সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ঔরঙ্গজেবের বাসভবন 'মুবারক মঞ্জিল'। ১৭ শতকের ঐতিহাসিক স্থাপত্যকে মাস তিনেক আগে সংরক্ষণযোগ্য স্থাপত্যের তালিকাভুক্ত করেছিল উত্তরপ্রদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ। এর পরই দেখা গেল ঐতিহাসিক এই ভবনকে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত করা হয়েছে। এই ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন দেশের ঐতিহাসিকরা। ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ভারতের ইতিহাস গবেষক স্কটিশ ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিম্পল।
জানা গিয়েছে, প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের তরফে এই ভবনটিকে সংরক্ষণযোগ্য স্থাপত্যের তালিকাভুক্ত করার পর দিনকয়েক আগে ভবনটি ঘুরে দেখে যান সরকারি আধিকারিকরা। এরপরই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ভবনটি। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভবনটি ভেঙেছেন এক নির্মাণ ব্যবসায়ী। শতাধিক গাড়িতে ভবনের সব ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলা হয়। স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী, ওই ভবনের ৭০ শতাংশ ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও কোনও কাজ হয়নি। এদিকে ঘটনা প্রসঙ্গে আগ্রার জেলাশাসক অরবিন্দ মাল্লাপ্পা বাঙ্গারি জানান, "এই ঘটনার খবর পেয়েছি। ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ ও রাজস্ব বিভাগ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এসডিএমকে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপাতত ওই ভবনে কাউকে হস্তক্ষেপ করতে দেওয়া হবে না।"
এই ঘটনায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ভারতের ইতিহাস নিয়ে গবেষণাকারী স্কটিশ ঐতিহাসিক উইলিয়াম ডালরিম্পল। তিনি বলেন, 'এই ঘটনা ইতিহাসের প্রতি চরম অবহেলা। এই কারণেই সমৃদ্ধ দেশ হওয়া সত্ত্বেও ভারতে বিদেশি পর্যটকরা আসেন না। আগ্রার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ভবনের একটি কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ধ্বংস হয়ে গেল। আপনারা ঐতিহাসিক স্থানগুলিকে অবহেলা করবেন। উন্নয়নকারীদের স্থাপত্য ধ্বংসের অনুমতি দেবেন, তারপর বলবেন দুবাই, সিঙ্গাপুরের তুলনায় আমাদের দেশে পর্যটক কম আসে।'
উল্লেখ্য, ১৮৭১ সালের এক ঐতিহাসিক রিপোর্ট অনুযায়ী, সমুদ্রগড়ের যুদ্ধ জয়ের পর এই ভবন নির্মাণ করেন ঔরঙ্গজেব। যদিও, ঐতিহাসিক রাজকিশোর রাজের মতে, ওই যুদ্ধে জিতে দারাশিকোর ভবনটিকেই ‘মুবারক মঞ্জিল’ নাম দেন ঔরঙ্গজেব। এই ভবনে বাস করেছেন শাহজহান, সুজা এবং ঔরঙ্গজেব। লাল বেলেপাথরে তৈরি বাড়িটি ব্রিটিশ আমলে পুনর্নির্মাণ করে সরকারি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯০২ সাল থেকে বাড়িটি ‘তারা নিবাস’ নামে পরিচিত হয়। ব্রিটিশ ও মুগল আমলের স্থাপত্যরীতির অসামান্য নিদর্শন ছিল এই মুবারক মঞ্জিল।