যাবে।”
এদিন বিকেলের পর থেকেই যে ভিড় আছড়ে পড়েছিল পার্কস্ট্রিটে। তাতে জামাইদের তো ধুতি খুলে যাওয়ার জোগাড়। বড় কষ্টে সামলেছেন তিনজন। ফুটপাত জুড়ে শুধুই মানুষের পা। আলো ঝলমলে সাহেবপাড়া মেতে উঠল বড়দিনের উৎসবে। সন্ধের পর থেকে ঘড়ি কাঁটা যেমন এগিয়েছে, মানুষের মাথা ততই বেড়েছে। তবে তারই মধ্যে বড়দিনে সান্টাবুড়োর পাশাপাশি আম-আদমির হুড়োহুড়ি নজরে এল এই তিনজন বরকে দেখে।