বলিউডে সাফল্যের পরেও এই শহর টানে চন্দন রায় সান্যালকে। 'ডিয়ার মা' মুক্তির সময় তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে শম্পালী মৌলিক।
প্রায় কুড়ি বছর হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে, বলিউড-টলিউড মিলিয়ে, ‘রং দে বসন্তি’ দিয়ে শুরু। বলিউডে জায়গা তৈরি কতটা শক্ত ছিল?
... শক্ত বিষয়টা এখন রিলেটিভ। সময়ের সঙ্গে বুঝেছি এই সবটাই জীবনের অংশ, প্রসেসের পার্ট। আন্ধেরিতে যেখানে থাকি, এক সময় সেখানে কাজ খুঁজতে যেতাম। বিভিন্ন প্রোডাকশন অফিসে যেতাম অডিশন ইত্যাদির কারণে। অনেক বন্ধুরা মিলে যেতাম। একসঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে অডিশন দিতাম বা বিভিন্ন হাউসের অফিসে দেখা হত। আজকে এত বছর পর, সেখানেই হয়তো গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। গাড়ির জানালা দিয়ে দেখতে পাই, সেই সময় যারা আমার সঙ্গে ছিল, এখনও তেমনি রাস্তায় হেঁটে বেড়াচ্ছে, কাজ খুঁজছে। আর আমি সেখানে ইন্টারভিউ দিচ্ছি। বাংলা ছবি করছি। বেশ বড় বড় হিন্দি ছবি করেছি বা বড় পরিচালকদের সঙ্গে শো করছি। তখন গ্র্যাটিটিউড বোধ করি। মনে হয়, অনেকটাই পেয়েছি। উপরওয়ালা আমাকে অনেককিছু দিয়েছে। তখন আমার মনে হয়, হ্যাঁ, একসময় জীবনে অনেক কষ্ট ছিল। অনেক খামতি ছিল। কিন্তু আমার প্যাশন আর খিদে ছিল আর্ট আর ক্রাফ্টের জন্য, একটা ছোট রোলের জন্য। এখন ফিরে তাকাই স্বপ্নের মতো মনে হয়। কাজেই ডিফিকাল্টি হিসাবে দেখি না, এটা হল পদ্ধতির অংশ।
বাংলায় আপনি বেশ কজন ভালো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। অঞ্জন দত্ত, সুমন মুখোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত কিংবা এই আবার অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরির সঙ্গে করলেন। তা সত্ত্বেও কখনও মনে হয়, বাংলায় যথেষ্ট অফার পাননি?
... হ্যাঁ, অফার পাইনি হতেই পারে। অনেকেই আমাকে ডাকেনি। দ্যাটস অলরাইট। সৃজিতদা আমাকে অনেকবার ফোন করেছিল, আমরা ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু হয়ে ওঠেনি। তিন-চারবার এমন হয়েছে। আই অ্যাম অলওয়েজ ওপেন টু ওয়ার্ক উইথ মেনি মেনি ডিরেক্টর্স। মনে হয় আমি লাকি, বাংলায় যতটা কাজ করেছি, খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরিচালকদের সঙ্গে। কোয়ান্টিটির থেকে কোয়ালিটি ভালো আছে মনে হয়।
‘অপরাজিতা তুমি’-র এতদিন পরে অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরির সঙ্গে কাজ করলেন। কেমন হল?
...টোনিদার সঙ্গে প্রত্যেকবার দারুণ হয়। যখন ‘অপরাজিতা তুমি ’ করেছিলাম ওঁর সঙ্গে এত জানাশোনা ছিল না। এখন আমরা ফ্যামিলির মতো, ইন্দ্রাণীদি আর টোনিদার সঙ্গে। তারপরে আমরা একটা-দুটো হিন্দি কাজ করেছিলাম। কিন্তু বাংলা ছবি করলাম এত বছর পর। কাজ করি না করি আমাদের দেখা, সাক্ষাৎ হতেই থাকে। টোনিদা মুম্বই এলে আমি যাই ওদের বাড়ি, বা ওরা আমার বাড়ি আসেন। আমরা আড্ডা দিই, গান শুনি, সিনেমা নিয়ে গল্প হয়। যখন টোনিদা আমাকে ‘ডিয়ার মা’-এর জন্য ডাকল, আমি জানতাম আমার জন্য কিছু ভেবে রেখেছে। নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ ছবি, ফলে আমাকে করতেই হবে।
জয়া আহসানের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করলেন, ট্রেলারে দেখলাম ভালোই রসায়ন। তবু মনে হয়, প্রথম বার কাজে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়ে কতটা কমফর্টেবল?
... কমফর্টেবল তো হয় না। একটা মানুষের সঙ্গে প্রথমবার দেখা হলে কথা বলতেই সময় লাগে। সেখানে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য বা রোমান্টিক সিনে মানুষটাকে কিছুটা তো জানতেই হয়। জয়ার সঙ্গে আমাকে নিয়ে টোনিদা ওয়ার্কশপ করিয়েছে। পুরো স্ক্রিপ্টটা আমরা টোনিদার সঙ্গে পনেরো-কুড়িবার পড়েছি। জয়ার সঙ্গে গল্প করতে করতে উই বিকেম গুড ফ্রেন্ডস। জয়া খুব পেশাদার এবং অ্যাকমপ্লিশড অ্যাক্টর। ও জানে একটা সিন কী করে অ্যাপ্রোচ করতে হয়। প্রফেশনালি আমরা একটা স্পেসে ছিলাম, উই হ্যাভ আ গুড ডিরেক্টর। শি ইজ ভেরি বিন্দাস। কুল বলা যায় (হাসি)। সিন করার সময় ওর রিজার্ভেশন নেই, ও দৃশ্যটাই ভালো করতে চায়। ছবিতে আমি বাবার রোল করলেও, আমার মধ্যেকার মাদারহুড ধরতে চেয়েছে টোনিদা। আবার একসময় মনে হবে, জয়া ইজ প্লেয়িং দ্য ম্যান। খুব ইন্টারেস্টিং সিনটা লিখেছে টোনিদা।
বাংলা ছবি ছাড়াও বলিউডে বেশ কিছু সিরিজের জন্য আপনি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বিশেষ করে বলব ‘আশ্রম’-এর কথা। ‘আশ্রম’ কি জীবন বদলে দিয়েছে?
... নিশ্চয়ই। ‘আশ্রম’ দুনিয়ার সব জায়গায় লোকেরা দেখেছে। ড্রাইভার, সবজিওয়ালা বা বড় বিজনেস ম্যান–যেখানেই যাই সবাই ‘আশ্রম’-এর জন্য চিনতে পারে। এই চরিত্রটার (ভূপা স্বামী) একটা মাস অ্যাপিল আছে। যেটার জন্য ববির সঙ্গে দাঁড়াতে পারলাম আমি। এয়ারপোর্টে গিয়েও দেখেছি, সিআরপিএফ, সিকিউরিটি সকলেই জিজ্ঞেস করছে, পরের সিজন কবে আসবে। বা চেকিং করতে গিয়ে বলছে, ‘ভূপা স্বামী প্রণাম’। কুম্ভমেলায় গিয়েছিলাম, কত লোক যারা স্নান করতে গেছে, তারাও প্রণাম জানাচ্ছে। গডম্যান প্লে করাটা অদ্ভুত (হাসি)।
এই সিরিজে ববি দেওলের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
... ববি এখন আমার খুব কাছের বন্ধু। বড় ভাইয়ের মতো। সেটা লকডাউনের সময়, আমি একা থাকতাম। ববি রোজ ফোন করে খোঁজ নিত। আমরা অনেকক্ষণ ভিডিও কল করতাম। আমাদের তো তিনটে সিজন হয়ে গেছে ছয় বছরে। আমাদের বন্ধুত্ব দিনে দিনে আরও বেড়েছে। আমার কাজ দেখে ববি সবচেয়ে আগে ফোন করে। ‘আশ্রম’রাত বারোটায় রিলিজ করেছিল, ববি সকাল ছ’টায় ফোন করে ওর ভালোলাগার কথা জানিয়েছিল। খুব খোলা
মনের মানুষ ববি, কোনও হিংসে নেই।
বাংলায় আপনার লাস্ট রিলিজ ছিল, ‘নটী বিনোদিনী’, আর কোনও বাংলা ছবির প্রস্তাব পাচ্ছেন?
... না, কোনওই অফার আসেনি এখনও। আমি খুশি আশাবাদী ‘ডিয়ার মা’-এর পর। কলকাতায় কাজ করতে ভালো লাগে। অনেকে আমাকে অ্যাপ্রোচ করে না, ভাবে হয়তো যে হিন্দি সিনেমায় নাম করে বসে আছি, কেন করবে। এই রকম কিছু না, স্ক্রিপ্ট ভালো থাকলে কেন করব না (হাসি)।
