সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: 'ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোড়েঙ্গে, তোড়েঙ্গে দম মগর তেরা সাথ না ছোড়েঙ্গে...', সোমবার দুপুরে মুম্বইয়ের ভিলে পার্লে শ্মশান যেন 'শোলে'র সেই 'দোস্তি'র সাক্ষী থাকল। শেষবারের মতো 'বীরু' ধর্মেন্দ্রকে দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন 'জয়' অমিতাভ বচ্চন। শ্মশান থেকে ফেরার পরও বন্ধু বিয়োগের যন্ত্রণায় ডুকরে ডুকরে উঠেছেন! ধর্মেন্দ্রর প্রয়াণে যেন আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়লেন বিগ বি। সোমবার গভীর রাতের ব্লগ পোস্টে বীরুর সঙ্গে 'ইয়ে দোস্তি'র স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে অমিতাভের লেখা প্রতিটা ছত্রে সেই ব্যথাই যেন বার বার ফিরে ফিরে এল।
সোমবার রাত ২.২৫। ধর্মেন্দ্রকে নিয়ে কলম ধরলেন অমিতাভ। লিখলেন, "আরেকজন বীরবিক্রম আমাদের ছেড়ে চলে গেল। এই মঞ্চ ছেড়ে চলে গেল। এক অসহ্য নীরবতা দিয়ে গেলে ধর্মজি। তুমি মহত্ত্বের প্রতীক। শুধু শারীরিক উপস্থিতি নয়, বড় মনের অধিকারী ধর্মজির সরলতা বারবার মুগ্ধ করেছে আমাদের। কালের নিয়মে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও বহু বদল এসেছে কিন্তু ধর্মেন্দ্র চিরন্তন। ওঁর নম্র ব্যক্তিত্ব, সারল্য, চার্ম কোনওদিন বদলে যেতে দেখিনি। পাঞ্জাবের ভূমিপুত্র হিসেবে যে মাটির স্বাদ নিয়ে এসেছিলেন চিরকাল সেটাই বজায় রেখেছেন। গত কয়েক দশকে সিনেইন্ডাস্ট্রি অনেক পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছে, সৌভ্রাতৃত্ববোধও বদলেছে কিন্তু ধর্মেন্দ্রর গৌরবময় ফিল্মি আখ্যানজুড়ে সেই মাটির গন্ধ রয়ে গিয়েছে। এমন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, চার্মিং ন্যাচার, বড় মন এই পেশায় খুবই বিরল। আমার চারপাশের বাতাস কেমন ভারী হয়ে আসছে! এই শূন্যতা কোনওদিন ভরাট হবে না। প্রার্থনা রইল।"
'শোলের' সেই 'জয়-বীরু' জুটি।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরেই 'শোলে'র পঞ্চাশতম বর্ষপূর্তি। তবে সময় গড়ালেও 'জয়-বীরু'র বন্ধুত্বের সমীকরণ বদলায়নি। বয়সে ধর্মেন্দ্র বড় হলেও অনুজ অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে বরাবর সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন বীরু। সম্প্রতি ধর্মেন্দ্র হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর নিজে গাড়ি চালিয়ে তাঁর জুহুর বাংলোতে গিয়েছিলেন দেখা করতে। অনেকেই হয়তো জানেন না, ফিল্মি কেরিয়ারে যখনই কোনও পরামর্শের প্রয়োজন হয়েছে, অমিতাভ নিজে ধর্মেন্দ্রর কাছে ছুটে গিয়েছেন। কারণ বয়স এবং ইন্ডাস্ট্রির অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে ‘বীরু’ তাঁর থেকে বড়। অমিতাভ নিজেই এক অতীত সাক্ষাৎকারে সেকথা জানিয়েছিলেন। বিগ বি জানিয়েছিলেন, “আমরা আমাদের বন্ধুত্ব উপভোগ না করলে একসঙ্গে কাজ করতে পারতাম না। আর ধর্মেন্দ্র আমার খুব ভালো বন্ধু। প্রায়শই তার কাছে পরামর্শ নিতে যাই আমি। কারণ ইন্ডাস্ট্রিতে এমন অনেক পরিস্থিতি তৈরি হয়, যেটা কীভাবে মোকাবেলা করতে হবে, সেটা বুঝতে পারি না। ধর্মেন্দ্রকে জিজ্ঞেস করলে ও আমাকে ভালো পরামর্শ দিয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।” সোমবার দুপুরেও বন্ধুকে আলবিদা জানাতে ভিলে পার্লে শ্মশানে ছেলে অভিষেক বচ্চন, নাতি অগস্ত্য নন্দাকে নিয়ে হাজির ছিলেন অমিতাভ বচ্চন। উল্লেখ্য, ধর্মেন্দ্রর জীবনের শেষ ছবি 'ইক্কিস'-এও রয়েছে অমিতাভযোগ। বিগ বি'র নাতি অগস্ত্যর বাবার ভূমিকায় এই ছবিতে অভিনয় করেছেন ধর্মেন্দ্র। অতঃপর শোলে থেকে ইক্কিস এ যেন ধর্মেন্দ্র-অমিতাভের 'ইয়ে দোস্তি'র এক বৃত্ত সম্পন্ন করল।
