সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মধ্যরাতে সিনেমার কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন। আচমকাই রাস্তায় এক অসহায় বৃদ্ধাকে দেখতে পান পরিচালক জয়ব্রত দাস। আলুথালু বেশ। গায়ের পরনে কাপড় প্রায় খসে পড়েছে। ঠিকমতো হাঁটাচলাও করতে পারেন না ওই বৃদ্ধা। দু' হাতের উপর ভর দিয়ে কোনওমতে চলাফেরা করেন। এমতাবস্থায় ওই বৃদ্ধাকে দেখে তড়িঘড়ি ছুটে যান 'দ্য অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস' ছবির পরিচালক। তাঁর সঙ্গে সেইসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিচালক সৌরভ মুখোপাধ্যায়ও। দুজনেই ওই বৃদ্ধার নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা করেন। তবে লাভ হয়নি। কথায়বার্তায় বুঝতে পারেন তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। এরপরই অসহায় বয়স্কাকে বাড়ি ফেরানোর জন্য পুলিশের দ্বারস্থ হন জয়ব্রত।
ঠিক কী ঘটেছে? তখন মধ্যরাত। পরিচালক জয়ব্রত দাস এবং তাঁর সহকারী পরিচালক সৌরভ মুখোপাধ্যায় আসন্ন সিনেমা 'দ্য অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস'-এর সম্পাদনার কাজ শেষ করে দক্ষিণ কলকাতার সাউথ সিটি সংলগ্ন কাটজুনগর এলাকা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। সেইসময়েই রাস্তার মাঝে অদ্ভুতভাবে বসে থাকতে দেখেন একজন বৃদ্ধাকে। পরিচালকের কথায়,
উনি হাঁটতে পারছিলেন না। হাতে ভর করে কোনওমতে সামনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করছিলেন। বহু জিজ্ঞাসাবাদ করেও তাঁর ঠিকানা বা তাঁর নাম-পরিচয় জানতে পারেননি তাঁরা। এমনকী পরিচিত কারোর ঠিকানাও তাঁরা উদ্ধার করতে পারেননি। জয়ব্রত দাস জানালেন, বৃদ্ধা বিড়বিড় করে অনেক কিছু বলছিলেন। তবে সবটাই এত অসংলগ্ন ছিল যে, বোঝা যাচ্ছিল না। এর পর রাস্তা থেকে তাঁকে কোনরকমে তুলে এনে একখানে বসান তাঁরা। ওই মধ্যরাতে আশেপাশের প্রায় সমস্ত বাড়ির লোকজনকে জাগিয়েই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কেউ বৃদ্ধাকে চিনতে পারা তো দূরঅস্ত, তাঁর ঠিকানা পর্যন্ত বলতে পারেননি। এরপরই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন পুলিশে যোগাযোগ করার।
বৃদ্ধাকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য সৌরভ মুখোপাধ্যায়কে সেখানে বসিয়ে পরিচালক জয়ব্রত দাস সোজা চলে যান যাদবপুর থানায়। সেখানে সবটা জানানোর পর তৎক্ষণাৎ সার্জেন সন্দীপ রায় পুলিশের একটি টিম নিয়ে জয়ব্রতর সঙ্গে কাটজুনগরে আসেন। ঘড়িতে তখন ভোর চারটে। বৃদ্ধাকে গাড়িতে তুলে তারপর শুরু হয় আরেক প্রস্থ খোঁজ পর্ব। প্রায় ঘন্টা দুয়েক খোঁজের পর অবশেষে এক পথচারী ওই অসহায় বৃদ্ধাকে চিনতে পারেন। তাঁর বাড়িও দেখিয়ে দেন। জানা যায়, ওই বাড়িটিতে একাই থাকেন বৃদ্ধা এবং বার্ধক্যজনিত নানা কারণে তাঁর মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে। জয়ব্রত জানান, পুলিশ অত্যন্ত তৎপরতা এবং মানবিকতার সঙ্গে পুরো বিষয়টি দেখেছে। বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার পর সার্জন সন্দীপ রায় বৃদ্ধাকে আর্থিকভাবে সাহায্যও করেন। শুধু তাই নয়, বৃদ্ধার নিকটতম আত্মীয়র সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে ইতিমধ্যে। এবং পরিচালক জয়ব্রত একটি এনজিওর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন ভবিষ্যতে এই বৃদ্ধার দেখভালের জন্য।