সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পায়েল কাপাডিয়া কান-এ গ্রাঁ প্রি সম্মান পেয়ে ইতিহাস রচনা করলেন। ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট’ সিনেমা বানিয়ে বিশ্বের আঙিনায় যে দুর্দমনীয় মেয়ে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করলেন এবং সম্মানিত হলেন, একসময়ে পুণের FTII পড়ুয়া প্রতিবাদী পায়েল কাপাডিয়ার অনুদান বন্ধ করে দিয়েছিল ওই সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করার মাশুলও গুণতে হয়েছিল এই কানজয়ী বিস্ময় নারীকে। এবার সেই পায়েলকে শুভেচ্ছা জানালেন, খোদ প্রাক্তন FTII চেয়ারম্যান গজেন্দ্র সিং। তবে প্রশংসার সঙ্গে বিদ্রোহী পায়েলকে নিয়ে খোঁচা দিতেও ভুললেন তিনি।
সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমে গজেন্দ্র সিং জানালেন, ''কান চলচ্চিত্র উৎসবে পায়েলের পুরস্কার পাওয়া নিয়ে সত্য়িই আমরা গর্বিত। পায়েলের যে ট্যালেন্ট রয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না। তবে আমার মনে হয়, ট্যালেন্টের সঙ্গে অনুশাসনটাও থাকা খুব দরকার।''
[আরও পড়ুন: ক্যামেরা দেখেই লাজুক ঈশান, কোয়েলের হাত ছাড়িয়ে জড়িয়ে ধরল নুসরতকে, দেখুন ভিডিও]
সালটা ২০১৫। পুণের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার পড়ুয়া তখন পায়েল কাপাডিয়া। ঠিক সেই সময়েই বিজেপি ঘনিষ্ঠ অভিনেতা গজেন্দ্র চৌহান (Gajendra Chauhan) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। যিনি ‘মহাভারত’ সিরিয়ালের ‘যুধিষ্ঠির’ চরিত্রের জন্য দর্শকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে গজেন্দ্রর নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৎকালীন FTII-(Film and Television Institute Of India) এর পড়ুয়ারা। ১৩৮ দিনের বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ক্লাসেও যোগ দেননি তাঁরা। পুণের থানায় তখন ৩৫ জন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হয় এফআইআর। সেই কাণ্ডে গ্রেপ্তার হন ৭ জন। এমনকী রাজকুমার রাও, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি, অনুপম খেররাও ফিল্ম ইনস্টিটিউডের পড়ুয়াদের বিক্ষোভের বিরোধিতা করেছিলেন সেসময়ে। শোনা যায়, সেই ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ঝানু বড়ুয়ারা।
যে ৩৫ জন ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ হয়েছিল, সেই তালিকায় ছিলেন এই পায়েল কাপাডিয়াও। শেষমেশ পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের পড়ুয়াদের চার মাসের বিদ্রোহের জেরে চাপের মুখে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন গজেন্দ্র চৌহান। পায়েলদের মাশুলও অবশ্য গুণতে হয়েছিল এর জন্য। বন্ধ করে দেওয়া হয় তাঁদের অনুদান। এমনকী হোস্টেল থেকেও বের করে দেওয়া হয়! নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় পায়েলদের ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে’ যাওয়ার পথ। আজ সেই প্রতিবাদী ছাত্রী পায়েল কাপাডিয়ার কান জয়ের সাফল্যে হাততালি দিচ্ছে গোটা দেশ। গোটা বিশ্ব।
রাজরোষে পড়া পায়েল কাপাডিয়া কিন্তু এর আগেও কানের মঞ্চে সম্মানিত হয়েছেন। পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের উপর হিন্দুত্ববাদ রাজনীতির প্রভাব নিয়ে একটা তথ্য চিত্র তৈরি করেছিলেন তিনি। আর সেই ডকু ফিচারই ২০২১ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের মেয়ে পায়েলের হাতে এনে দেয় প্রথম কান জয়ের স্বাদ। সেইবার তিনি পান গোল্ডেন আই পুরস্কার। ২০১৭ সালেই কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তাঁর শিঁকে ছেঁড়ে। সেবছর স্টুডেন্ট ফিল্ম বিভাগে সেরা ১৬-র তালিকায় নাম ওঠে পায়েল কাপাডিয়ার ছবি ‘আফটার নুন ক্লাউড’-এর। এবার বছর আটেক বাদে কানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার গ্রাঁ প্রি জিতে নিলেন।