shono
Advertisement
Dharmendra

'সানি-ববিরা আমার কাঁধে মাথা রেখে হাউহাউ করে কাঁদল...', ধর্মেন্দ্রর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বিশ্বজিৎ

'তোমাদের বাবা রথে চেপে স্বর্গযাত্রা করেছেন', ধর্মেন্দ্রর চিতার সামনে দাড়িয়ে সানি দেওলকে বলেন বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
Published By: Sandipta BhanjaPosted: 12:06 PM Nov 25, 2025Updated: 12:06 PM Nov 25, 2025

বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়: আমি আমার বন্ধুকে হারালাম । ধরম সকলের কাছে সুপারস্টার হলেও আমার বন্ধু। আমরা প্রায় সমসাময়িক। তবে শেষ দেখা আর পেলাম না। ধরম অসুস্থ হওয়ার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই আমাদের দেখা হয়নি। কাল যখন পৌঁছই, তখন চিতা জ্বলছে। আসলে ববি-সানিরা ইচ্ছে করেই দেরি করে খবরটা দিয়েছে, মিডিয়ার ভিড় এড়ানোর জন্য। ওখানে আমার সায়রা বানুর সঙ্গে দেখা হল। সেখান থেকে হেমাজির বাড়িতে এসে অনেকক্ষণ বসেছিলাম। আমরা পুরনো কথা বলছিলাম। ১৯৭৫ সালে 'শোলে'র বছরেই ধর্মেন্দ্র, হেমা মালিনী এবং শত্রুঘ্ন সিনহা আমার পরিচালনায় কাজ করে। আজ হেমাজি সেই পুরনো কথা তুললেন। তবে তিনি অনেকটাই সামলে নিয়েছেন মনে হল। ববি আর সানি খুব ভেঙে পড়েছিল। আমার কাঁধে মাথা রেখে হাউহাউ করে কাঁদছে। ওদের দেখে আমিও কাঁদছি। 'ইশক পর জোর নেহি'র সেটে সানিকে কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে এসেছিল ধরম। সানি তখন স্কুলে পড়ে। আজ সানি সেই ফ্ল্যাশব্যাকে চলে গিয়েছিল।

Advertisement

আমরা সমসাময়িক বলে অনেকেই ভাবতে পারেন, রেষারেষি ছিল, কিন্তু হেলদি কম্পিটিশনের চাইতেও আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল অনেক বেশি। ধর্মেন্দ্রর মত সৎ, নির্ভীক, স্পষ্টবক্তা মানুষ আমি কম দেখেছি। অহংকারী মানুষ একেবারেই সহ্য করত না। এবং সামনে যত বড় মানুষই থাকুক না কেন চাটুকারিতা করতে ওকে কোনদিন দেখিনি বা শুনিনি। শুধু তাই নয় খুবই পরোপকারী ছিল ধরম। মানুষের দুঃখে পাশে দাঁড়াত। টেকনিশিয়ানরা হয়তো তাদের পাওনা টাকা পায়নি, ধরম প্রযোজককে বলত, 'আগে টাকা মেটান তারপর শুটিং করব।' এইভাবে স্ট্যান্ড নিতে দেখেছি ওকে। আসলে নিজে খুব ছোট জায়গা থেকে বড় হয়েছে। ও শ্রমের মূল্য জানে। এক চাষির ঘরের ছেলে ছিল। সেই মাটির ছেলে মুম্বই এসে সকলের মন জয় করে উজ্জ্বল এক তারা হয়ে উঠেছিল। কিন্তু নিজের শিকড় ভুলে যায়নি, মানুষের দুঃখের কথা, কষ্টের উৎস ও বুঝত। আমি বোধহয় ৬ -৭ টা ছবি করেছি ওর সঙ্গে। ভালো মনেও নেই। এটা 'শোলে'র ৫০ বছর। সবার মতো 'শোলে' আমারও খুব প্রিয় ছবি। কিন্তু আমার আজকে আরও দুটো ছবির কথা বলতে ইচ্ছে করছে— 'ফুল অউর পত্থর' ও হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ছবি 'সত্যকাম'। 'সত্যকাম' ধর্মেন্দ্রর খুব অফবিট ছবি। আমার খুব ভালো লেগেছিল। ওর কথা বলতে শুরু করলে আর শেষ করা যাবে না। ওর ফার্ম হাউজে গেলে সবসময় আপ্যায়ন করত। 'সরসো কি শাক' আর 'মকাই কি রোটি' ছিল বাঁধা মেনু। গরমে শুটিংয়ে ছাঁস নিয়ে এলে ওর কেয়ারটেকারকে বলত, আগে বিশুকে দে তারপর আমায় দিস। ধরম আমাকে বিশু বলেই ডাকত, আর আমি ধরম বলে।

কাল ধরমের চিতার সামনে দাড়িয়ে সানিকে বললাম, "চিন্তা কোরো না তোমাদের বাবা রথে চেপে স্বর্গযাত্রা করছেন, আর সেখানে ও রয়্যাল রিসেপশন পাবে।" সানির খুব ভালো লেগেছিল কথাটা, আমাকে বলল, "ইয়েস ইউ আর রয়্যাল, পাপা ওয়াজ রয়্যাল।" আমার ছবি 'অগ্নিযুগ: দ্য ফায়ার'-এ ধরমের শেষ ছবি। আমাকে বলেছিল ওর অংশটুকু দেখতে চায়, আমি চেষ্টাও করেছিলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর দেখানো হল না। ওর অসুস্থতার পর আমি রোজ মেসেজ করতাম–'গেট ওয়েল সুন, তুম জিও হাজারো সাল।' ওর ছায়াসঙ্গী জয়রাজ যে ওর সেবা করত আমাকে দেখেই বলল আপনি তো আজও ভোরে মেসেজ করেছেন। বলেই কেঁদে ফেলল। আমি ভেবেছিলাম আগামী ৮ ডিসেম্বর, ধরমের জন্মদিনে দেখা করব। ওর ৮, আমার ১৪– আমাদের পিঠোপিঠি জন্মদিন। বন্ধুর সঙ্গে শেষ দেখাটাও হল না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • টেকনিশিয়ানরা টাকা না পেলে প্রযোজককে বলত, আগে টাকা মেটান, তারপর কাজ করব, ধর্মেন্দ্রর স্মৃতিচারণায় বিশ্বজিৎ।
  • 'ওর অসুস্থতার পর আমি রোজ মেসেজ করতাম–'গেট ওয়েল সুন, তুম জিও হাজারো সাল': বিশ্বজিৎ।
Advertisement