shono
Advertisement
Dharmendra

বলিউডের 'মিস্টার ডিপেন্ডেবল'! অমিতাভ 'শচীন' হলে ধর্মেন্দ্র 'দ্রাবিড়'

ছয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই ধর্মেন্দ্র হয়ে ওঠেন অবিসংবাদী নায়ক।
Published By: Biswadip DeyPosted: 03:30 PM Nov 24, 2025Updated: 04:46 PM Nov 24, 2025

বিশ্বদীপ দে: তিনি ছিলেন 'হিম্যান'। কিন্তু কেবল পেশিশক্তি নয়, তার সঙ্গে মুখসৌষ্ঠবের অনুপম মিশেলই তাঁকে অনন্য করে তুলেছিল। কেরিয়ারের প্রথম বড় হিট 'ফুল অউর পাত্থর'-এর নামটা যেন নায়ক ধর্মেন্দ্ররও (Dharmendra) 'সংজ্ঞা'! পাথরের মতো শারীরিক গঠন ও ফুলের কোমলতার ছাপসম্পন্ন মুখশ্রী। গত শতকের ছয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই ধর্মেন্দ্র হয়ে ওঠেন অবিসংবাদী নায়ক। তখন বলিউডের রুপোলি পর্দায় আবির্ভূতই হননি রাজেশ খান্না ও অমিতাভ বচ্চন। কয়েক দশক ধরে সাফল্য ধরে রাখার পরও বিগ বি-র মতো মেগাস্টারদের ছায়াতেই যেন থেকে যেতে হল ধরম পাজিকে। ভারতীয় ক্রিকেটে যেমন শচীন-সৌরভদের উত্তুঙ্গ স্টারডমের আড়ালে যেমন থেকে গিয়েছেন রাহুল দ্রাবিড়। ধর্মেন্দ্র সত্যিই বলিউডের 'মিস্টার ডিপেন্ডেবল'।

Advertisement

কত বড় তারকা ছিলেন ধর্মেন্দ্র? সবটা পরিসংখ্যানে মিলবে না নিশ্চয়ই। কিন্তু 'হিমশৈলের চূড়া'টুকু অন্তত তুলে ধরা যেতে পারে। এই বিষয়ে কোনও বিতর্ক থাকতে পারে না যে, অমিতাভ-ধর্মেন্দ্রর জীবনের সবচেয়ে বড় হিট 'শোলে'। ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক কে পেয়েছিলেন? উত্তরটা কিন্তু ধর্মেন্দ্রই। ততদিনে অমিতাভ স্টার হয়ে উঠলেও সুপারস্টার হতে পারেননি। মূলত পরপর সাফল্যের মধ্যে দিয়ে গিয়ে 'মুকাদ্দার কা সিকান্দার' (১৯৭৮) ছবির পরই সুপারস্টার হয়ে ওঠেন বিগ বি। অন্যদিকে সঞ্জীবকুমার কিন্তু ততদিনে বিরাট জনপ্রিয়। এঁরা কেউ নন, 'হায়েস্ট পেড অ্যাক্টর' হিসেবে পারিশ্রমিক পান ধর্মেন্দ্র। তিনি পেয়েছিলেন দেড় লক্ষ টাকা। অন্যদিকে 'ঠাকুর সাহাব' সঞ্জীব কুমার পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। অমিতাভ পান ১ লক্ষ। হেমার পারিশ্রমিক ছিল ৭৫ হাজার। ৩৫ হাজার টাকা পেয়েছিলেন জয়া বচ্চন। একেবারেই নতুন 'গব্বর' আমজাদ খান ৫০ হাজার। সেই সময়ে কার কেমন 'মার্কেট' ছিল, এখান থেকেই বোঝা যায়।

 

বলিউডের ইতিহাসে সাফল্যের বিচারে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে রাজেশ খান্নার নাম। টানা ১৭টি হিট ছবি দিয়েছিলেন 'কাকাজি'। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাওয়া এই সাফল্য তাঁকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতা করে রেখেছিল। অমিতাভের মহাতারকা হয়ে ওঠাও রাজেশের এই সাফল্যকে প্রতিস্থাপিত করতে পারেনি।
এই সাফল্যের ভিড়ে ধর্মেন্দ্রকে আলাদা করে সরিয়ে না রেখে উপায় নেই। ১৯৬০ সালে কেরিয়ার শুরু। যদিও প্রথম ছবি ‘দিল ভি তেরা হম ভি তেরে’ সাফল্যের মুখ দেখেনি। 'জয়'-এর মতো 'বীরু'কেও সাফল্যের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। ১৯৬৬ সালে 'ফুল অউর পাত্থর' ধর্মেন্দ্রকে একটা স্থায়ী জায়গা করে দিল। তার আগেই অবশ্য 'আয়ি মিলন কি বেলা'র মতো ছবি মুক্তি পেয়ে গিয়েছে। এরপর একে একে ‘অনুপমা’, ‘সত্যকাম’, ‘মেরা গাঁও মেরা দেশ’, ‘সীতা অউর গীতা’ ‘সমাধি’, ‘জুগনু’, ‘ইয়াদো কি বারাত’-এর সাফল্য ‘শোলে’-র মহাসাফল্যের আগেই ধর্মেন্দ্রকে সুপারস্টার করে তুলেছে। অবশ্য সেই সময় ধর্মেন্দ্রর শরীরে সামান্য বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করেছে। কেননা তিনি ততদিনে চল্লিশে পা রেখেছেন। কিন্তু 'ড্রিম গার্ল', 'শালিমার'-এর মতো সফল ছবি এরপরও করেছেন ধর্মেন্দ্র। আটের দশক পেরিয়ে এসে ১৯৯০ সালেও 'নাকাবন্দি', 'হামসে না টকরানা' কিংবা ১৯৯২ সালে 'তহেলকা' বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছে। অর্থাৎ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সাফল্যের সরণিতে থাকা। এরপর লিড অ্যাক্টরের ভূমিকা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন ধর্মেন্দ্র। আজকের শাহরুখ-সলমন-আমিররা ষাটেও 'সেক্সি' থেকে যেতে পারেন। ধর্মেন্দ্রর সময়টা অন্য ছিল। তিনি মোটামুটি সাতান্নতেই নায়ক হওয়া ছেড়ে দেন। এরপরও অবশ্য ছবি করেছেন। এমনকী, ২০২৩ সালে 'রকি অউর রানি কি প্রেমকাহিনি'তে অশীতিপর, অথর্ব ধর্মেন্দ্র দেখিয়েছিলেন তাঁর 'স্পার্ক' এখনও বর্তমান।

রাজেশ খান্নার স্টারডম ঢাকা পড়ে গিয়েছিল 'অ্যাংরি ইয়ং ম্যান'-এর আবির্ভাবে। কিন্তু ধর্মেন্দ্র নিজেকে আলোকবৃত্ত থেকে সরতে দেননি। রেকর্ড বলছে সারা জীবনে ধর্মেন্দ্রর হিট ছবির সংখ্যা ৭৪। যা বচ্চনরা তো বটেই, আজকের খানেদের থেকেও বেশি। কোনও কোনও সূত্র অবশ্য এর সঙ্গে জুড়ে দেয় আরও খান বিশেক ছবি, যা 'সেমি হিট'। সেটা ধরলে ধর্মেন্দ্রর সাফল্যের গ্রাফ আরও ঊর্ধ্বগামী হয়। তবে মনে রাখতে হবে, অমিতাভের 'হিট রেট' ধর্মেন্দ্র চেয়ে বেশি ছিল। অর্থাৎ শতাংশের নিরিখে বিগ বি-ই এগিয়ে।

তবে এসবই তো শুষ্ক পরিসংখ্যান। বলিউডের বাজারে ধর্মেন্দ্রর চাহিদার অঙ্ক কেবলই টাকার অঙ্কে কষা যাবে না। রুপোলি পর্দায় ধর্মেন্দ্রর ইমেজটাই এমন ছিল, নামেই টিকিট বিক্রি হয়ে যেত। অমিতাভ কিংবা রাজেশ খান্না, জিতেন্দ্র, বিনোদ খান্না, পরবর্তী সময়ে মিঠুন-অনিল কাপুরদের সঙ্গে টক্কর দিয়েও তিনি টিকে থেকেছেন দশকের পর দশক। বলিউডের 'শচীন' হয়ে পরপর ঝড় তোলা ইনিংস খেলেছেন অমিতাভ বচ্চন। দীর্ঘদেহী মানুষটার ব্যারিটোন ভয়েসে 'পিটার আব ইয়ে চাবি তো ম্যায় তেরে জেভ সে হি লুঙ্গা'য় ভেসে গিয়েছিল আসমুদ্র হিমাচল। কিন্তু তারই পাশে নীরবে পরপর সফল ইনিংস খেলে গিয়েছেন ধর্মেন্দ্রও। 'শোলে' ছবিতে বন্ধুর মৃত্যুশোকে ভেসে গিয়ে ধর্মেন্দ্র যখন ঘোড়ার চড়ে বসে গর্জে উঠতেন, 'গব্বর সিং, আ রাহা হুঁ ম্যায়'... তখন সেই প্রতিশোধস্পৃহা দর্শককেও অস্থির করে তুলত। শক্তি ও সাহসের অভূতপূর্ব মেলবন্ধনে 'হিম্যান' ধর্মেন্দ্রর 'বাজার' কেউ কেড়ে নিতে পারেনি। তিনি নিজের মতো করে ছবি করেছেন। দীর্ঘ দীর্ঘ সময় থেকে গিয়েছেন প্রাসঙ্গিক। 'মিস্টার ডিপেন্ডেবল'কে তাই ভুলবে না বলিউড।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • কয়েক দশক ধরে সাফল্য ধরে রাখার পরও বিগ বি-র মতো মেগাস্টারদের ছায়াতেই যেন থেকে যেতে হল ধরম পাজিকে।
  • ভারতীয় ক্রিকেটে যেমন শচীন-সৌরভদের উত্তুঙ্গ স্টারডমের আড়ালে যেমন থেকে গিয়েছেন রাহুল দ্রাবিড়।
  • ধর্মেন্দ্র সত্যিই বলিউডের 'মিস্টার ডিপেন্ডেবল'।
Advertisement