সন্দীপ্তা ভঞ্জ: ভৌগোলিক সীমানা, কাঁটাতার পেরিয়ে, ভাষা নির্বিশেষে সিনেমাই এই ধরাধামকে একসূত্রে গাঁথতে পারে, বুধবারই 'বসুধৈব কুটুম্বকম'-এর মন্ত্র শোনা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। আর বৃহস্পতিবার নন্দন চত্বরে তার হাতেগরম প্রমাণ! সুদূর আমেরিকা থেকে আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে শে পল স্যাভেজ। পরদেশিবাবু তাঁর বাঙালি বউয়ের হাত ধরে পৌঁছে গিয়েছিলেন সিনেপ্রেমীদের পীঠস্থানে।
আদতে আমেরিকার বাসিন্দা শে পল স্যাভেজ। ভাষা-সংস্কৃতি আলাদা হলেও বাংলা ছবির অনুরাগী তিনি। আদ্যোন্ত সিনেপ্রেমী হিসেবে সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক থেকে মৃণাল সেন, বাংলার সিনেস্বর্ণযুগের ত্রয়ীর ছবি দেখে ফেলেছেন। এমনকী বর্তমান প্রজন্মের টলিউড সুপারস্টার দেবের 'পাগলু ডান্স'ও তাঁর ঠোটস্থ। স্ত্রী সংযুক্তা দাসের সঙ্গে ২০১৬ সালেই আলাপ এক কবিতা প্রতিযোগীতার মাধ্যমে। বন্ধুত্ব, প্রেম থেকে পরিণয়। সিনেসংস্কৃতির প্রতি অনুরাগই তাঁদের একসূত্রে গেঁথে দিয়েছে, জানালেন পেশায় দোভাষী সংযুক্তা। স্ত্রীয়ের কথায়, "স্বামী মানিকবাবু থেকে উত্তম কুমার সকলকেই চেনেন। আদতে একজন 'সিনেমাখোর' মানুষ বলতে যা বোঝায়।" একসঙ্গে শুধু বাংলা নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সিনেমাও তাঁরা দেখেন। সবথেকে চমকপ্রদ বিষয়, সংযুক্তা এবংশে পল স্যাভেজের আট মাস বয়সের কন্যাসন্তান পর্যন্ত দেবের 'পাগলু ডান্সের' ছন্দে এখনই হাত-পা ছোড়ে। তাঁদের সংসারে বাংলা সিনেমা যে আষ্টেপৃষ্টে, সেটা তাঁদের কথাতেই বোঝা গেল।
'সিনেমার টানে' (ছবি- ব্রতীন কুণ্ডু)
বেলা দুপুরে রবীন্দ্র সদনের সামনে গাছতলার ছায়ার একমনে খুদে মেয়েকে বুকে আঁকড়ে কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের থিং সং গুনগুনিয়ে গাইছিলেন শে পল স্যাভেজ। মুখে একগাল হাসি। পরদেশিবাবুকে দেখে আশেপাশে অনেকেই মুগ্ধ হয়ে দেখেছেন। কথা বলতেই ইংরেজিতে জানালেন, "উত্তম কুমারের ছবি আমি দেখেছি।" পাশ থেকে স্ত্রী সংযুক্তা বললেন, "স্বামী বর্তমান প্রজন্মের বাংলা সিনেমাও দেখেন।" আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব যেন বরাবরই আক্ষরিক অর্থেই 'বিবিধের মাঝে মিলন মহান'। এবারও পয়লা দিনে তার ঝলক মিলল।
একরত্তি মেয়ের সঙ্গে পল (ছবি- ব্রতীন কুণ্ডু)
কথাতেই আছে, ভাষার বেড়াজালের উর্ধ্বে সিনেমা। ভাষা নির্বিশেষে ভালো সিনেমা উদযাপন করা যায়, একথা সর্বৈব সত্য। আর চলচ্চিত্র যে একটা আবেগ, নির্বাক যুগেই পরিচালকরা তা বুঝিয়ে গিয়েছেন। আমেরিকাবাসী পলের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। সেই আবেগের টানেই সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটকের সিনেমা থেকে দেবের ছবি অবধি তাঁর অন্দরমহলে চলে।