সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিয়ে ভাঙার কষ্ট। বডি শেমিং। একটা সময় 'যন্ত্রণাবিদ্ধ' ছিলেন তিনি। তবে সেই সব সমালোচনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে অবশেষে রানে ফিরলেন স্মৃতি মন্ধানা। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ঝোড়ো ইনিংস উপহার ভারতীয় ওপেনারের। একই সঙ্গে মহিলাদের ক্রিকেট ইতিহাসে চতুর্থ খেলোয়াড় হিসাবে ইতিহাসও গড়লেন তিনি।
পলাশ পর্ব অতীত করে শ্রীলঙ্কা সিরিজের মধ্য দিয়েই ২২ গজে ফিরেছিলেন স্মৃতি মন্ধানা। কিন্তু কিছুতেই রান পাচ্ছিলেন না। ২৫, ১৪, ১ - এই ছিল সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে তাঁর রান। তবে কেরলের গ্রিনফিল্ড আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অবশেষে ছন্দে ফিরলেন তিনি। ফর্মে ফেরার ম্যাচে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করলেন স্মৃতি। দশ হাজারের গণ্ডি পেরনোর জন্য মাত্র ২৭ রানের প্রয়োজন ছিল। যা সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে সহজেই পেরিয়ে যান। মিতালি রাজ, শার্লট এডওয়ার্ডস এবং সুজি বেটসের পর এই মাইলফলক অর্জন করলেন স্মৃতি।
দ্রুততম মহিলা ক্রিকেটার হিসাবে দশ হাজারি ক্লাবে পৌঁছলেন স্মৃতি। ১০ হাজার রানে পৌঁছতে স্মৃতি নিলেন ২৮১ ইনিংস। ২৯১ ইনিংসে ১০ হাজার রানে পৌঁছেছিলেন মিতালি রাজ। তাছাড়াও শেফালি বর্মার সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে ১৬২ রান তুলে আরও এক নজির গড়েন স্মৃতি। মহিলাদের টি-টোয়েন্টিতে ভারতের যে কোনও উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটাই। ২০১৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৪৩ রানের জুটি ছিল এতদিন সেরা। সেই পার্টনারশিপও ছিল স্মৃতি-শেফালির নামে। অর্থাৎ নিজেদের নজির ভেঙেই এই প্রথম ভারতীয় জুটি হিসাবে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে দেড়শো পেরলেন তাঁরা।
বিশ্বকাপের পর ব্যক্তিগত পৃথিবীটা হঠাৎ করেই হতাশায় ভরে গিয়েছিল স্মৃতির। ২৩ নভেম্বর গায়ক পলাশের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার কথা ছিল তাঁর। গায়ে হলুদ থেকে মেহেন্দি, বিয়ের আগের নানা অনুষ্ঠানও হয়েছিল হইহই করে। কিন্তু তারপর? আচমকাই তছনছ হয়ে গিয়েছিল সব কিছু। বিয়ের দিন সকালেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন স্মৃতির বাবা শ্রীনিবাস মন্ধানা। তখনই বিয়ে স্থগিত করে দেওয়া হয়। পলাশ নিজেও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
পরে প্রকাশ্যে আসে, বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালীনই নাকি এক কোরিওগ্রাফারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন পলাশ। ফাঁস হয় অন্য এক মহিলার সঙ্গে পলাশের ঘনিষ্ঠ চ্যাটও। নেটিজেনদের বক্তব্য, সম্ভবত সেই কারণেই পলাশের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙেছেন স্মৃতি। এরপর যখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার লড়াই চালাচ্ছিলেন, তখন সোশাল মিডিয়ায় আক্রমণের শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে। কীভাবে? 'জীবনের ঝলক' শিরোনাম দিয়ে সম্প্রতি বেশ কিছু ছবি শেয়ার করেছিলেন স্মৃতি। যা সোশাল মিডিয়ায় ঝড় তোলে। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, সাদা গাউন পরা স্মৃতির ছবি দেখে অনেকেই আপত্তিজনক মন্তব্য করেন। এমনকী শরীরের গঠন নিয়ে কটূক্তিরও শিকার হতে হয়। 'নারীবিদ্বেষী' এবং 'অসম্মানজনক' মন্তব্য করে বসেন অনেকেই। কিন্তু রবিবার ছিল সেই দিন, যেদিন ছিল স্মৃতির জবাব দেওয়ার পালা। ব্যক্তিগত জীবনের সেই সব ঝড়ঝাপ্টা সামলে বিশ্বকাপ জেতার পর প্রথম বড় রান করে বুঝিয়ে দিলেন ক্রিকেটই তাঁর জীবনের প্রথম ভালোবাসা।
রবিবার ৩৫ বলে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন স্মৃতি। এর পরেই রানের গতিকে 'থার্ড গিয়ারে' নিয়ে যান বাঁহাতি ওপেনার। এর পরের ৩০ রান করেন মাত্র ১৩ বলে। শেষ পর্যন্ত ৪৮ বলে ৮০ রানের মারকাটারি ইনিংস খেলে মালশা শেহানির বলে আউট হন তিনি। তখন ভারতের রান ১৬.১ ওভারে ১৬৮। স্মৃতি ছাড়াও রান পেয়েছেন শেফালি বর্মা। ৪৬ বলে ৭৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি। এরপর বাংলার রিচা ঘোষ নেমে ১৬ বলে ৪০ রানের 'সাইক্লোনিক ইনিংস' উপহার দেন। অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর অপরাজিত থাকেন ১৬ রানে। ভারত ২০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে তোলে ২২১ রান। জবাবে শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ হয় ১৯১ রানে। ৩০ রানে জয়ী হয় ভারত। সিরিজের ফলাফল আপাতত ৪-০। পরের ম্যাচ ৩০ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার। হরমনপ্রীতদের লক্ষ্য থাকবে, পঞ্চম টি-টোয়েন্টি জিতে শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশ করা।
