সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে অতিষ্ঠ শিল্পীরা। দিন কয়েক আগেই এআই জিবলির গ্রাসে চলে গিয়েছিল গোটা দুনিয়া! শুধু তাই নয়, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কল্যাণে তরতরিয়ে বেড়েছে ডিপ ফেক ভিডিওর সংখ্যা। এআই যুগে শিল্পীরা রীতিমতো অস্তিত্ব সংকটে ভোগা শুরু করেছেন। আঁকা, গান-বাজনা থেকে শুরু করে লেখালেখি, সব বিভাগেই থাবা বসিয়েছে কৃত্রিম এই প্রযুক্তি। এবার সঙ্গীতজগতে এআইয়ের ব্যবহার নিয়ে মারাত্মক ক্ষোভ প্রকাশ করলেন এআর রহমান।
সম্প্রতি সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের মুখোমুখি হয়ে রহমান আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, "এ তো অক্সিজেনে বিষ মেশানোর মতো, তবে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? জনপ্রিয় শিল্পীদের কণ্ঠে বিখ্যাত কিছু গান তো এতটাই অশ্রাব্য! আমি জানি না আজকাল কীসব ঘটছে। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার অতি অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। নইলে ভীষণ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে।" অস্কার, গ্র্যামি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী অবশ্য এখানেই থামেননি। তাঁর মত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এপ্রসঙ্গে রহমানের মন্তব্য, "প্রতিটি জিনিসেরই ভালো-খারাপ উভয় দিকটাই থাকে। কোনওদিন নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের সুযোগ পাননি, এমন মানুষদের জন্য AI-এর ভালো দিকগুলি ব্যবহার করুন। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অতিরিক্ত অপব্যবহার, আখেড়ে আমাদের জন্যই খারাপ হবে। এ যেন অক্সিজেনের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার মতো।"
সম্প্রতি রহমানের বিরুদ্ধে বহু বাদ্যশিল্পীকে বেকার করে দেওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, "রহমানের গানে অতিরিক্ত মাত্রায় প্রযুক্তির ব্যবহার হয়। সঙ্গীতদুনিয়ায় এহেন ডিজিটাল পরিবর্তনের ফলে বহু বাদ্যশিল্পী বেকার হয়ে পড়ছেন।" প্রবীণ গায়কের সেই খোঁচার পালটা গানে প্রযুক্তির ব্যবহারে সায় দিয়ে রহমান জানান, "এটা বাদ্য শিল্পীদের কোণঠাসা করার বিষয় নয়, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির প্রভূত উন্নতি সাধন এবং সঙ্গীতে নতুন সৃজনশীলতার অন্বেষণেই এমন এক্সপেরিমেন্ট করা হয়। এরপরই 'মোজার্ট অফ মাদ্রাজ' বলেন, "আমি তো সম্প্রতি দুবাইতে ৬০ জন মহিলাকে নিয়ে একটা অর্কেস্ট্রা টিমের আয়োজন করলাম। ওঁদের প্রত্যেক মাসে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। এছাড়াও বিমা, স্বাস্থ্য এবং সবকিছুর জন্য আর্থিক সাহায্য করি। আমি যখন কোনও সিনেমায় কাজ করি, সেটা ‘ছাবা’ হোক বা ‘পন্নিয়িন সেলভান’, আমার কাজের সঙ্গে প্রায় ২০০-৩০০ জন শিল্পী যুক্ত থাকেন। কোনও কোনও গানে তো আবার একশো জনেরও বেশি কাজ করেন। আসলে আমি ছবি পোস্ট করে দেখনদারি করি না। তাই কেউ জানতেও পারেন না। যেসমস্ত সিনেমায় আমি কাজ করেছি, সেসব ছবির প্রযোজকদের গিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারেন, তাঁরাই বলে দেবেন, আমার কেরিয়ারে কতজন সঙ্গীতশিল্পীদের নিয়ে আমি কাজ করেছি।"
রহমান আপাতত মোদি সরকার আয়োজিত WAVES সম্মেলনের জন্য 'দ্য ওয়ান্ডারমেন্ট ট্যুর'-এর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগামী পয়লা মে থেকে শুরু হয়ে এই কনসার্ট চলবে ৪ দিন। আপাতত তাঁর হাতে একগুচ্ছ কাজ রয়েছে। আনন্দ এল রাইয়ের 'তেরে ইশক মে', মনিরত্নমের 'ঠাগ লাইফ', রাজকুমার সন্তোষীর 'লাহোর ১৯৪৭' থেকে শুরু করে মীনা কুমারির বায়োপিক, হনসল মেহেতার 'গান্ধী সিরিজ'-এর মতো একাধিক সিনেমার মিউজিকের দায়ভার তাঁর কাঁধে। জানা গেল, 'চমকিলা'র পর আবারও ইমতিয়াজ আলির নতুন ছবির জন্য গান বাঁধবেন তিনি।