১০ জানুয়ারি মুক্তি পেতে চলেছে ইশা সাহা অভিনীত নতুন ছবি 'অপরিচিত'। ছবি, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিশেষ আড্ডায় অভিনেত্রী। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
নতুন বছর পড়ে গিয়েছে, কেমন কাটল ২০২৪?
ইশা: গত বছর আমার বড় রিলিজ তেমন কিছু ছিল না। এবং সেটাও এনজয় করেছি। তাড়া নেই, ভিড় নেই, প্রোমোশনের চাপ নেই। এই ছবি রিলিজ, আবার গালমন্দ করবে– এই আশঙ্কা নেই। কিংবা ফেসবুকে রিভিউয়ের ছড়াছড়ি, ব্যক্তিগত আক্রমণ– এই টেনশনটা ছিল না। ওটা একটা মারাত্মক স্ট্রেস।
সোশ্যাল মিডিয়া ট্রোলিং কতটা শান্তি বিঘ্নিত করে?
ইশা: শুরুর দিকে অনেক বেশি অস্বস্তিতে ভুগতাম, এখন তাও বলতে পারো গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। আর এদের সবেতে বক্তব্য থাকে। আর অযাচিত জ্ঞান দেওয়ার প্রবণতাও খুব বেশি। এইসব জ্ঞান আর ট্রোলিং আমার দিকে এলে আমি পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। ২০২৪-এ নিজের মতো ছিলাম, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কারণ এই বছরটায় কাজ এমনিতেই কম ছিল। ২০২৪ ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুব ভালো বছর নয়। টেকনিশিয়ানদের স্ট্রাইক হল। আর তারপর আর জি কর-এ ঘটনা ঘটল। এবং এই ঘটনা প্রত্যক্ষভাবে, পরোক্ষভাবে সবাইকে প্রভাবিত করেছে। কেউ সেটা নিয়ে সরব হয়েছে,
কেউ চুপ থেকেছে।
আপনি সেভাবে সরব হননি, আর জি কর-এর সময়!
ইশা: আমি চুপ ছিলাম মানে যে আমার ওপর প্রভাব পড়েনি এমন নয়। সবাই সবার মতো করে সারভাইভ করে। আমি চুপ করে যাই সেটা আমার স্বভাব। কেবল এই ঘটনা নয়, ব্যক্তিগত পরিসরে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তাই।
নতুন বছরে মুক্তি পাচ্ছে জয়দীপ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘অপরিচিত’। আপনি এবং ঋত্বিক চক্রবর্তী রয়েছেন...
ইশা: এই ছবিটা নিয়ে আমি এক্সাইটেড, কারণ অনেকদিন পর মুক্তি পাচ্ছে। গতবছর শুটিং হয়েছিল। আর এটা সাইকোলজিকাল থ্রিলার। বাঙালি দর্শকের রক্তে থ্রিলার। এই জনারটা সবাই পছন্দ করে। সবাই দেখে। ঋত্বিকদা, অনির্বাণদার (চক্রবর্তী) সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। দারুণ অভিজ্ঞতা। সব মিলিয়ে অন্যরকম টিম, অন্যরকম গল্প, লন্ডনে শুটিং, ‘এসকে’-র সঙ্গে আমার দ্বিতীয় ছবি।
ছবিতে আপনার চরিত্রটা এক রহস্যময়ী নারীর। যার আবির্ভাবে গল্প অন্য মোড় নেয়...
মহিলারা সাধারণত একটু রহস্যময়ী হয়। আর ইশা? আপনি কী বলবেন নিজের সম্পর্কে?
ইশা: আমার মধ্যেও রহস্য আছে (হাসি)...।
ইশা কি অপরিচিত মানুষকে ট্রাস্ট করতে পারেন? কোনও ক্রাইসিসে পড়লে কাকে চোখ বন্ধ করে ট্রাস্ট করবেন?
ইশা: না, আমি দুম করে কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না। এটা হয়তো আমার একটু সমস্যাই বলতে পার। আর পাঁচজন যতটা সময় নেয় নতুন মানুষকে বিশ্বাস করতে, আমার তারচেয়ে বেশি সময় লাগে। এমনকী বন্ধু তৈরি করার ক্ষেত্রেও তাই। সবাই আমাকে খুব খেপায় কারণ এই ট্রাস্ট ইস্যুর জন্যই আমি বাড়িতে হাউস হেল্প রাখতে পারিনি। বাড়ির চাবিটা আমি কারও কাছে রেখে যেতে পারবই না।
ঋত্বিক চক্রবর্তীর সঙ্গে ‘বুড়ো সাধু’, ‘গোরা’ করেছেন। এই ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
ইশা: ঋত্বিকদা ক্যামেরার সামনে কিছু একটা করে, বোঝা যাচ্ছে করছে, কিন্তু কীভাবে করছে বোঝা যায় না। দারুণ লাগে এই ব্যাপারটা।
২০২৫ সালে নিজের কিছু বদলাতে চান?
ইশা: আমার কোনও রেজোলিউশন নেই। যেহেতু আমি ফলো করতে পারি না। তবে কোভিডের পর থেকেই খুব সহজে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি, রেগে যাচ্ছি, রিঅ্যাক্ট করে ফেলছি। ইচ্ছে আছে সেটাকে একটু কন্ট্রোলে আনার। আমি আসলে শান্তি চাই, পজিটিভিটি চাই।
নতুন বছরে প্রেম নিয়ে স্বীকারোক্তি, সিদ্ধান্ত?
ইশা: এ বাবা, তুমি তো আমাকে নিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করে ফেলতে চাইছ, যা দেখছি (হাসি)। দেখো, বলার মতো কিছু থাকলে তোমরা সবার আগে জানতে পারবে।
২০২৪ কী শেখাল?
ইশা: শেখা তো গোটা জীবন ধরে। যে জীবন নিয়ে কথা বলতে পারি সেটা আমার কেরিয়ারের
পরিসর নিয়ে। যে জীবনটা নিয়ে কথা বলতে পারা যায় না, সেটা পারব না। তবে হ্যঁা, অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে ধৈর্য বেড়েছে। মানুষ চিনছি। যাদের আমি ভাবতাম পরিচিত। তারা হঠাৎ করেই অপরিচিত হয়ে উঠল। এটা আসলে পজিটিভ ব্যাপার। তুমি হয়তো চোখ বন্ধ করে একটা মানুষকে বিশ্বাস করছ, কিছুদিন পর দেখলে আসলে এই মানুষটাকে বিশ্বাস করা যায় না। আমার ট্রাস্ট ইস্যু এমনি এমনি হয়নি। প্রথম প্রথম মনে হত, আমি কী বা এমন করেছি। পরে বুঝেছি আমি কিছু করিনি, সমস্যাটা তাদের। এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। যে আমাকে গুরুত্ব দেয় না, তাকে আমিও গুরুত্ব দিতে রাজি নই।
এমন উপলব্ধি আমাদের সকলেরই হয় কখনও না কখনও...
ইশা: হ্যাঁ, আর কী ঘটল ২০২৪-এ। উমম.. ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ কম হচ্ছে, হলেও সবসময় খুব ভালো হচ্ছে তাও নয়। তো কোথাও গিয়ে নিজের স্ট্যান্ডটা নিতে শিখেছি এই বছর। কারণ আমাদের এখানে ফিমেল অ্যাক্টররা আন্ডারপেড। সবার আসলে তখনই বাজেট ইস্যুটা মনে পড়ে যায়। মহিলা অভিনেতাদের টাকা দেওয়ার সময় বলা হয়, বাজেট নেই। তাই এই বছর থেকে আমি যেটা করেছি, আমি একটা স্ট্যান্ডার্ড সেট করেছি, তার কমে কাজ করব না, ঠিক করেছি। আমরা সবাই এইটুকু ডিজার্ভ করি বলে আমার মনে হয়। এই ইন্ডাস্ট্রির মহিলারা কত টাকা পাই, মোটামুটি সবাই জানে। সেটা খুব বেশি, চোখ কপালে তোলার মতো নয়। ছবির একটা বাজেট থাকে, সেখানে আমার মনে হয়, ফিমেল লিড এটা পেতেই পারে। তো সেখানে থেকে একটা স্ট্যান্ড পয়েন্ট তৈরি করা জরুরি বলে আমার মনে হয়েছে।