'দেরি হয়ে গেছে' মুক্তির প্রাক্কালে বন্ধু অঞ্জন দত্তর সঙ্গে সমীকরণ নিয়ে অকপট মমতাশঙ্কর। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
অঞ্জন দত্ত এবং আপনি একসঙ্গে অনেকগুলো ছবি করেছেন, প্রায় ১৮টা। এই ছবিটাতে এমন কী আলাদা পাবে দর্শক?
- এই ছবিতে অনেকগুলো শেডস আছে। প্রথমত, ছবিটা কোথা থেকে কোথায় যাবে সেটা একটা সাংঘাতিক। ব্যাপারটা শুনেই আমি বলেছি যে আমি করবই। আমি অঞ্জনের চরিত্রটাকে চিনতে পেরেছি। প্রায় চল্লিশ বছর পরে দেখা। ও আমাকে চিনতে পারেনি। তারপরে ও যখন আমাকে চিনতে পারে তখন একটা টান তৈরি হয়। বাকিটা বলব না। (হাসি)
১৯৮২ সালে প্রথম ‘গৃহযুদ্ধ’ বোধহয় একসঙ্গে?
- হ্যাঁ, ‘গৃহযুদ্ধ’।
এত বছরে বন্ধুত্বটা কতটা বেঁচে আছে দুজনের?
- ওটা অঞ্জনকে জিজ্ঞেস করলে ভালো হয় (হাসি)। অঞ্জনের ওপর রেগে থাকা যায় না। এরকম একটা মানুষ। ও হচ্ছে কাজের সময় কাজি আর কাজ ফুরলে পাজি। কাজের সময় ফোন করে পাগল করে দেবে। যদি ওর নিজের কোনও কাজে আমাকে দরকার হয়। তারপরে চেনে না, ব্যস। তারপরে ফোন করলে ফোন ধরবে না, বলবে, ‘না না তুমি কখন ফোন করেছ আমি জানি না’। হাজার রকম অজুহাত ওর হাতে আছে। আমি ওর ওপর রেগে থাকতেই পারি না (জোরে হাসি)।
এই ছবিটা সপ্তাশ্ব বসুর। একেবারে নতুন প্রজন্মের পরিচালক। নামটা খুব সহজ ‘দেরি হয়ে গেছে’। দেরি হয়ে গিয়েছে এইরকম সিচুয়েশনে আপনার জীবনে ভালো কিছু হয়েছে কখনও?
- ভালো মানে, বাপিদাকে (চন্দ্রোদয় ঘোষ) পাওয়া। সেটাই একটা পাওয়া আমার। মানে এই ছবির মতোই ব্যাপার। প্রথমে প্রচণ্ড ভালোবাসা, তারপর মাঝে হল ছাড়াছাড়ি গেলেম কে কোথায়? তারপরে আবার এইরকম। লাকিলি সেটাতে অতটা দেরি হয়নি বলেই আবার ফিরে পেয়েছি।
এই ছবিতে অঞ্জন দত্ত এবং আপনাকে পরস্পরের বিপরীতে অনেকদিন পরে পাবে দর্শক। কতটা আশাবাদী?
- ভালো তো লাগা উচিত সবার। কারণ থিমটাই তো এরকম যে ভালোলাগার। কারণ একটা সাসপেন্স, একটা থ্রিলারের এলিমেন্টও আছে। প্রেমের বিষয়ও আছে আবার ওই দিকটাও। আমার মনে হয় সেটা ভালো ওয়ার্ক আউট করা উচিত। আমি এখনও ছবিটা দেখিনি। আর আমার এইটা সবচেয়ে ভয় লাগে। আমার প্রথম হয় শুটিংয়ের ভয়। তারপরে হয় যেদিন ডাবিং হবে, কী দেখব স্ক্রিনে, সেটার একটা ভয়। এখন হচ্ছে রিলিজের ভয়। তো প্রতিটা পথ আমার এত ভয়ে ভয়ে কাটে! কিন্তু যেটা হয়, অঞ্জনের সঙ্গে ছবি করার আলাদা একটা মজা আছে। এতগুলো ছবি হয়ে গিয়ে আমাদের একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গিয়েছে। আমি জানি ও কীভাবে রিঅ্যাক্ট করবে, ও জানে আমি কীভাবে রিঅ্যাক্ট করব। এটা খুব ভালো লাগে। যেটা সবসময় সবার সঙ্গে হয় না। আর অভিনেতা হিসাবে তো কিছু বলার নেই অঞ্জনকে। অসাধারণ। এই ছবিতে ওকে এত ভালো লেগেছে!
ইদানীং কালে বিভিন্ন সময়ে আপনার মন্তব্য ঘিরে প্রচুর তোলপাড় হয়েছে। কখনও মনে হয় যে, না বললেই হত?
- না, একদম মনে হয় না। আমি জানি আমি বলে কিছু করতে পারব না। যাদের ওইরকম মাইন্ডসেট, তাদের আমি পাল্টাতে পারব না। আমার কথা হচ্ছে, যে আমি যেটাতে বিশ্বাস করি। যেরকম ডিরেক্টররা, তাঁরা একটা বিশ্বাস থেকে ছবি করেন। মৃণালদা, সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক মানে আমি যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি। তাঁদের জীবনে একটা বিশ্বাস আছে, সেইটা থেকে তাঁরা ছবি করেছেন। আমার যেটা বিশ্বাস, আমি সেইটা নিয়ে কথা বলি। সেটা যে কোনও জিনিস হোক। আমি বললে বরং ভালো হবে কিন্তু ক্ষতি হবে না।
স্যানিটারি ন্যাপকিন, শাড়ির আঁচল প্রসঙ্গ এবং পাবলিক প্লেসে চুমু, এই তিনটি বিষয়ে আপনার মন্তব্য নিয়ে সাংঘাতিক তোলপাড় হয়েছিল। কী বলবেন?
- ভালো দিকও ছিল। প্রচুর সাপোর্টও এসেছিল। এখনও কারও সঙ্গে দেখা হলে বলে, আপনার বক্তব্যটা ভীষণ ঠিক। বলতে চাইছি দুটো দিকই রয়েছে। আমার কথা হচ্ছে যদি কারও আমার বক্তব্য ঠিক না লাগে, সেটা বলার একটা ধরন আছে। যে মমদি বা মমতাশঙ্কর আপনি যে কথাটা বলেছেন আমি তার সঙ্গে মিলতে পারলাম না। আমার এইটা মনে হচ্ছে। এইটা একরকম আলোচনা। আর একটা হচ্ছে একদম খোলা ভাষায় গালাগালি করা। এটা হচ্ছে তারা নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে, নিজেদের শিক্ষাকে ছোট করছে।
অনেকেই প্রাচীনপন্থী বলেছেন।
- বলুক, আমার কিছু যায় আসে না।
‘প্রজাপতি টু’-তে আছেন তো?
- না না, আমি নেই। আমার আসবে অন্য ছবি, ‘রেখা’। নামভূমিকায় রয়েছি। ছবিতে ঋতুও (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) আছে।
